এসব অপকৌশল বাস্তবায়নে সক্রিয় হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা। দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে নিজ কর্মী-সমর্থকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে- এমন অডিও রেকর্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিনিয়ত। তবে এ বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ‘আত্মগোপনে থাকা পতিত ফ্যাসিস্টরা নতুন করে হুংকার দিচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করতে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের এসব অপকর্ম ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।’
সূত্র বলছে, আগামী নভেম্বর মাসকে ঘিরে ঘোট পাকাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রয়েছে ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৩ নভেম্বর কলঙ্কময় ও বেদনাবিধুর একটি দিন। এদিন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে কারাগারে হত্যা করা হয়। তা ছাড়া ১০ নভেম্বর ঐতিহাসিক শহীদ নূর হোসেন দিবস। দিনটি ঘিরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজধানীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের ঢাকা দখলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত লাখ লাখ নেতাকর্মী দিয়ে। নতুন গোপন কর্মসূচিও প্রকাশ করেছে তারা। শেখ হাসিনা সংগ্রাম পরিষদের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সামাজক যোগাযোগ মাধ্যমে দলটির নেতাকর্মীদের পেজে নিজেদের এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এ ছাড়া দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং জাতীয় নির্বাচনকে বানচাল করতে বিদেশে বসে নানা ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা। তারা সেখানে বসে প্রতিনিয়ত বৈঠক করছে।
সম্প্রতি ভারতের কলকাতার নিউ টাউনে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের নিয়ে চা চক্রে মিলিত হয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। দেশের প্রথম সারির একটি গণমাধ্যমে এমন তথ্য উঠে আসে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক টাঙ্গাইল-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ‘ছোট মনিরের’ সঙ্গে প্রতিবেদকের ফোনালাপ হয়। ছোট মনির ওই প্রতিবেদককে জানান, তারা নাকি শিগগিরই ফিরছেন। মনির জানান, তিনি নেত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ও সাক্ষাৎ হয়। আপাতত ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকলেও, দলীয় হাইকমান্ডের সংকেত পেলেই তিনি বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। তার এ বক্তব্যে স্পষ্ট, আগামী দিনে নিউটাউন থেকে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া নাশকতার ঘটনাগুলোর নেপথ্যে আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা রয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মনির সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।
আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, আমাদের নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে হবে। নিজেদের শৃঙ্খল থাকতে হবে। আমাদের দলের প্রধানকে কীভাবে দেশে আনা যায়, সেজন্য সবার মধ্যে ঐক্য, সততা ও সাহসের জায়গাটা থাকতে হবে।’
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল : সারা দেশে রাজনীতিতে নিজেদের সক্রিয় অবস্থান জানান দিতে প্রায় প্রতিদিনই ঝটিকা মিছিল করছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারও এসব মিছিল থেকে ধরপাকড় করছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পর রিমান্ডেও নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান থানাধীন এলাকায় ঝটিকা মিছিলের অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ২১ জন নেতাকর্মীকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালত এ আদেশ দেন। একই মামলায় গ্রেফতার আরও তিনজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বয়স যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর ঢাকার গুলশান থানাধীন গুলশান-১ এলাকার ফজলে রাব্বী পার্কের পাশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক সেøাগান দেন। তারা রাস্তায় চলাচলরত গাড়ি ভাঙচুরেরও চেষ্টা করেন এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য একত্রিত হন।
রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের মিছিল-সমাবেশ প্রসঙ্গে সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও বানাতে আওয়ামী লীগ ঝটিকা মিছিল করে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, তবে বেশিরভাগই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ডিএমপি ও জাইকার যৌথ আয়োজনে ‘রোড সেফটি সেমিনার’-এর পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অনেকে নাইট কোচে এসে অল্প সময়ের জন্য ব্যানার দেখিয়ে ভিডিও করে ফেসবুকে দেয়। এতে মনে হয় বড় মিছিল হলো, কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু না।’ ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও বানাতে আওয়ামী লীগ মিছিল করে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে পুলিশের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। সামনে একটি নির্বাচন আসছে, পুলিশ তার দায়-দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
এবারের নির্বাচনকে ঘিরে একটি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশের আশা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা দলটি এবার অংশ নিতে পারছে না, তাই তারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তার ভাষায়, ‘একটি দল নিষিদ্ধ ঘোষিত। তারা ককটেল বিস্ফোরণ, নাশকতার চেষ্টা করছে। তবে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছিÑ যাতে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড না ঘটে।’
কেকে/এআর