জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় পাসের আগেই এক সহকারী শিক্ষক (ধর্ম) পদে ২৮ বছর ধরে চাকরি করে আসছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। একই বিদ্যালয়ে উম্মে কুলছুম নামে আরেকজন সহকারী শিক্ষক (জীববিজ্ঞান) পদে নিয়োগ নিয়ে ভৌতবিজ্ঞান পদে এমপিওভূক্ত হয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। তিনি ব্যাচেলর অফ এডুকেশনের (বিএড) জাল সনদ দিয়ে স্কেলভূক্ত হয়েছেন। আবার নৈশ্য প্রহরী অষ্টম শ্রেণি পাশের জাল সনদে এমপিওভূক্ত হয়ে চাকরি করছেন।
এমন ঘটনা কালাই পৌরশহরের আঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটেছে। মোজাহেদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি এসবের প্রতিকার চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কালাই পৌরশহরের আঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) পদে কর্মরত আছেন মোস্তফা কামাল। তিনি ১৯৯৮ সালে একই উপজেলার হাতিয়র কামিল মাদরাসা থেকে ফাজিল পরীক্ষা দেন। ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে একই বছরের ১ নভেম্বর। অথচ তিনি ওই বছরের ৮ জুলাই সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। অবৈধ্যভাবে নিয়োগ নিয়ে তিনি ২০০১ সালে এমপিওভূক্ত হয়ে আজও সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন।
সহকারী শিক্ষক উম্মে কুলছুম আক্তার ২০০২ সালে সহকারি শিক্ষক (জীববিজ্ঞান) পদে নিয়োপ্রাপ্ত হন। এরপর ২০২১ সালে এমপিওভূক্তির জন্য অনলাইনে ভৌতবিজ্ঞান পদে আবেদন করেন। জীববিজ্ঞান পদ থেকে ভৌতবিজ্ঞান পদে আসার জন্য কোনো অনুমোদন নেননি। এছাড়া তিনি বেসরকারি একটি ইউনিভাসির্টির নামে বিএড পাসের জাল সনদ সংগ্রহ করে বিএড স্কেলভূক্ত হয়ে চাকরি করে আসছেন। তারা দুইজন সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। একই গ্রামের বাসিন্দা বলে প্রভাব খাটিয়ে এসব অনিয়ম করে আসছেন।
অন্যদিকে নৈশ্য প্রহরী পদে চাকরি করছেন একই গ্রামের বাসিন্দা আফজাল হোসেন। কালাই পৌরশহরের থুপসাড়া সেলিমিয়া দাখিল মাদরাসার নামে অষ্টম শ্রেণী পাসের জাল সনদ প্রস্তুত করে ১৯৯৯ সালে ১৫ নভেম্বর নৈশ্য প্রহরী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০২১ সালে তিনিও এমপিওভূক্ত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধীক শিক্ষক ও কর্মচারী জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়ের পরিবেশ একেবারে ধ্বংসের দারপ্রান্তে পৌছে গেছে। তারা এই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় বাহিরের শিক্ষকদের তুচ্ছ-তাচ্ছুল্য মনে করেন। তাদের কথার প্রতিবাদ করলে মারপিট করে বিদ্যালয়ের পিছনে পুকুরের পানিতে নেমে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এসবের প্রতিকার চান অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মস্তফা খান বলেন, ‘ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের মাত্র ১৫ দিন আগে আমি এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। তখন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ অন্যরা আমার নিকট থেকে এসব কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। আমার এসব জানা ছিল না। স্থানীয় একজন ব্যাক্তি তাদের এসব বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে তাদের কাগজপত্র চেয়ে আমাকে চিঠি দিয়েছেন।’
অভিযুক্ত শিক্ষক মোস্তফা কামালের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় শুনে কথা না বলেই কেটে দেন।
অভিযুক্ত জীববিজ্ঞানের শিক্ষক উম্মে কুলছুম বলেন, ‘মোবাইলে সব কথা বলা যাবে না।’
নৈশ্য প্রহরী আফজাল হোসেনের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অভিযোগকারী মোজাহেদ হোসেন বলেন, ‘ধর্মীয় শিক্ষক ও তার স্ত্রী এবং নৈশ্য প্রহরীর চাকরির বিষয়ে আমি আগে থেকেই জানতাম। এতদিন কাগজপত্র হাতে না পাওয়ায় অভিযোগ করতে পারিনি। তারা অবৈধ্যভাবে নিয়োগ নিয়ে সরকারের অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। আমি বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছি।’
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর তাদের সব কাগজপত্র চেয়ে প্রধান শিক্ষককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তদন্তে এসব অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের চাকরি থাকবে না।’
কেকে/ এমএ