রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার লালমাটিয়া থেকে এক যুবককে মধ্যরাতে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তী অপহরণকারীরা ভুক্তভোগী ওই যুবককে মিরপুর মডেল থানায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য দিয়ে হস্তান্তর করে বলে জানা গেছে। যদিও লালমাটিয়া থেকে অপহরণের বিষয়ে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো কিছু জানেন না।
এই ঘটনায় একটি সিসিটিভি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, গভীর রাতে একজন ব্যক্তিকে একটি প্রাইভেটকারে জোর করে তুলে নেওয়া হচ্ছে। তিন যুবক— এর মধ্যে একজন গাড়ির ভেতরে ও দুইজন বাইরে মিলে টেনে-হিঁচড়ে ওই ব্যক্তিকে কারে তুলছে।
সিসিটিভি ফুটেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে লালমাটিয়া হাউজিং এলাকার মহিলা কলেজের পেছনের সড়ক থেকে সাদা শার্ট ও হেলমেট পরিহিত দুই ব্যক্তি মিলে এক ব্যক্তিকে জোর করে একটি সাদা প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। এ সময় কয়েক গজ দূরেই তার মোটরসাইকেল দাঁড়ানো ছিল। ফুটেজে ভুক্তভোগীর হাতে একটি হেলমেট দেখা যায়।
পরে স্থানীয়রা মোহাম্মদপুর থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মিরপুর থানার এক পুলিশ সদস্য মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
এদিকে বুধবার মোহাম্মদপুর এলাকায় কোনো অভিযান চালায়নি মিরপুর থানা পুলিশ— বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ রোমান। প্রশ্ন হলো, মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে প্রাইভেটকারে তুলে নেওয়া ওই ব্যক্তি কীভাবে মিরপুর মডেল থানায় গেলেন?
জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই যুবকের নাম ইঞ্জিনিয়ার তরিকুল ইসলাম তাহসান। তিনি রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের শেলটেক কম্পিউটার সিটিতে প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসায় করেন এবং আগারগাঁও এলাকায় ঠিকাদারি ব্যবসায়ও করতেন। তিনি মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা এবং তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের গৌরনদী সদরের কান্ডপাশা খানবাড়ি এলাকায়। তার বাবা মালেক ফরাজি।
ভুক্তভোগীর এক স্বজন জানান, বুধবার রাতে লালমাটিয়া এলাকা থেকে তরিকুলকে কে বা কারা ধরে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, “তরিকুল অপহরণের শিকার।”
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, তরিকুলকে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় এবং তার ব্যাংক কার্ড ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী তাকে মিরপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
তরিকুলের স্ত্রী-সন্তান মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। পরিবারের দাবি, তার ওপর নির্যাতন চালানো হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন।
অন্যদিকে সাজ্জাদ রোমান জানান, তরিকুলকে স্থানীয় ছাত্রদল, যুবদল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা আওয়ামী লীগের মিছিলে জড়িত থাকার অভিযোগে ধরে থানায় দিয়েছেন। তবে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাত্র তিনজন ব্যক্তি মিলে তরিকুলকে লালমাটিয়া থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাজ্জাদ রোমান বলেন, “মিরপুর ১ নম্বর থেকে তরিকুল নামে একজনকে ছাত্রজনতা ধরে নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে ছাত্র হত্যার অভিযোগ রয়েছে এবং তিনি আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।”
এদিকে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী রফিক আহমেদ বলেন, “লালমাটিয়া থেকে মিরপুর মডেল থানায় মামলা থাকায় তরিকুল নামে একজনকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ।”
তিনি আরও জানান, “ওই ব্যক্তির একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে মোহাম্মদপুর থানায় আনা হয়, পরে মোটরসাইকেলটিও মিরপুর থানায় নেওয়া হয়েছে।”
তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে— যদি তরিকুলকে মিরপুর এলাকা থেকে জনতা ধরে দেয়, তাহলে মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া এলাকায় তার মোটরসাইকেল কেন পড়ে ছিল?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তরিকুল রাজধানীর আদাবর এলাকায় মৎস্যজীবী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন; তিনি ওই থানার সহ-সভাপতিও ছিলেন। পাশাপাশি তিনি একজন ব্যবসায়ী।
স্থানীয়রা জানান, যারা তরিকুলকে ধরে নিয়ে গেছে, তারা কেউই পুলিশের পোশাক পরা ছিল না এবং তাদের আচরণও পুলিশের মতো ছিল না। এছাড়া লালমাটিয়া এলাকা মোহাম্মদপুর থানার খুব কাছেই—তাহলে কোনো অপরাধীকে থানায় হস্তান্তর করার প্রয়োজনে নিকটতম থানায় দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু লালমাটিয়া থেকে মিরপুর মডেল থানায় তরিকুলকে হস্তান্তর করার বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।
কেকে/ এমএ