সকালে রান্না অত:পর খাওয়া-দাওয়া শেষ করেই চুল বাছতে চলে যান তারা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত করেন চুল বাছাইয়ের কাজ। মাস শেষে যে টাকা পান তা দিয়ে চালান ছেলে-মেয়েদেরসহ নিজেদের হাত খরচ। গল্পে গল্পে সারেন জট বাঁধা চুল ছাড়ানোর কাজ। দুপুর গড়িয়ে গেলেই নগদ টাকা বুঝে নিয়ে ছুটেন বাড়ির দিকে। অনেকে আবার মাস শেষে বুঝে নেন প্রতিদিনের টাকা।
এদিকে কোনো প্রকার স্বাস্থ্য বিধি না মেনে নোংরা ও জটলা চুল ছাড়ানোর কাজ গ্রামের মহিলাদের জন্য কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় সচেতন মহল। বলছিলাম মাগুরার শালিখা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চুল বাছাই করতে আসা হত দরিদ্র মহিলাদের কথা।
শালিখা উপজেলার পুকুরিয়া, আনন্দনগর, ফুলবাড়ি, ছান্দড়া ও নাঘোষাসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দল বেধে পাটি বা প্লাস্টিকের লাল মাদুর বিছিয়ে জটলা বাঁধা চুলের গাট নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে চুল বাছাইয়ের কাজ করছেন মহিলারা। কেই চৌকিতে বসে চুল বাচ্ছেন, কেউবা পাটিতে বসে। কেউ আবার চুল ব্যবসায়ীর কাজ থেকে বুঝে নিচ্ছেন সারা দিনের কাজ। এমনি একজন মহিলা উপজেলা সদর আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের সলোকা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘সকালে রানা-বান্না করে বাড়ির গোছাই রেখে চুল বাছতে আসি। মাস শেষে যে টাকা পাই তা দিয়ে মনিগের খাতা-কলম কিনে দেই। নিজের হাত খরচ চালাই।’
সম্পা খাতুন বলেন, ‘প্রতিদিন এক কেজি চুল বাছি। এতে করে মাসে ২ হাজার টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়দের হাত খরচ দেই। পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য কাজে লাগাই।’
জানা যায়, বাছাই করা ওই চুলগুলো মাসান্তে ঢাকায় পাঠান চুল ব্যবসায়ীরা। সেই চুল আবার চড়া মূল্যে চায়না, স্পেন ও যুক্তেরাষ্ট্রে বিক্রি করেন তারা। এই চুল দিয়ে মাথার ক্যাপ বা কৃত্রিম দাড়ি-গোঁফ তৈরি করা হয়। এছাড়াও চুলের ক্যারাটিন দিয়ে বিভিন্ন প্রসাধনী তৈরি করা হয়।
এ ব্যাপারে শালিখা উপজেলার বৈখালী গ্রামের চুল ব্যবসায়ী ইকরামুল হোসেন বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে এই চুলের ব্যবসায় করি। নড়াইল, মাগুরা, যশোর, গোপালগঞ্জসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার হকারদের কাছ থেকে আমি লম্বা চুল কিনি। তারপর এগুলোর জটলা ছড়াতে বিভিন্ন গ্রামের মহিলাদের কাছে দেই। এতে করে একদিকে যেমন এলাকার অসহায় মহিলাদের কর্মসংস্থান হয়, অপরদিকে মাসান্তে আমার লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। বর্তমানে আমার অধীনে ১৫০ জন মহিলা কাজ করছে; যাদের প্রতি মাসে জন প্রতি ২ হাজার করে ৩ লক্ষ টাকা বেতন দেয়।’
কাজ করতে আসা অধিকাংশ মহিলা হত দরিদ্র পরিবারের বলেও জানান তিনি।
কেকে/ এমএ