বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় আখের বাম্পার ফলন ও ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলার হারতা ইউনিয়নে আখ চাষে সফল চাষীরা। দিন দিন আখ চাষে ঝুকঁছেন অধিক চাষী।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হারে আখের চাষ হয়। তবে, আগে উজিরপুরে তেমনটা আখ চাষ হত না। বর্তমানে উজিরপুরের হারতায় আখ চাষের প্রতি আস্থা যুগিয়েছেন চাষীরা। অধিক চাষী আখ চাষ করছেন এবং সফলতা অর্জন করেছে।
হারতা বাজার এলাকার আখচাষী ও ব্যবসায়ী মো. কামরুল মিয়া জানান, বুধবার হারতা হাটে কয়েক মাস চলে আখের বেচা-কেনা। কার্তিক মাস থেকে এ বাজারেই শুরু হয় আখের চারা বা বীজ বিক্রি। হারতা কচা নদীর তীরে নৌকায় আখ বিক্রি হচ্ছে। নদীর তীরে অবস্থিত হারতা বাজার থেকে সরকার পাচ্ছে রাজস্ব।
এদিকে হারতা থেকে পাইকারী কিনে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন জেলাতে আখ বাজারজাত করেন।
ব্যবসায়ী কামরুল বলেন, ‘বরিশাল জেলার হাট-বাজার ছাড়াও খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, মাদারিপুর, ফরিদপুর, ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে আমাদের বোম্বাই আখ পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। এ বছর ভালো ফলন হয়েছে এবং দাম আশানুরূপ হওয়ায় আমরা বেজায় খুশি। এছাড়া হারতায় আখ চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেে একাধিক চাষী।’
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছর ৪৫ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৭৩৫ টন আখের আবাদ হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই কম—বেশি আখের চাষ হয়। তবে হারতা, বামরাইল ও গুঠিয়া একটু বেশি চাষ হয়ে থাকে।
উপজেলার বিভিন্ন আখের ক্ষেতে সরেজমিনে দেখা যায়, ৪১ ও ৪২ জাতের আখ বেশি চাষ হচ্ছে। দিন দিন আখ চাষে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে যে আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে লক্ষ্যমাত্রা দিন দিন অতিক্রম করবে।
জানা গেছে, এখন আখের ভরা মৌসুম। গরম কিংবা শীত যেকোনো ঋতুতেই পাওয়া যায় আখ। আর এই আখ বাংলাদেশে চিনি উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল।
আখ চাষে সাত থেকে আট মাসের মধ্যে বাজারজাত করা যায় এবং ফলনও পাওয়া যায় বলে আখ চাষ করে বহু কৃষক স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
হারতার কুচিয়ার পার গ্রামের আখ চাষি হিরো লাল হালদার (৬০) জানান, তিনি গত বছর ৩০ শতাংশ জমিতে আখের চাষ করেছেন। ওই পরিমাণ জমিতে চাষ করতে খরচ হয়েছিল ৯০ হাজার টাকা। তিনি পাইকারি এক লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেন। এ বছর সমপরিমাণ জমিতে আখের চাষ করে ৮৫ হাজার টাকা খরচ করে তিনি এক লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।
গ্রামের আরেক আখ চাষি সাইফুল (৬৮) জানান, তিনি নিজেই সব কাজ করেন। এ জন্য তার খরচ খুব একটা হয় না। তবে, ৯ শতাংশ জমিতে তার মাত্র ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে একই খরচে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করলেও এ বছর ওই জমির এক লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।
বামরাইল ইউনিয়নের কাজিরা গ্রামের আখ চাষি জসিম বিশ্বাস জানান (৬৫) জানান, তিনি মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছেন। গত বছরও তিনি একই পরিমাণ জমিতে আখ চাষ করেছেন। তবে, ৩২ হাজার টাকা বিক্রি করলেও এ বছর বিক্রি করেছেন ৪০ হাজার টাকা।
উজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ বলেন, ‘উপজেলার যেসব এলাকায় আখ চাষ বেশি হচ্ছে, সেসব এলাকায় স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে চাষিদের আখ লাগানো থেকে শুরু করে উঠানো পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ধাপে সার প্রয়োগ ও রোগ বালাই নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা।’
কেকে/এমএ