মাল্টা চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের ডলুছড়া গ্রামের কৃষক মো. আতর আলী। তিনি ২০২২ সালে কৃষি বিভাগ থেকে ২০০টি মাল্টার চারা ও জৈব সার প্রণোদনা পেয়ে ডলুছড়া পাহাড়ী টিলায় পরীক্ষামূলকভাবে মাল্টা চাষ শুরু করেন। চারা রোপণের দুই বছর পর প্রথমবার অর্ধশতাধিক গাছে ফলন আসার পর থেকে তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে লাভের স্বপ্ন বুনেন। সেই থেকেই শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়। তিন বছরের পরিশ্রমে এবার দ্বিতীয়বারের মতো তিনি মাল্টা বিক্রি করে লাভবান হন।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডলুছড়া পাহাড়ি এলাকায় ১৫ বিঘা জমিজুড়ে ৪০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফলের বাগানে ঝুলছে মালটাসহ বিভিন্ন জাতের ফল। মাল্টা ছাড়াও আতর আলীর বিশাল বাগানে রয়েছে, কফি এরাবিকা, কফি রোবাস্টা, কাজু বাদাম, লটকন, ক্যানসার প্রতিরোধ উদ্ভিদ, আনারস, লেবু, আম, কাঁঠাল, লিচু, বেল, পেয়ারা, জাম্বুরা, কাচা মরিচ, নাগা মরিচ, সুপারি, কলা, সাজনা, করলা, শসা, করলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল-ফসলের গাছ।
আতর আলী জানান, ২০২৪ সালে ৬০-৭০টি গাছে প্রথমবার ফলন আসলেও এবার তার বাগানে সব গাছেই ফল ধরেছে। প্রতিটি গাছে গড়ে ১৫-৩০টি করে মাল্টা এসেছে। গত বছর মাল্টা বিক্রি করে আয় করেছিলেন ১৫ হাজার টাকা। আর এ বছর মাল্টা বিক্রি করে আয় করেছেন অর্ধলক্ষ টাকা।
তিনি বলেন, ‘গত মৌসুমে মাল্টা বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকা আয় করলেও এ বছর আয় বেড়েছে ৩৫ হাজার টাকা। আগামী মৌসুমে তিনি কয়েক লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন।’
এসব ফসল বিক্রি করে তিনি শুধু নিজেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হননি, বরং আশপাশের কৃষকরাও এখন তার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, কৃষি সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে প্রকল্পের আওতায় আতর আলীকে শ্রেষ্ঠ কৃষক হিসেবে আতর আলীকে পুরস্কৃত করা হয়। ঢাকার খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। আনারস, লেবু ও শসা উৎপাদনের অন্য তিনি এ পুরস্কারটি পেয়েছেন। সিলেট কৃষি অধিদপ্তর থেকে পুরস্কারটি আতর আলী গ্রহণ করেন।
আতর আলী জানান, শ্রীমঙ্গল কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তায় তিনি উঁচু-নিচু টিলাভূমিতে মাল্টা চায় গুরু করেন। কৃষির পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩ নম্বর শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন দলনেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি জানান, তার মাল্টা বাগানের ছোট ছোট গাছের ফল দেখে অনেকের উৎসাহ বেড়েছে মাল্টার প্রতি। কেউ উদ্যোগ নিয়েছেন আগামীতে মাল্টা চাষে মনযোগ দিবেন।
স্থানীয়রা বলছেন, মাল্টা চাষ শুধু একটি পুষ্টিকর ফল নয়, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কৃষি বিভাগের পৃষ্টপোষকতা ও সরকারি প্রণোদনা পেলে মাল্টা হতে পারে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার একটি নতুন ক্ষেত্র।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মাল্টা দেখতে সবুজ হলেও খেতে অত্যন্ত সু-স্বাদু ও মিষ্টি। বারি-১ জাতের এই মাল্টার উৎপাদন বাড়ছে মৌলভীবাজার জেলায়। সম্ভাবনাময় এই ফসল চাষাবাদে তুলনামূলক খরচ কম থাকায় সহজে ফলন হয়। সে জন্য জুড়ী, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গলসহ পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন এখন মাল্টা চাষে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি টিলায় মাল্টার ভালো ফলন হয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি। এই অঞ্চলের মাল্টা স্থানীয় চাষিদের আয়ের নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাল্টা চাষে কৃষকদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ নিঃসন্দেহে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি শুধু কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করবে না, বরং দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
কেকে/এমএ