আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) নিয়ে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দীর্ঘদিন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের পর এবার শুরু হয়েছে গণভোট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। এ আলোচনায় এবার সরাসরি দায় চাপাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী। যা অতিসম্প্রতি দলটির নেতাদের বক্তব্যে আরো স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে। সবশেষ গতকাল এক অনুষ্ঠানে বিএনপির দিকে সরাসরি অভিযোগের তীর ছুড়লেন জামায়াত নেতা ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পরও বিএনপি হঠাৎ করেই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তার মতে, সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর বিএনপির এই অবস্থান পরিবর্তন রাজনীতিতে নতুন করে সংশয় ও ধোঁয়াশা তৈরি করছে।
গতকাল শুক্রবার কুমিল্লার একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। ডা. তাহের জানান, সংস্কারের রূপরেখা নিয়ে জামায়াত ও বিএনপি উভয়ই একমত ছিল। কিন্তু এখন বিএনপি বলছে, সেখানে নাকি একটি নতুন পৃষ্ঠা যুক্ত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে তিনি মনে করেন।
গণভোটের আয়োজন নিয়ে দুই দলের মধ্যে মতপার্থক্যের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগেই সংস্কারের প্রশ্নে গণভোট চেয়েছিলাম এবং বিএনপি তাতে সম্মতিও দিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের কথা বলছে, যা আমের রসের সঙ্গে তালের রস মেলানোর মতো’।
বিএনপির এমন অবস্থানের সমালোচনা করে জামায়াতের এই নেতা আরো বলেন, দলটি এখন সরকারের সিদ্ধান্ত, আরপিও ও গণভোটের ধারণার বিরোধিতা করছে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ডা. তাহের বলেন, ‘যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে যারা ষড়যন্ত্র করছে এবং ভারতে বসে আছে, তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার সুযোগ পাবে। এতে বিএনপির কী লাভ হবে, তা আমার জানা নেই’।
এদিকে জামায়াত নেতার এমন বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে শুরু হয়েছে সমালোচনা। অনেকেই বলছেন, নিজেদের দোষ ঢাকতে বিএনপির ওপর দায় চাপাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ করে দলটির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বক্তব্যে এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে।
এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেখা গেল যখন এটা (সুপারিশ) তারা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) উপস্থাপন করল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে, তখন সেটায় অনেক পার্থক্য। বিশেষ করে তারা যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলো যেন সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, তেমনটা বলেছিলেন। এ ব্যাপারে তারা আস্থা-বিশ্বাস রেখেছিলেন। কিন্তু সেই আস্থা, বিশ্বাসের সঙ্গে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যেটা তারা তাদের কাছ থেকে আশা করেননি।
বিএনপি সংস্কারের পক্ষের দল বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, মতভেদ থাকলেও তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। যেসব প্রস্তাব নিয়ে ভিন্নমত ছিল, সেখানে তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে তারা সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন। জনগণ ভোট না দিলে বাস্তবায়ন করবেন না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের মতভেদ থাকলেও মূল যে সনদ, সেই সনদে আমরা স্বাক্ষর করেছিলাম। এটাই নিয়ম যে, আমরা যদি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় যাই, মানুষ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে আমরা সেই বিষয়গুলো আবার সামনে নিয়ে আসব। সেটিকে আমরা পার্লামেন্টে পাস করে দেশের যে পরিবর্তন, সেই পরিবর্তনটা নিয়ে আসব।’
বিএনপিকে সংস্কারের বিপক্ষের দল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছে সংস্কারের মধ্যে দিয়ে। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে বহুদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, গণভোট নির্বাচনের আগে করার কোনো সুযোগ এখন আর নেই। গণভোট নির্বাচনের দিনই হবে, সে কথা তারা পরিষ্কার করে বলেছেন। সেখানে দুটো ব্যালট থাকবে- একটি গণভোটের জন্য, আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য।
উল্লেখ্য, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বক্তব্যের পরই ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিএনপিকে নিয়ে মন্তব্য করেন।
কেকে/এআর