রাজধানীর হাজারীবাগে নিখোঁজের এক দিন পর আরিফ মির (২৬) নামে এক যুবকের লাশ বুড়িগঙ্গা নদীতে ভেসে উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবারের দাবি, তাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং লাশ গুম করতে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত নদী থেকেই চারশ’র বেশি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বুড়িগঙ্গা নদীর হাজারীবাগ এলাকার বাড়ৈখালী ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
আরিফ মির মাদারীপুর জেলার শিবচর থানা এলাকার কবির মিরের পুত্র। আরিফ পেশায় ড্রাইভার ছিলেন।
পরিবারের অভিযোগ, শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টার দিকে কে বা কারা ফোন করে বাসা থেকে বের করে আরিফকে। এর এক দিন পর তার লাশ পাওয়া যায় বুড়িগঙ্গা নদীর বাড়ৈখালী ঘাটে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার ভোরে নিখোঁজ হয় আরিফ। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় তার লাশ মেলে হাজারীবাগ এলাকার বাড়ৈখালী বুড়িগঙ্গা নদীর ঘাটে।
স্থানীয়রা জানান, সকালে শ্রমিকরা কাজ করতে গেলে একটি লাশ ভেসে উঠতে দেখে। পরবর্তীতে শনাক্ত করা হয়, এটি নিখোঁজ হওয়া আরিফের লাশ।
পরিবারের দাবি—আরিফকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে, লাশ গুম করার জন্য নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
নিহত আরিফের দুই বছরের একটি শিশু রয়েছে।
আরিফের বাবা কবির মির বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিলো না। কিন্তু কারা এভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করল, তা আমরা জানি না।’
তিনি জানান, ‘শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে কে বা কারা ফোন করে বাসা থেকে নিয়ে যায় আমার ছেলেকে। এরপর থেকে সে সারাদিন নিখোঁজ ছিল। শনিবার ভোরে নদীতে লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা শনাক্ত করে, এটি আরিফের লাশ।’
‘আমরা ৩২ বছর ধরে ঢাকায় থাকি। কারও সঙ্গে কখনো মতভেদ হয়নি। আমার ছেলের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে এর সঠিক বিচার চাই। আমরা খুব গরিব মানুষ। আমার ছেলেকে কেন হত্যা করা হল?’, বলেন আরিফের বাবা।
বসিলা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আরমান জানান, ‘গতকাল (শনিবার) আরিফ নামে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত ৮ মাসে খোলামোড়া থেকে ঢাকা উদ্যান এলাকা পর্যন্ত ১০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ হত্যা বলে সন্দেহ রয়েছে।’
তিনি জানান, ‘শনিবার হাজারীবাগ থানা এলাকার বাড়ৈখালী ঘাট থেকে আরিফ নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে—এই যুবককে কীভাবে হত্যা অথবা অন্য কেনো কারণে নিহত হয়েছে কি না।’
জানা যায়, ৮ মাসে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান থেকে খোলামোড়া ঘাট কামরাঙ্গীরচর পর্যন্ত ৮-১০টি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত নদীতে ৪৪১টি মরদেহ পাওয়া যায়। যার মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ২৯৯টি, আর পরিচয় মেলেনি ১৪১টির। অন্যদিকে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে মরদেহ পাওয়া গেছে ৩০১টি। এর মধ্যে ৯২টি শনাক্ত করা যায়নি।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, নদীতে মরদেহ ফেললে তা শনাক্ত করা কঠিন। তাই, অপরাধীরা নদীকে মরদেহ গুম করার ডাম্পিং স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করছে। বেশি লাশ উদ্ধার হয়—এমন এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি এসব মরদেহ শনাক্তের কাজে সব বাহিনীকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
জানা যায়, লাশ ঘুম করা ও মরদেহ শনাক্ত না করার জন্য এখন একমাত্র পথ হচ্ছে নদী। দুর্বৃত্তরা হত্যা করেই লাশ ফেলে দিচ্ছে নদীতে। এ থেকে উত্তরণের জন্য নদীবন্দর এলাকায় এক কিলোমিটার পর পর সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা দরকার বলে মনে করেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
হাজারীবাগ বাড়ৈখালী এলাকার সাধারণ নাগরিকরা এ প্রতিবেদককে বলেন, নিহত আরিফ মির একজন শান্ত স্বভাবের যুবক ছিল। তাকে কেন এভাবে হত্যা করা হল, তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুসন্ধান করে বের করতে হবে। এর সঠিক বিচার করতে হবে।
কেকে/এমএ