বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫,
১৩ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: মাঠের নেতাকে চায় স্থানীয় বিএনপি      সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে ব্যবসায়ীদের      ত্যাগীদেরই চায় তৃণমূল      স্বর্ণের দামে বড় দরপতন, ভরি কত?      শোকজ নয়, তিন বিচারপতির কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে : সুপ্রিম কোর্ট      কী আছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়ায়      এল ক্লাসিকো জয়ের পরই বড় দুঃসংবাদ পেল রিয়াল মাদ্রিদ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে ব্যবসায়ীদের
আলতাফ হোসেন
প্রকাশ: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৩২ এএম আপডেট: ২৯.১০.২০২৫ ১২:৩৮ এএম
ছবি : খোলা কাগজ ই-পেপার

ছবি : খোলা কাগজ ই-পেপার

সরকার ও ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন রপ্তানিমুখী খাতের সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, শিল্প খাতের সংকট ও নতুন বিনিয়োগের অনিশ্চয়তাসহ নানা উদ্বেগ নিয়ে আলোচনার জন্য সরকারের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও তারা কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। 

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু যদি সময় না দেওয়া হয়, তাহলে আলোচনাই বা হবে কীভাবে? আমরা দায়িত্ব নেওয়ার চার মাস পার হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে বারবার সাক্ষাতের সময় চেয়েছি, আমাদের খাতের উদ্বেগগুলো জানানোর জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সময় দেওয়া হয়নি।’ 

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, ‘১০০ মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি স্টার লিংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট লেবেলের লোক এলেই তাকে সময় দেওয়া হয়, অথচ ৪০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করা শিল্পের প্রতিনিধিদের সময় দেওয়া হয় না। এর দায় শেষ পর্যন্ত তাকেই নিতে হবে। সময় না দিলে আমাদের উদ্বেগগুলো কীভাবে জানাব?’

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বিজিএমইএ আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকের সংজ্ঞা, ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিকের সংখ্যা ও দ্বৈত প্রভিডেন্ট ফান্ড—শ্রম আইনের তিনটি ধারার বিষয়ে আপত্তি তুলে ধরেন তিনি। 

বিজিএমইএ সভাপতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সদ্য অনুমোদিত ‘বাংলাদেশ শ্রম সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর কতিপয় বিধান, বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, দ্বৈত পেনশন স্কিম এবং শ্রমিক সংজ্ঞায়িত করার মতো বিষয়গুলো, দেশের বাস্তবতা ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ ধারাগুলো কার্যকর হলে শিল্পে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও উৎপাদন ব্যাহত হবে পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়াগ কমবে, রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত বাস্তবতা বিবর্জিত। কারণ মাত্র ২০ জন শ্রমিক দিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠন করা হলে কারখানাগুলোতে এমন ব্যক্তিরা ট্রেড ইউনিয়ন করবেন, যারা ওই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। এটি অন্তর্দ্বন্দ্ব ও শিল্পে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে ও উৎপাদন ব্যাহত করবে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমবে এবং উদ্যোক্তারা নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনায় নিরুৎসাহিত হবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘শিল্প, শ্রমিক ও অর্থনীতির বাস্তব চাহিদা বিবেচনায় এমন একটি নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে, যা দেশের শিল্প খাতের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা নষ্ট না করে বরং টেকসই উন্নয়নকে সহায়তা করবে।’

মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্প খাত নানা চ্যালেঞ্জের মুখে। শ্রম আইন সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা যেন বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আইন এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে এটি শিল্পের টেকসই বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের শিল্প খাতকে টিকে থাকতে হলে সরকারকে অবশ্যই একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য গ্যাস সংকটের দ্রুত সমাধান, কাস্টমস ও এনবিআর প্রক্রিয়ার সহজীকরণ, অবকাঠামো ও লজিস্টিক উন্নয়ন এবং স্বল্প ব্যয়ে অর্থায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথ মসৃণ করতে হলে সরকারকে সময়োপযোগী উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা অনুরোধ করছি, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা অন্তত তিন বছর পিছিয়ে দেওয়া হোক। তবে উচ্চ সুদ হার, পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি, গ্যাস-বিদুৎ সমস্যাসহ সব সমস্যার সমাধান করে করে প্রস্তুতি শেষ হলে আগামী বছরই গ্র্যাজুয়েশনে রাজি আমরা।

চট্রগ্রাম বন্দরের মাশুল ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি হচ্ছে দাবি করে মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘আমরা বলেছি, আগে কনটেইনার ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বাড়ানো হোক। আমরা উপকারটি আগে পাই, তারপরে চার্জ বাড়ানো যেতে পারে। একসঙ্গে না বাড়িয়ে ধারাবাহিকভাবে ১০ শতাংশ হারে বাড়ানো যেতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দর গত বছরে দুই হাজার কোটি টাকার মতো মুনাফা করেছে। সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান তো মুনাফায় আছে। তাহলে কেন চার্জ বাড়ানোর প্রয়োজন?’

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর সেবা ফি নেওয়া হয় ডলারে। ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ২৯ দশমিক ৮৯ টাকা। বর্তমানে তা ১২২ টাকার বেশি হওয়ায় গত ৪০ বছর ধরে টাকার অঙ্কে তা ৩০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের ব্যবসায়ীদের চেয়ে বিদেশিদের কথায় বেশি গুরুত্ব দেয় বলে অভিযোগ করেছেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সমস্যাগুলো সরকারকে জানাতে চেয়েও বারবার ব্যর্থ হয়েছি।’  

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর মুনাফায় রয়েছে। প্রতিবছর এ বন্দরে ভালো মুনাফা হচ্ছে। সর্বশেষ বছরে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে এ বন্দর। তারপরও সরকার বিভিন্ন পণ্য সেবার মাশুল একলাফে ৪১ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি ৫-১০ শতাংশ বাড়ানো যেত, কিন্তু একলাফে ৪১ শতাংশ বাড়ানো কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘বিদেশি কোনো পক্ষের কাছে বন্দর ছেড়ে দেওয়ায় পরিচালন ব্যয় যদি না কমে, তাহলে সেটি করায় আমাদের স্বার্থ কী? বিদেশি একটি পক্ষকে বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, এতে খরচ তো কমার কথা। উল্টো মাশুল বাড়ানো হচ্ছে। এটি তো হওয়ার কথা নয়।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত একবছরে নানা কারণে ২৫৮টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। তবে কিছু নতুন কারখানাও হয়েছে। 

বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের নুরুল কাদের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ এর অফিস সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান (বাবলু), সহসভাপতি রেজোয়ান সেলিম, সহসভাপতি (অর্থ) মিজানুর রহমান, সহসভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, বিজিএমইএ-এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যানরা।

এ ছাড়া বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের নেতাদের মধ্য থেকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ); বিকেএমইএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম; বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বাপি) সিইও মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

কেকে/এজে

আরও সংবাদ   বিষয়:  সরকারের সঙ্গে দূরত্ব   সরকার   ব্যবসায়ী  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মাঠের নেতাকে চায় স্থানীয় বিএনপি
রাজপথ দখলে বহিষ্কৃতদের ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ
সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে ব্যবসায়ীদের
ত্যাগীদেরই চায় তৃণমূল
উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয় কাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

সর্বাধিক পঠিত

ফরেস্টারদের কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতিকে স্বাগত জানাল বিএফএ
আগামী নির্বাচন সহজ হবে না : এমএ খালেক
ত্যাগীদেরই চায় তৃণমূল
মাল্টা চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাষি আতর আলী
ইসলামী আন্দোলনকে চাইলেও নিঃশেষ করা যায় না : রায়হান সিরাজী
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close