রোববার, ২ নভেম্বর ২০২৫,
১৮ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ২ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: জামায়াতের সুর এনসিপির কণ্ঠে      সরকারকে আর ছাড় দেবে না বিএনপি      সরকারের টাকায় নিজস্ব বাহিনী গড়ছেন আসিফ      আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম      আজকের আলোচিত ছয় সংবাদ      গাজা থেকে ফেরত পাওয়া তিন মরদেহ জিম্মিদের নয় : ইসরায়েল      জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে বিএনপি আমাদের বিরোধিতা করেছিল      
খোলাকাগজ স্পেশাল
নিয়োগকর্তাদের দিকেই ঝুঁকল অন্তর্বর্তী সরকার
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:১৪ এএম আপডেট: ৩১.১০.২০২৫ ১১:০৯ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নিজেদের (উপদেষ্টা পরিষদ) নিয়োগকর্তা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই ভাষণে তিনি আরো বলেছিলেন, যখন এই শিক্ষার্থীরা বলবেন, তখন তারা চলে যাবে। তারপর বহু পানি গড়িয়েছে ব্রহ্মপুত্রে, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। তবে সরকারপ্রধান হিসেবে দলমত নির্বিশেষে সবার প্রতিই নিরপেক্ষ থাকার কথা। কিন্তু দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ক্রান্তিলগ্নে সেই নিয়োগকর্তাদের দিকেই ঝুঁকলেন প্রধান উপদেষ্টা ও তার পরিষদ। যার সর্বশেষ ও বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ। যেখানে ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপির চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে অন্য দলের ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে। 

গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সুপারিশের কিছু ধারা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তবে কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইতিবাচক। 
বিশ্লেষকরা বলছেন, কমিশন যেভাবে তাদের সুপারিশ দিয়েছে, তা একদিকে যেমন কমিশনের এত দিনের কাজকে অর্থহীন বলে প্রমাণ করার ঝুঁকি তৈরি করেছে, অপরদিকে দেশকে ঠেলে দিতে পারে রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে। 

ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সংবিধানের সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে গণভোটে রাজনৈতিক দলের ভিন্নমতের বিষয়ে উল্লেখ থাকবে না। ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, তার ওপরই গণভোট হবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেভাবেই তা বাস্তবায়িত হবে। 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপির স্বাক্ষর শেষ মুহূর্তে নিশ্চিত করতে তাদের দেওয়া শর্ত মেনেই এমন প্রস্তাব করেছেন তারা। রাজনৈতিক দর-কষাকষির জন্য এমন শর্ত দেওয়াটা চলতে পারে, কিন্তু সেটাকে সনদ স্বাক্ষরের অলঙ্ঘনীয় শর্ত বানিয়ে ফেলাটাকে রাজনৈতিক অপরিপক্বতা বলে মনে হয়। বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) বাদ দিয়ে গণভোটের প্রস্তাবকেও অর্থহীন মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের প্রশ্ন, ভিন্নমত না রাখলে, তবে কেন মাসের পর মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অতি দীর্ঘ আলোচনা করা হলো? 

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘কমিশনের সিদ্ধান্ত দেখে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে সনদ স্বাক্ষরের দিন স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকা এনসিপির স্বাক্ষর শেষ মুহূর্তে নিশ্চিত করতে তাদের দেওয়া শর্ত মেনেই এমন প্রস্তাব করেছেন তারা। আর সেটা গ্রহণ করে ঐকমত্য কমিশন তার বিবেচনাবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’

বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তৈরি হয়েছিল সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মোটা দাগে মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করতে। দীর্ঘ সময় ধরে কাজটি তারা দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে করেছে। কিন্তু গণভোট প্রশ্নে অবস্থান শেষ মুহূর্তে এসে কমিশনের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। 
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশ একপেশে এবং তা জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে প্রয়োজনে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মির্জা ফখরুল। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অযৌক্তিক, অবিবেচনাপ্রসূত বলেও সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে জুলাই সনদের পূর্ণ প্রতিফলন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যে সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, কমিশনের দেওয়া সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে তার হুবহু প্রতিফলন নেই। তিনি বলেন, ‘এতদিন আমরা মনে করতাম, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করছে। রেফারিকে আমরা কখনো গোল দিতে দেখিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং আরো দু-তিনটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ। আমি বিপক্ষেই খেলছিলাম মনে হয়। সেই হিসেবে জাতির পক্ষের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি।’ 

ক্ষুব্ধ বিএনপি : 

বিএনপি ও মিত্ররা মনে করছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাওয়া প্রতিফলিত হয়েছে। বিএনপির অভিমত, দলটি সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) হওয়া সত্ত্বেও কমিশনের সুপারিশে তাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ করে, বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত) সনদে লিপিবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা রাখা হয়নি। এতে বিএনপি বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে আলোচনায় নেতারা এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। তিনি সভায় সভাপতিত্ব করেন। 

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, আগামী সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন (৯ মাস) ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করবে। গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো এই সময়ের মধ্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। তবে পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। এ বিষয়গুলো সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বিএনপি এখন মনে করছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং আরো দু-একটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ। এসব পদক্ষেপকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন সঠিক সময়ে না করার ‘অপচেষ্টা’ হিসেবে দেখছে দলটি।

বিশেষ পক্ষকে খুশি করতে কমিশনের সুপারিশমালা : গণসংহতি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ সনদের বাস্তবায়নকেই অনিশ্চয়তার মুখে ফেলছে বলে মনে করে গণসংহতি আন্দোলন। গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান (রুবেল) বলেন, ঐকমত্য কমিশনের কিছু সুপারিশ কমিশনের বৈঠকের আলোচনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং কিছু সুপারিশ গণতান্ত্রিক রীতি-পদ্ধতির অনুসরণ করে না। এই সুপারিশমালা বিভ্রান্তি তৈরি করছে, যেটা জুলাই সনদের বাস্তবায়নের সম্ভাবনাকে আশঙ্কার মুখে ফেলছে। শুধু গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন কিংবা ভিন্নমতের মীমাংসার বিষয়ে কোনো ঐকমত্য তৈরি হয়নি।

গণসংহতি আন্দোলনের দুই নেতা বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতিতে প্রধানতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল জনগণের অনুমোদন গ্রহণ। জনগণের অভিপ্রায়ের প্রকাশ হিসেবে আগামী সংসদকে সংবিধান সংস্কারের ক্ষমতা প্রদানের জন্য এবং আগামী নির্বাচনকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন হিসেবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা বলেছিলাম শুরু থেকেই। কিন্তু তা কমিশন যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তাব হিসেবে নিয়ে এসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করেনি। 

দুই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ওপর আস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালা দেখে মনে হচ্ছে, কমিশন সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। কোনো বিশেষ পক্ষকে খুশি করতে জাতীয় ঐকমত্যকে হুমকির মুখে ফেলছে বলেও জনগণের ভেতরে ধারণা তৈরি হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতি আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও জাতীয় স্বার্থের জন্য উদ্বেগজনক।

কেক/এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  নিয়োগকর্তা   অন্তর্বর্তী সরকার  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানালেন উইলিয়ামসন
তারাগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধ, নিহত ১
যুদ্ধবিরতি হলেও গাজায় ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল
জামায়াতের সুর এনসিপির কণ্ঠে
গাকৃবি নেতৃত্বে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা

সর্বাধিক পঠিত

সরকারের টাকায় নিজস্ব বাহিনী গড়ছেন আসিফ
বাঞ্ছারামপুরে বেড়েছে ছিঁচকে চোরের উৎপাত, আতঙ্কে শহরবাসী
আঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ তিনজনের নিয়োগ জালিয়াতি ফাঁস
তারেক রহমানের নেতৃত্বের পুনরুত্থান ও প্রত্যাবর্তন
ফটিকছড়িতে বন্দুক উদ্ধার করে প্রশংসায় ভাসছেন গ্রাম পুলিশ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close