ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় গভীর রাতে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ১১ জনকে জখম করেছে মো. আব্দুল বাতেন (২৩) নামে এক যুবক। আহত ১১ জনের মধ্যে চারজন ময়মনসিংহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আশঙ্কাজনক একজনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। যুবকের এমন কাণ্ডে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে লোহার শিকল ও রশি দিয়ে আমগাছের সাথে বাতেনকে বেঁধে তাতে তালা লাগিয়ে রাখে।
রোববার (২৬ অক্টোবর) রাতে উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বাতেন গ্রামের প্রয়াত আব্দুল লতিফের ছেলে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকালে চন্ডিপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্ত যুবক আব্দুল বাতেনকে আম গাছের সাথে লোহার শিকল ও রশ্মি দিয়ে বেঁধে তাতে তালা লাগানো হয়েছে। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
যুবকের পিটুনিতে আহত কয়েকজন হলেন শহিদুল্লাহ ফকির (৬০), রমজান আলী (৬৫), লিটন মিয়া (৪৫), লিটনের মা জহুরা খাতুন (৭০), হোসেন আলী (৬০), হোসেন আলীর মেয়ে সুরাইয়া খাতুন (১৫), শমলা খাতুন (৫৫), মতিন ডাক্তার (৬৫) ও নজরুল ইসলাম (৫০)।
স্থানীয়রা জানান, আহতদের মধ্যে শহিদুল্লাহ ফকিরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় রেফার করে। এছাড়া হোসেন আলী, সুরাইয়া, জহুরা খাতুন ও রমজান আলী ময়মনসিংহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আহত সবাই চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা।
আহত মতিন ডাক্তার ও স্থানীয় আব্দুল হাই বলেন, ‘বাতেন গভীর রাতে হঠাৎ করে তার চাচাতো বোন সুরাইয়ার ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাকে লোহার রড দিয়ে পিটাতে থাকে। সুরাইয়ার চিৎকার শুনে তার বাবা ও পাশেপাশের লোকজন ছুটে গেলে একেএকে সবাইকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে বাতেন। আমরা প্রশাসনের কাছে তার বিচার চাই।’
বাতেন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী কি না জানতে চাইলে এলাকাবাসী জানান, বাতেন কোন পাগল বা মানসিক রোগী না। মাস-দুয়েক আগে মাদক মামলায় জেল কেটে জামিনে আসে বাতেন। জামিনের আসার পর সে ভালোই চলাফেরা করছিল। গতকাল হঠাৎ সে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে বসে। আতঙ্কে স্থানীয়রা বাতেনকে গাছে বেঁধে রাখে।
কেন এতগুলো মানুষকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে গাছে বাঁধা বাতেন বলেন, ‘যাদের আমি মেরেছি—এরা সমাজটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। আমি সমাজের ভালোর জন্যই এই কাজ করেছি।’
এ সময় বাতেনকে আরও অনেক এলোমেলো কথা বলতে শোনা গেছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য মো. আআব্দুল মোতালেব বলেন, ‘বাতেন পাগল কি না, আমি সঠিক বলতে পারছি না। তবে সে যে কাজটি করেছে তা খুবই মর্মান্তিক। এখন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকাবাসী যে সিদ্ধান্ত নিবে, আমি তাদের পক্ষে আছি।’
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে বাতেনকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। সে মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহের একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার মানসিক উন্নতির পর ভোক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কেকে/এমএ