সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
মানসিক রোগে আক্রান্ত ইসরায়েলি সেনারা
খোলা কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:০৭ এএম

গাজায় ভয়াবহ আগ্রাসন চালিয়ে আরো একঘরে হয়ে পড়ছে ইসরায়েল। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে গাজা শহরে বিতর্কিত স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা (আইডিএফ)। পরদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরায়েল একটি সিদ্ধান্তমূলক মুহূর্তে রয়েছে।’

 অন্যদিকে ২৩ মাসে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হয়েছেন ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং এসব হামলা বন্ধেরও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে ওই যুদ্ধে শুধু ফিলিস্তিনিরাই ভুক্তভোগী- বিষয়টি এমন নয়। সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন দপ্তর অসুস্থ সেনাদের বিষয়ে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে। দপ্তরটি জানায়, গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে তারা মোট ২০ হাজারেরও বেশি আহত ইসরায়েলি সেনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। আহতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সেনা এক বা একাধিক মানসিক রোগে ভুগছেন। 

এদিকে বিমান হামলা ও কামানের গোলার আড়ালে ইসরায়েলি বাহিনীর দুটি ডিভিশন শহরের কেন্দ্রীয় এলাকাগুলোর দিকে অগ্রসর হয়, আরো দুটি ডিভিশন রিজার্ভে রাখা হয়। এখন পর্যন্ত সেনারা শহরের উপকণ্ঠেই অবস্থান করছে, তারা তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে গাজা শহরকে। বেসামরিক নাগরিকদের দক্ষিণে পালানোর জন্য পশ্চিম দিকের উপকূলীয় সড়ক খোলা রাখা হয়েছে। 

তবে অধিকাংশ বাসিন্দা সরে যাচ্ছেন না। আনুমানিক দুই থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষ শহর ছাড়লেও প্রায় ছয় লাখ রয়ে গেছেন। বহু পরিবার একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। নিরাপদে দক্ষিণে যেতে পরিবহন ব্যয় ও তাঁবুর অস্বাভাবিক দাম বহন করা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে ক্রমাগত বোমাবর্ষণের মধ্যেও অনেকে গাজা শহরেই অবস্থান করছেন। 

এ দৃশ্য অনেকটা যুদ্ধের শুরুতে হওয়া প্রথম বড় আক্রমণের পুনরাবৃত্তি। তখনো ইসরায়েলি বাহিনী গাজা শহরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল এবং নেতারা হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রায় দুই বছরে অন্তত ৬৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। অধিকাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, বহু এলাকায় মানুষ অনাহারে ভুগছে। 

ইসরায়েলে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব বাড়ছে : ইসরায়েলের ভেতরেও যুদ্ধবিরোধী মনোভাব এখন অনেক তীব্র। ২২ মাস আগে গাজায় হামলার সময় জনসমর্থন ছিল প্রায় সর্বসম্মত। কিন্তু বর্তমানে জরিপ বলছে, ইসরায়েলিদের ৭০ শতাংশ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া নয়, বরং যুদ্ধবিরতির পক্ষে। সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইইয়াল জামিরও মনে করেন, হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করা সম্ভব নয়, আর দীর্ঘমেয়াদি এই লড়াইয়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের জীবনও বিপন্ন হবে। তার পছন্দ যুদ্ধবিরতি, যাতে জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা যায়। 

ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, গাজা শহরে হামলা চলার সময় কিছু জিম্মিকে মানবঢাল হিসেবে কেন্দ্রীয় এলাকায় সরিয়ে আনা হয়েছে। অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে জিম্মিদের স্বজনরা বিক্ষোভ করেছেন। তাদের অভিযোগ, এই পদক্ষেপ মানে সন্তানদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। 

বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ : ইসরায়েলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সামরিক কর্তাদের মধ্যে মতপার্থক্য নতুন নয়। তবে এবার পরিস্থিতি উল্টো- নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর, কারণ তার টিকে থাকা নির্ভর করছে অতিদক্ষিণপন্থি মিত্রদের সমর্থনের ওপর। 

অন্যদিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ প্যানেল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ শিগগির ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি পুনর্বিবেচনার হুমকি দিয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে সমর্থন করছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে হামাসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘সব বাজি শেষ- অবিলম্বে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে।’ তবে কূটনৈতিক মহলের ধারণা, এই অভিযানও যদি শেষ পর্যন্ত হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল করতে না পারে, তাহলে ওয়াশিংটন যুদ্ধবিরতি চাপিয়ে দেবে। সব মিলিয়ে, গাজা শহরে এই নতুন আক্রমণ ইসরায়েলের জন্য বিজয় নয়, বরং আরো রক্তপাত, ফিলিস্তিনিদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীরতর একাকিত্ব বয়ে আনবে।

মানসিক রোগে আক্রান্ত ইসরায়েলি সেনারা : ফিলিস্তিনের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের দিনটি। সেদিন ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলার জেরে গাজায় প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। যুদ্ধের সময় যেসব সেনা রিহ্যাব কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে (পিটিএসডি) ও অন্যান্য মানসিক রোগে ভুগছেন। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সার্বিকভাবে ২০ হাজার আহত সেনার ৪৫ শতাংশ শারীরিক আঘাত পেয়েছেন। ৩৫ শতাংশ পিটিএসডি ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছেন। প্রায় ২০ শতাংশ একইসঙ্গে শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। ২০ হাজার আহত সেনার মধ্যে ৬৪ শতাংশই রিজার্ভ সেনা। 

যুদ্ধ চলার সময় প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার আহত সেনাকে চিকিৎসা দেয় পুনর্বাসন দপ্তর। পাশাপাশি, আগের যুদ্ধে আহতদের মধ্য থেকেও অন্তত ৬০০টি অনুরোধ আসে গড়ে। গাজায় চলমান আগ্রাসন ও আগের যুদ্ধও মিলিয়ে পুনর্বাসন দপ্তর মোট ৮১ হাজার ৭০০ সেনাকে চিকিৎসা দিচ্ছে। তাদের ৩৮ শতাংশ (সংখ্যা ৩১ হাজার) মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। 

পূর্বাভাস মতে, ২০২৮ সাল নাগাদ ওই দপ্তরে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়াবে। তাদের অন্তত ৫০ শতাংশ পিটিএসডি ও অন্যান্য মানসিক রোগে ভুগবেন। পুনর্বাসন দপ্তরের বার্ষিক বাজেট প্রায় আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ করা আছে। 

গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারেক রহমান : গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ‘ইসরায়েলি গণহত্যা’ বন্ধে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

গতকাল বুধবার ভোরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি গাজায় চলমান সহিংসতার নিন্দা জানান। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নীতির ভিত্তিতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের দাবিও জানান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নীতিতে সুরক্ষিত পথেই ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ 

তারেক রহমান বলেন, বিশ্ব শক্তিগুলোকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি তিনি অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করার আহ্বানও জানান। 

তিনি দাবি করেন, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড ‘জাতিসংঘের গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তিবিষয়ক কনভেনশন (১৯৪৮)’-এর আইনি সংজ্ঞার সঙ্গে মিলে যায়। ওই আইনে আছে, একটি জাতি, নৃতাত্ত্বিক, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করার অভিপ্রায়কে গণহত্যা বলে।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

গাজায় যুদ্ধ শেষ, মধ্যপ্রাচ্য এখন স্বাভাবিক : ট্রাম্প
ধর্মের অপব্যবহার বাড়ছে
পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে বিএনপির কর্মী সভা
বাড়ছে লাশের মিছিল
চুয়াডাঙ্গায় বিষাক্ত চোলাই মদ খেয়ে ৬ জনের মৃত্য

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
মৌলভীবাজারে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের স্মারকলিপি
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close