বাংলাদেশকে ঘিরে ফের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে বানচাল করতে মাথাচারা দিচ্ছে চিহ্নিত অপরাধী চক্র। এরই মধ্যে সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক ঢোকানো হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি, রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে একটি ট্রেনে অনুসন্ধান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি অস্ত্র ও বিস্ফোরক জব্দ করে। যা সংশ্লিষ্টদের চিন্তিত করছে।
গত রোববার রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। এদিন বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেড রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও বিমানবন্দর রেলওয়ে পুলিশের সহায়তায় এ অভিযান চালায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা বনলতা এক্সপ্রেসে এ অভিযান চালানো হয়।
সেনাবাহিনী জানায়, গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাচারের আশঙ্কায় অভিযানটি চালানো হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ট্রেনের তিনটি নির্দিষ্ট বগি তল্লাশি করে একটি বগি থেকে আটটি বিদেশি পিস্তল, ১৪টি ম্যাগাজিন, ২৬ রাউন্ড গুলি, ২ দশমিক ৩৮৭ কেজি গানপাউডার এবং ২ দশমিক ২২৮ কেজি প্লাস্টিক বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য কমলাপুর রেলওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রেন থেকে অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে, তা যথেষ্ট আতঙ্কের। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ভেতরে অস্ত্র ঠোকানো হচ্ছে। তারা আরো বলছেন, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ও তাদের দোসররা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল, নেতাকর্মীদের ছদ্মবেশে রাজধানীতে জড়ো করা- সবমিলিয়ে বড় নাশকতার পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। নভেম্বর-ডিসেম্বরে দলটি দেশের অভ্যন্তরে মরণ কামড় দিতে পারে।
কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ করেই কলকাতার নিউটাউন এলাকায় পলতাক আওয়ামী লীগ নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। সেখানে চা চক্রের নামে চলছে গোপন বৈঠক। এসব বৈঠকে দলটির হেভিওয়েট নেতারা নিয়মিতই উপস্থিত থাকছেন। জানা গেছে, দলটির সাধারণ সম্পাদক এই ‘চা চক্রের’ উদ্যোক্তা। আর এখান থেকেই সমস্ত পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যা বিভিন্ন মাধ্যমে দেশে থাকা নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছড়ানো হচ্ছে প্রচুর অর্থ।
সূত্র জানাচ্ছে, ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তার আগেই দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা দেশের অভ্যন্তরে দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি পেশাদার সন্ত্রসীদের সঙ্গেও যোগাযোগ তৈরি করেছে। তাদের মাধ্যমে দেশের ভেতরে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ ও নেতাকর্মীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তথ্য রয়েছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আরো অস্ত্রের চালান আসতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মাত্র একটি অস্ত্রের চালান জব্দ করতে পেরেছে নিরাপত্তা বাহিনী। তাও রাজধানীতে, যেগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রেনে করে আনা হয়েছিল। তারা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রেনটি আসছে মানে, এই অস্ত্র সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যা বড় ধরনের নিরাপত্তা ত্রুটি। হয়তো আরো অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাই অস্ত্র উদ্ধারে প্রয়োজন বিশেষ সমন্বিত অভিযান। সেই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় বিশেষ সতর্কতা জারি করা প্রয়োজন।
এদিনে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট শক্তি অপরাধী চক্রকে তাদের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়াসে রয়েছে। তাই দেশের গোয়েন্দা সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে অপরাধীদের ওপর বিশেষ নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে। এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে সরকারের পক্ষ থেকে ও উদ্যোগ নিতে হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত আইজিপি (অপরাধ ও অপস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরাজিত শক্তি নানাভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্ন করার অপচেষ্টা করছে। এ কাজে দেশের বাইরে থেকেও নানাভাবে ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে বলেও আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।’
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘কোনো ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসবিরোধী কাজ করলে কাউকেই রেহাই দেব না। আমার রেঞ্জের মধ্যে যদি কেউ এমন অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র চালায় তাহলে সবাইকে আইনের আওতায় আনব।’
কেকে/এআর