সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫,
১১ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু বাংলাদেশের      দেশের বাজারে আবারও কমলো স্বর্ণের দাম      ঐকমত্য কমিশনের শেষ বৈঠক, মঙ্গলবার সুপারিশ পেশ      মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা      সিটি ইউনিভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ      সালমান শাহ ইস্যুতে এবার মুখ খুললেন শাবনূর      আমলাতন্ত্রের সঙ্গে সংঘাত নয়, কাজ কমিয়ে দেওয়া হবে      
ইতিহাস ও এতিহ্য
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কালের সাক্ষী চাখার জাদুঘর
সুমন দেবনাথ, বানারীপাড়া (বরিশাল)
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৪৭ পিএম
কালের সাক্ষী চাখার জাদুঘর । ছবি : প্রতিনিধি

কালের সাক্ষী চাখার জাদুঘর । ছবি : প্রতিনিধি

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার চাখারে অবস্থিত জাদুঘরটির নাম শেরে বাংলা স্মৃতি  জাদুঘর। এটি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের পৈতৃক ভিটায় নির্মিত। এটি শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের জন্মস্থান, এবং এই জাদুঘরটি তার স্মৃতি রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে। জাদুঘরে তার ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র যেমন আরাম কেদারা, খাট, তোষক, আলনা এবং ড্রেসিং টেবিল সহ বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।

১৯৮২ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে চাখারের প্রাণকেন্দ্রে ২৭ শতক জমির ওপর শের-ই-বাংলা স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণকাজ শুরু হয়। আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় ৪৩ মিটার দীর্ঘ ও ১৪.৬০ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট এ জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়। জাদুঘরের এ জমি শের-ই-বাংলার নিজস্ব বসতভিটার অংশ।

বরিশাল জেলা থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের বসতভিটার ২৭ একর জায়গা জুড়ে শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে এই জাদুঘরটি চাখার প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর হিসেবে পরিচিত। অবিভক্ত বাংলার প্রধান মুখ্যমন্ত্রী ও অবিস্মরণীয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক পিতার মৃত্যুর পর কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসার উদ্দেশ্যে ১৯০১ সালে বরিশাল আগমন করেন। আইন ব্যবসার পাশাপাশি তিনি চাখারের জমিদারিত্বের দেখাশুনা করতেন। ১৯৮৩ সালে সংস্কৃতি বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ইতিহাস ও স্মৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এই জাদুঘর নির্মাণ করা হয়।

পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘরে তিনটি প্রদর্শনী কক্ষ, একটি অফিস কক্ষ, একটি বিশ্রামাগার ও একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। জাদুঘরের বাম দিকে শেরে বাংলার একটি বিশাল প্রতিকৃতি এবং তার পাশে জীবনকর্মের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ছবি এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত শেরে বাংলা ফজলুল হকের বিভিন্ন ফিচার ও ছবি রাখা আছে। শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘরে আরও আছে বিরল আলোকচিত্র, ব্যবহৃত আসবাপত্র, চিঠিপত্র, সুন্দরবনের শিকার করা কুমিরের মমি, অষ্টভুজাকৃতির মারীচী দেবী মূর্তি, কালো পাথরের শিবলিঙ্গ, ব্রোঞ্জের বৌদ্ধ মূর্তি, স্বর্ণমুদ্রা, পাথরের ছোট শিব লিঙ্গ মূর্তি, রৌপ্য মুদ্রা, শ্রীলংকা, ব্রিটিশ ও সুলতানি আমলের তাম্র মুদ্রা এবং বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের অধীনে থাকা এই জাদুঘরে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।

জাদুঘর লাগোয়া দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে শের-ই-বাংলার বিশ্রামাগার ও ফজলুল হক ইনস্টিটিউশন, পূর্ব পাশে মসজিদ, পারিবারিক কবরস্থান, পেছনের উত্তর প্রান্তে বসতভিটা এবং এর অদূরে ১৯৪০ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সরকারি ফজলুল হক কলেজ।

১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটিতে বর্তমানে সাতজন স্টাফ কর্মরত। জাদুঘরের ভেতরে কক্ষ মোট পাঁচটি। পশ্চিম প্রান্তের কক্ষটি সহকারী কাস্টোডিয়ানের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

জাদুঘরে রয়েছে তিনটি ডিসপ্লেরুম, একটি অফিস ও লাইব্রেরিরুম এবং একটি ডরমেন্টরিরুম। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শের-ই-বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হকের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবন সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে ও ধারণা দিতে এ জাদুঘরটি ভূমিকা রাখছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা মহান এ নেতার স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু জাদুঘরটিকে আরো সমৃদ্ধ করতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

পরিদর্শনের সময় অনেকেই নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পরে প্রতিশ্রুতির মধ্যেই থেকে যায়। এমনকি শের-ই-বাংলার একমাত্র পুত্র প্রয়াত এ কে ফায়জুল হক তিনবার সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন সময় সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও পিতার স্মৃতিঘেরা এ জাদুঘরটিকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

জাদুঘরের একতলা ভবনটি ভেঙে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ, শের-ই-বাংলার শৈশব, কৈশোর, ছাত্রজীবন, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবন সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে তার ওপর গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন, পর্যটকদের সঙ্গে আসা শিশুদের জন্য পার্ক নির্মাণ, পর্যটকদের থাকার জন্য আবাসস্থল, শের-ই-বাংলার বিষয়ে আরো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও দক্ষ জনবল বাড়ানোসহ জাদুঘরটিকে সমৃদ্ধ করা হলে দর্শনার্থী পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

কথাপ্রসঙ্গে মুঠোফোনে শের-ই বাংলা এ কে ফজলুল হকের দৌহিত্র চাখারের সন্তান এ কে ফাইয়াজুল হক রাজু বলেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন নিদর্শন শের-ই বাংলা স্মৃতি চাখার জাদুঘর অযত্নে অবহেলায় বর্তমানে ধ্বংসের পথে। ইতিহাসের সাক্ষী এই জাদুঘরটি রক্ষাকল্পে অবিলম্বে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

জাদুঘরের প্রবেশমূল্য ও সময়সূচী

শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর গ্রীষ্মকালে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এবং শীতকালে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে ১.৩০টা পর্যন্ত সাময়িক বিরতিতে বন্ধ থাকে। জাদুঘরের সাপ্তাহিক ছুটি রোববার এবং শুক্র ও সোমবার জাদুঘর অর্ধদিবস খোলা থাকে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারী ছুটির দিনে শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর বন্ধ থাকে।

শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘরে জনপ্রতি প্রবেশ টিকেটের মূল্য ১০ টাকা এবং বাচ্চাদের জন্য ৫ টাকা। আর ৫ বছরের নিচের বাচ্চাদের বিনামুল্যে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য ২৫ টাকা এবং অন্যান্য বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা।

ঢাকা থেকে সড়ক, নৌপথ এবং আকাশপথে বরিশাল যাওয়া যায়। বরিশাল শহরে এসে লোকাল বাসে চাখার গ্রামে পৌঁছে শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করতে পারবেন অথবা সিএনজি রিজার্ভ নিয়েও যেতে পারবেন।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  প্রত্নতাত্ত্বিক   নিদর্শন   কালের সাক্ষী   চাখার জাদুঘর   
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

গভীর রাতে ১১ জনকে পিটিয়ে জখম করল যুবক, অতঃপর...
ভালুকায় সওজের ড্রেন এখন ভোগান্তির কারণ
বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক
গৌরনদীতে ডেঙ্গুতে গৃহবধূর মৃত্যু, নার্সদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ
হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে স্কুল কমিটির নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ, বিতর্কে প্রধান শিক্ষক ছিদ্দিকুর
রাণীশংকৈলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে জরিমানা
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনের দাবিতে লোহাগাড়ায় গণসংযোগ
গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সুপ্রিম সিড কোম্পানির চুক্তি
গোবিন্দগঞ্জে পৌরসভা উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ইতিহাস ও এতিহ্য- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close