ইউটিউবের এক সাধারণ ভিডিওই বদলে দিয়েছে এক কৃষকের জীবন। কৌতূহল, পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর সাহাবাজ গ্রামের শাহাবুদ্দীন মন্ডল আজ ড্রাগন ফলের সফল উদ্যোক্তা।
তিন বছর আগে শখের বশে ৩ একর জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু, প্রথম বছরেই সঠিক পরিচর্যার অভাব, রোগবালাই ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। প্রায় ২০-২২ লাখ টাকা লোকসান হলেও হাল ছাড়েননি শাহাবুদ্দীন। নতুনভাবে পথচলার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রশিক্ষণ নেন, উন্নত জাতের চারা সংগ্রহ করেন এবং নিয়মিত পরামর্শ নিয়ে শুরু করেন নতুনভাবে। প্রথম বছরেই তিন লাখ টাকার আয় হয়। এবার জমি বাড়িয়ে ৪ একরে চাষ করেছেন, বিক্রি করেছেন প্রায় ৯ লাখ টাকার ড্রাগন। খরচ বাদে লাভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা। লোকসানের গ্লানি পেছনে ফেলে আজ শাহাবুদ্দীন মন্ডল এক অনুপ্রেরণার নাম। ইউটিউবের সেই শখের চাষ আজ তার জীবনের বাস্তব সাফল্যে রূপ নিয়েছে।
শুধু ড্রাগন নয়, শাহাবুদ্দীন এখন মিশ্র কৃষিতেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একই জমিতে বস্তায় আদা, কলা, পুকুরে মাছ, গরুর খামার ও লেয়ার মুরগি পালন করছেন তিনি। সব মিলিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘এস আর এগ্রো ফার্ম’। বর্তমানে তার ফার্মে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৫-২০ জন বেকার যুবকের।
স্থানীয় তরুণ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আগে ভাবতাম কৃষি মানেই শুধু ধান আর ভুট্টা। কিন্তু, শাহাবুদ্দীন ভাই প্রমাণ করেছেন, সঠিক চিন্তা ও পরিকল্পনা থাকলে কৃষিও হতে পারে সফল ব্যবসায়। তার ফার্ম দেখে আমরা অনেকেই নতুনভাবে কৃষি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি।’
প্রবীণ কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা সারাজীবন পরিচিত ফসলই চাষ করেছি। শাহাবুদ্দীনের এই নতুন ফসলের চাষ আমাদেরও উৎসাহ দিয়েছে। এখন অনেকেই তার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করছে।’
স্থানীয় হাবিবুর রহমান হবি বলেন, ‘শাহাবুদ্দীনের সাফল্য আমাদের গ্রামের গর্ব। এমন চিন্তা ও পরিশ্রম সমাজের চিত্র বদলে দিতে পারে। তার মতো মানুষই গ্রামীণ উন্নয়নের চালিকা শক্তি।’
শাহাবুদ্দীন মন্ডল বলেন, ‘ইউটিউব দেখে চাষ শুরু করেছিলাম। প্রথমে ক্ষতি হয়েছিল, কিন্তু হাল ছাড়িনি। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় নতুন করে শুরু করি। এখন ফলন ভালো, দামও ভালো পাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন প্রায় ৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। ফলন দারুণ হয়েছে। পাশাপাশি মাছ, গরু ও মুরগির খামারও চলছে। আগামী বছর ফার্মটা আরও বড় করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রাশিদুল কবির বলেন, ‘শাহাবুদ্দীন একজন উদ্যমী কৃষক। প্রথম দিকে কিছু ভুল হয়েছিল, আমরা সরেজমিনে গিয়ে পরামর্শ দিয়েছি। তাকে “নতুন ফসল পরিচর্যা” ও “বাণিজ্যিক ফল চাষ ব্যবস্থাপনা” বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উন্নত জাতের চারা, জৈব সার, সেচ ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত সহায়তা ও ফলো-আপ করেছি। তার সাফল্য নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সুন্দরগঞ্জে ড্রাগনসহ নানা অপ্রচলিত ফসলের চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছি, যাতে কৃষকরা একমুখী চাষ থেকে বের হয়ে বহুমুখী আয়ে যুক্ত হতে পারেন। শাহাবুদ্দীনের মতো উদ্যমী কৃষক আমাদের প্রচেষ্টার সফল উদাহরণ।’
কেকে/ এমএ