আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে মনোনয়নপ্রত্যাশীয়দের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিভাগভিত্তিক প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি।
জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্টদের ঐক্যের বার্তা দিচ্ছেন। যিনিই চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন পান না কেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে তার জন্য কাজ করতে হবে। এ ছাড়া প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য ও ত্যাগীদেরই মূল্যায়ন করা হবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলেছেন, সারা দেশে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে তারেক রহমান বিভিন্ন পন্থায় খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে এখনই তিনি দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করছেন না।
দলটির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে দুই শতাধিক আসনে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে। কয়েক দিনের মধ্যে এ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির নেতারা বলছেন, তারা প্রাথমিকভাবে দুই শতাধিক আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করছেন। বাকি আসনগুলোর মনোনয়ন নিয়েও কাজ চলছে। এর মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ও জোট শরিকদের আসনও রয়েছে।
এদিকে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা চান যোগ্য এবং ত্যাগীরা যেন এবার মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পান। কারণ গত ১৫ বছরে দলের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন বহু নেতাকর্মী। কিন্তু ৫ আগস্টের পর কিছু ভুঁইফোড় ব্যক্তি বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তারা নানাভাবে দলীয় পদপদবি বাগিয়ে নিয়েছেন। এখন দলীয় মনোনয়ন পেতে নানাভাবে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেন, দুর্দিনে দলীয় নেতাকর্মীর খোঁজ নেননি, ছিলেন নিষ্ক্রিয় সেই সুযোগসন্ধানীরা মনোনয়ন পেতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন জন ও সংস্থাকে ম্যানেজ করতে প্রচুর অর্থ ঢালছেন।
বিএনপির কর্মীরা বলছেন, সুযোগসন্ধানীরা কখনোই জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না। জনগণ দেখেছে, গত ১৫ বছরে কারা তাদের সঙ্গে ছিল। নির্বাচনে যে দল বিতর্কমুক্ত ও ত্যাগী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে, তাদের জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। জনগণ চায় ত্যাগীরাই হবেন জাতীয় সংসদে তাদের প্রতিনিধি।
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুঁইফোড় নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। তারা অর্থ ও পেশিশক্তির জোরে মাঠ দখলের চেষ্টা করছেন। দলের মধ্যে স্থানীয়ভাবে বিভাজনের চেষ্টা করে ফায়দা লুটছেন। স্থানীয় কিছু নেতাকে ম্যানেজ করে যোগ্য প্রার্থীকে কোণঠাসা করার পাঁয়তারা করছেন। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সচেতন থাকার আহ্বান তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। যাতে কোনোভাবেই হাইব্রিড, ফ্যাসিবাদের দোসর ও সুবিধাবাদী কেউ দলের মনোনয়ন না পায়। তা না হলে ত্যাগী নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়বে এবং তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দলের ওপর।
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এবার মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে জরিপ চালাচ্ছে। যাতে করে ত্যাগীরাই মূল্যায়িত হন। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থীদের জোর বিএনপির।
সে কারণে এখনই দলটি প্রার্থী চূড়ান্ত করছে না। সম্ভাব্য সবার সঙ্গেই কথা বলছে। কাউকেই সেভাবেই গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হচ্ছে না। তবে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সবাইকেই দলের প্রচারণার জন্য বলা হয়েছে। দল চায় ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণা। তার অংশ হিসেবেই সব সম্ভাব্য প্রার্থীকে এলাকায় কাজ করতে বলা হয়েছে। তবে চূড়ান্তভাবে ত্যাগী ও যোগ্য প্রার্থীই মনোনয়ন পাবেন।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গত সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ গুছিয়ে আনছে বিএনপি। এ প্রক্রিয়ায় প্রতি আসনে একাধিক প্রার্থী ঠিক করে রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সমগ্র বাংলাদেশে আসনভিত্তিক একাধিক যোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
এক আসনে একাধিক প্রার্থী বাছাই করে রাখলেও ঐক্যের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা একটিই মেসেজ দিতে চাই, যাতে আমাদের দলের ভেতরে ঐক্য থাকে, জাতির ভেতরে ঐক্য থাকে। জাতির মধ্যে ঐক্যটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। সেই ঐক্য বজায় রাখার জন্য কেউ যাতে বিভেদের পথে না যায়, সেই মেসেজটা আমরা দিতে চাই।’
বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠন করবে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে নিয়ে গঠন করা হবে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট।’
কেকে/এজে