মৌলভীবাজারে ড্রাগন ফল চাষ করে বছরে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন কৃষক আব্দুল মান্নান। তার এই সাফল্য দেখে এলাকার বহু কৃষক আগ্রহী হয়ে উঠছেন ড্রাগন চাষে। আর কৃষকদের মাঝে উচ্চমূল্যের ফসলের আবাদ সম্প্রসারণ করতে কাজ করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
জানা যায়, চাষি আব্দুল মান্নান ২০২০ সালে আকবরপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ১ হাজার ড্রাগন ফলের চারা কিনে ৫০ শতক জমিতে রোপণ করেন। কলমের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে এর সংখ্যা বাড়ান। আব্দুল মান্নানের ড্রাগন বাগান এলাকার কৃষকদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ ড্রাগন গাছে ঝুলছে টুকটুকে লাল ফল। বর্তমানে এই বাগানে প্রায় ৪ হাজার ড্রাগনের চারা রয়েছে।
চাষি আব্দুল মান্নান জানান, তার বাড়ি সদর উপজেলার দশকাউনিতে। আকবরপুর এলাকার এই টিলা তাঁর যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মামা সৈয়দ এরশাদ আলীর। মামার কাছ থেকে জায়গা পাওয়ার পর ২০২০ সাল থেকে তিনি দেশি-বিদেশী বিভিন্ন ফলের চারা রোপণ শুরু করেন। দুইটি টিলা মিলে জায়গা ৫ একর ৪৪ শতাংশ। ২০২২ সাল থেকে তার বাগানে নিয়মিত ড্রাগন ফল আসছে। এতে প্রতি বছর তিনি কয়েক লাখ টাকার ফল বিক্রি করে। এবছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করেছেন তিনি। বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং বাজারে এই ফলের চাহিদা থাকায় ফল বিক্রি করে আরও লাভবান হওয়ার আশা করছেন তিনি।
চাষিরা জানান, ড্রাগন গাছ রোপণের এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই গাছে ফুল আসে এবং ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল হয়। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসে ফুল এলেও অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসেও ফল উত্তোলন সম্ভব। ১৮ মাস বয়সী একটি গাছ থেকে ৫-২৫টি ফল পাওয়া যায়। প্রাপ্তবয়স্ক একটি গাছ থেকে বছরে ১০০টি পর্যন্ত ফল উৎপাদন হয়। প্রতিটি গাছ মোট ২০ বছর পর্র্যন্ত ফল দেয়। প্রতিটি ড্রাগন ফলের ওজন ২০০ গ্রাম থেকে শুরু করে এক কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, একসময় মৌলভীবাজার জেলায় শুধু ঐতিহ্যবাহী ফলই উৎপাদিত হতো। কিন্তু আব্দুল মান্নানের মতো উদ্যোগী কৃষকরা এখন রামবুটান, কাজুবাদাম কিংবা ড্রাগনের মতো অপ্রচলিত ফল চাষ করে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছেন। ঐতিহ্যবাহী ফসলের বাইরে গিয়ে আধুনিক ও অপ্রচলিত ফল চাষ করে তিনি সম্ভাবনার নতুন পথে হাটছেন। অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন এলাকার কৃষকরা।
ফল চাষী মান্নান জানান, ড্রাগন গাছ রোপণের দুই বছর পর থেকে ফলন আসে। তুলনামূলক অল্প খরচে ভালো আয় করা যায়। স্থানীয় বাজারে রয়েছে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার এসে বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ড্রাগন ফল।
তবে লাভজনক হলেও ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি বলে জানান মান্নান।
তিনি বলেন, ‘আগাছা পরিষ্কার, জৈবসার প্রয়োগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয়। এতে বাড়তি খরচ ও শ্রমের প্রয়োজন হলেও ফলন এবং মান ভালো থাকে। লাভজনক হওয়ায় ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন জেলার কৃষকরা।’
কৃষি বিভাগ বলছে, ‘উচ্চমূল্যের ফসলের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’
পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে তাদেরকে পরামর্শ দেয়ার কথা জানান কৃষি কর্মকর্তারা। এর ফলে কৃষি অর্থনীতিতে যেমন বৈচিত্র্য আসছে, তেমনি কৃষকরা নতুন বাজারও খুঁজে পাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত উপপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, ‘অল্প সময়ে ড্রাগন থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এছাড়াও এ ফলে বেশ চাহিদা রয়েছে। আব্দুল মান্নান খুবই উদ্যোগী ও কর্মঠ কৃষক। তার বাগানে ড্রাগনসহ বিদেশি বহু ফল আছে। আব্দুল মান্নানের এই বাগান শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের নয়, বরং স্থানীয় কৃষির সম্ভাবনা ও উদ্ভাবনী শক্তিরও প্রতীক। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা তাকে সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।’
কেকে/ এমএ