রাজধানীতে অনলাইনভিত্তিক প্রতারণা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারক চক্র নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সম্প্রতি রাজধানীর লালমাটিয়া, আদাবর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় এমন একাধিক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।
লালমাটিয়ার বাসিন্দা মিলন মিয়া জানান, রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তাকে এক ব্যক্তি “ডিবি অফিস থেকে বলছি” পরিচয়ে ফোন করে জানান, তার মায়ের মোবাইলে সাড়ে ১১ হাজার টাকা রয়েছে, তা অবিলম্বে পাঠাতে হবে। টাকা না পাঠালে তার মাকে ডিবি অফিসে নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেয় প্রতারক।
এতে পরিবারটি আতঙ্কে পড়ে যায়। পরে স্থানীয় এক নেতার সহায়তায় মোহাম্মদপুর থানায় বিষয়টি জানালে পুলিশ প্রাথমিক অনুসন্ধানে এটি প্রতারণার ঘটনা বলে নিশ্চিত হয়।
একইভাবে আদাবর সুনিবিড় হাউজিং এলাকার এক ব্যবসায়ীও “পুলিশ ক্রাইম সেকশন” পরিচয়ে ফোন পেয়ে প্রতারণার শিকার হতে যাচ্ছিলেন। তাকে বলা হয়, তার মোবাইল নম্বর একটি অপরাধ তদন্তে পাওয়া গেছে এবং বিষয়টি ‘মীমাংসা’ করতে হলে টাকা দিতে হবে। পরে ব্যবসায়ী একজন গোয়েন্দা সদস্যকে বিষয়টি জানালে জানা যায়, এটি প্রতারক চক্রের কাজ।
রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী রোডের বাসিন্দা রীনা আক্তার নামে এক নারী অনলাইন শপিংয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি ফেসবুকে গৃহস্থালির একটি পণ্য অর্ডার করার পর প্রথমে ১ হাজার টাকা পাঠান। এরপর বিক্রেতা ওটিপি কোড নম্বর চায়। রীনা ওটিপি দিতে অস্বীকার করলে তাকে আরও ৪ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। টাকা পাঠানোর পর প্রতারক তার মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দেয়।
এ বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, প্রতারকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের পোশাক পরা ছবি ও ভুয়া পদবি ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব আইডিতে উল্লেখিত পদবি ও ইউনিফর্মের মধ্যে কোনো মিল নেই।
এ বিষয়ে র্যাব-২’-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খান আসিফ তপু বলেন, ‘কোনো পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কখনোই ফোনে টাকা বা ওটিপি চাইবে না। এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে নাগরিকদের উচিত নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করা বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতারণা রোধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং এরইমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নাগরিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে— অপরিচিত নম্বর থেকে কেউ পুলিশ বা র্যাব পরিচয়ে টাকা বা তথ্য চাইলে তা কোনোভাবেই দেবেন না এবং বিষয়টি দ্রুত থানায় জানান।’
কেকে/ এমএ