জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কুড়িগ্রাম জেলার চারটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। তাদের বেশিরভাগই গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তারা যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। সভা-সমাবেশ, উঠানবৈঠকে। বৃহত্তর দল বিএনপি থেকে প্রতিটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন একাধিক নেতা। মনোনয়ন পেতে এই বড় দলের নেতারা দলের কেন্দ্রে বাড়িয়েছেন যোগাযোগ।
উলিপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৩ আসন্ন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে আছেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এ কে এম তাসভিরুল ইসলাম। তবে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল খালেক। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের আশা, আব্দুল খালেকের হাত ধরেই জাতীয় পার্টির দুর্গখ্যাত এই আসনে উড়বে বিএনপির জয়ের পতাকা।
এই আসনে গত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হন। তবে আসনটি মূলত জাপার দুর্গ হিসেবে খ্যাত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আসনটি দখল করতে মরিয়া বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তবে এ আসনে প্রথমবারের মতো বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে অবশ্য প্রার্থী বাছাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, বিএনপির দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে ত্যাগী নেতা হচ্ছেন—আব্দুল খালেক। তিনি ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে এ কে এম তাসভিরুল ইসলাম ২০০৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হলেও স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। তিনি নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যেই বেশি সময় দেন। এ ছাড়া তাসভিরুল ইসলাম এক-এগারোপরবর্তী সময়ে সংস্কারপন্থি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে হরিণ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেন এবং দল থেকে বহিষ্কার হন। যদিও পরে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
আরো জানা যায়, তাসভিরুল ইসলাম জেলা বিএনপির সভাপতি থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডে ছিলেন নিষ্ক্রিয়। বরং আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেই ছিল তার সখ্য। এমনকি জুলাই অভ্যুত্থানেও তাকে মাঠে দেখা যায়নি। উল্টো ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তিনি হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। যার কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব রয়েছে।
অন্যদিকে আব্দুল খালেক ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আব্দুল খালেক ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ফজলুল হক হলের সভাপতি, কেন্দ্রীয় সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক, সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি। বর্তমানে তিনি রংপুর বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, উলিপুরে শুরু হয়েছে নতুন শক্তির উত্থান, আর সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিএনপির জাতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জননেতা আব্দুল খালেক। তারা বলছেন, গত বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উলিপুরে আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে এসেছে নতুন গতি। কারণ দীর্ঘ ১৭ বছর জেল-জুলুমের মুখেও তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের পাশে থেকেছেন।
উলিপুর বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, আব্দুল খালেন একজন ত্যাগী, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ও পরীক্ষিত নেতা। তার পেছনে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই আসনের সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় তিনি। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এই আসনে বিএনপির জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
স্থানীয় আরেক যুবদল নেতা বলেন, মাঠের রাজনীতিতে আব্দুল খালেক এগিয়ে। তাকে ঠেকাতে প্রতিপক্ষ, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী নানা কৌশল নিচ্ছে। কারণ আব্দুল খালেক বিএনপির প্রার্থী হলে জামায়াতের পক্ষে লড়াই করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে তাসভিরুল ইসলামের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা নেই। তিনি মনোনয়ন পেলে সুবিধা পাবে জামায়াত।
বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আব্দুল খালেক বিএনপির পরীক্ষিত মানুষ। তার দরজা সাধারণ মানুষের জন্য সবসময়ই খোলা। তিনি কখনোই কাউকে ফিরিয়ে দেননি। অন্যদিকে তাসভিরুল ইসলামরা পারিবারিকভাবেই ব্যবসায়ী পরিবার। তারা ব্যবসার স্বার্থই আগে দেখেন। সে কারণে তার বড় ভাই একেএম মাইদুল ইসলাম একাধিকবার দলবদল করেছেন। তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠজন। কিন্তু জিয়াউর রহমানের শাহদাতবরণের পর তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন ও মন্ত্রীও হন। পরে আবার ১৯৯৬ সালে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করেন। কিন্তু আবার পল্টি নিয়ে জাপাতে যোগ দেন এবং আমৃত্যু জাপার এমপি ছিলেন। এর কারণে তাসভিরুল ইসলামকে নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে সংশয় আছে।
দলীয় কার্যক্রম ও মনোনয়ন নিয়ে আব্দুল খালেক বলেন, ‘অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে শক্তিশালী ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। চাঁদাবাজি বা হয়রানি রোধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই মাঠে থাকব। তবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, সংগঠন পরিচালনায় দক্ষতা ও আন্দোলনে ভূমিকা বিবেচনায় দল আমাকে বিবেচনা করবে বলে আমি আশাবাদী।’
কেকে/এজে