ফরিদপুর জেলায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে জ্বালানি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গোবরের লাঠি। গৃহস্থালির রান্নার জন্য বিকল্প জ্বালানি হিসেবে নারীরা দিনদিন এ পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। গোবরের চটকে শুকনো, চিকন ২-৩ ফুট লম্বা লাঠি বা পাটখড়ির গায়ে হাতে মুষ্ঠি দিয়ে মেখে তৈরি করা হয় শলাকা, গৈঠা বা ঘুটে। এগুলো শুকাতে বাড়ির উঠানে বা রাস্তার পাশে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সাধারণত ৫-৭ দিন রোদে শুকানোর পর এগুলো জ্বালানির উপযোগী হয়। এরপর মজুত করে রাখা হয় রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, রাস্তার ধারে বা বাড়ির আঙিনায় গৃহবধূরা পাটকাঠি কিংবা বাঁশের কঞ্চিতে গোবর মেখে লাঠির মতো করে সাজিয়ে রোদে শুকাচ্ছেন। শুকনো মৌসুমে তৈরি করা এই লাঠিগুলো বছরের অন্য সময় রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়।
জেলার ৯টি উপজেলার নারীরা ঘরোয়া কাজে এই গোবরের লাঠি ব্যবহার করছেন এবং কেউ কেউ তা বিক্রি করেও বাড়তি আয় করছেন। জ্বালানির ঘাটতি মেটাতে গোবরের লাঠি ইতিমধ্যে স্থানীয়ভাবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, ফরিদপুরের যেসব বাড়িতে গরু রয়েছে, সেসব বাড়ির বেশিরভাগ নারী ও শিশুরা গোবরের লাঠি তৈরি করে। অগ্রহায়ণ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত এই কাজ চলে। বর্ষাকালের (আষাঢ়-শ্রাবণ) জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি রেখে বাকি অংশ বিক্রি করে দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও নারী ও শিশুরা সারা বছরই গোবরের লাঠি তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কিছু অসচ্ছল নারী রাস্তার পাশে, মাঠঘাট কিংবা গবাদি পশুর বিচরণস্থল থেকে গোবর সংগ্রহ করেন। অনেকেই আবার নিজের গোয়ালঘর থেকেই গোবর নিয়ে থাকেন। বাড়ির অন্যান্য কাজের ফাঁকে নারীরা পাটকাঠি ও বাঁশের কঞ্চিতে মুঠো মুঠো গোবর মেখে তৈরি করেন শলা। রোদে ৪-৫ দিন শুকানোর পর এগুলো বিক্রির উপযোগী হয়।
এক সময় ফরিদপুর অঞ্চলের নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো গরুর গোবর কুড়িয়ে এনে কাঠের লাঠির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করত। তবে বর্তমানে গ্যাস, কাঠ ও অন্যান্য জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে গ্রামীণ গরু পালনকারী অধিকাংশ পরিবার আবারও গোবরের লাঠির দিকে ঝুঁকছে।
মধুখালী উপজেলার গাজনা এলাকার এক নারী বলেন, জ্বালানি সংকট ও গ্যাসের দর বাড়ায় গোবর জমিয়ে রাখি। শীতকালে সেই গোবর দিয়ে লাঠি তৈরি করে মাঠে শুকাই। শুকনো মৌসুমে মুঠি তৈরি করে ঘরে মজুত করে রাখি। বর্ষাকালে খড়ির খুব অভাব হয়। তখন কাঠ বা সিলিন্ডার কেনার মতো টাকাও থাকে না। এমন দুঃসময়ে এই গোবরের লাঠি অনেক উপকারে আসে।
আসমা নামের এক গৃহবধূ বলেন, গোবরের লাঠি তৈরিতে পরিশ্রম হলেও খরচ কম পড়ে। এগুলো গোয়ালঘরে কিংবা যেকোনো শুকনো স্থানে সারা বছর মজুত রাখা যায়। ঝড়-বৃষ্টির দিনে প্রয়োজন মতো এগুলো দিয়েই চুলায় রান্না করা যায়।
দিন দিন বাড়ছে এই বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার। একই সঙ্গে নারীদের শ্রম আর উদ্যোগ ঘরে এনে দিচ্ছে সাশ্রয়ী জ্বালানি ও বাড়তি আয়।
কেকে/ আরআই