প্রাচীনকালের অনেক নিদর্শন বর্তমানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। ওইগুলো কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও শোভা বিতরণ করে যাচ্ছে। আদিযুগে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন পেশার মানুষ বসবাস করতেন। তারা শাসন করে গেছেন এবং সময়ের প্রয়োজনে চাহিদা মোতাবেক তারা নির্মাণ করেছেন বিভিন্ন স্থাপনা। পরবর্তীতে ওই সব স্থাপনা প্রাচীনকালের নিদর্শন হিসেবে পরিচিতি বহন করে যাচ্ছে আজও। তাই কালের স্বাক্ষী হয়ে অত্র উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মল্লিক ছোয়াং চৌধুরী পাড়ার তৎকালীন নায়েবে উজির মুহাম্মদ খাঁন ছিদ্দীকি জামে মসজিদটি অন্যতম।
মসজিদটি উপজেলার প্রাচীনতম মসজিদ। মোঘল শাসনামলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদের সীমানা প্রাচীরের সহিত সংযুক্ত শীলালিপি অনুসারে উক্ত মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ১৬৬৬ খ্রি.। মসজিদটি আয়তকার-আকৃতির এবং উপরে বড় বড় তিনটি গম্বুজ রয়েছে। উত্তরে রয়েছে একটি দিঘী ও পূর্বে রয়েছে একটি পুকুর। একসাথে মসজিদে সাড়ে ৬শ থেকে ৭শ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
গত ২২ জুলাই মসজিদটি পরিদর্শন করতে গেলে দৃষ্টিগোচর হয় প্রাচীনকালের মোঘল শাসনামলের মসজিদটির সৌন্দর্য্য ও সাজানো-গোছানো পুরো মসজিদ চত্বর এলাকা। ওই সময় মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ চালাকালীন গ্রুপ কামান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপ হয়।
তিনি ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মোঘল শাসনামলে মুহাম্মদ খাঁন ছিদ্দীকি শায়েস্তা খাঁনের নায়েবে উজির ছিলেন (১৬৬৪-১৬৮৮ খ্রিঃ)। সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে (১৬৫৮-১৭০৭ খ্রিঃ) তার মামা শায়েস্তা খাঁন বাংলার সুবেদার হন। নায়েবে উজির মুহাম্মদ খাঁন ছিদ্দীকি এক পর্যায়ে ইসলাম ধর্ম প্রচারে লিপ্ত হয়ে পড়েন। ধ্যান-ধারণায় ও আধ্যাত্মিক শক্তিবলে নিজে বলীয়ান হয়ে ইসলাম ধর্ম প্রচারে নিজকে উৎসর্গ করেন।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আরো জানান, মহাস্থানগরের অধিপতির দায়িত্ব ত্যাগ করে তিনি চট্টগ্রামে চলে আসনে। ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে তিনি চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়ায় এসে মল্লিক ছোবহান এলাকায় চৌধুরী পাড়ায় বসতি স্থাপন করেন। পরে চৌধুরী পাড়ায় উল্লেখিত মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেন।
তিনি আরো বলেন, প্রায় বিগত ২০ বছর যাবৎ তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে তিনি মসজিদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সম্পন্ন করেছেন। তাতে সরকারী সাহায্য ছিল প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। বিশেষ করে মানুষের দান-দক্ষিণায় তিনি ব্যয়ভার নির্বাহ করে গেছেন। মসজিদের চতুর্দিকে সীমানা প্রাচীর এবং মসজিদের এক পার্শ্বে দ্বিতলভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে একান্ত প্রয়োজন—আজান দেয়ার জন্য একটি আজানখানা ও মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করার জন্য একটি খোলা মাঠ। এ কাজগুলো ব্যয়বহুল, তাই তিনি এ ব্যাপারে সরকার ও বিত্তবান ব্যক্তিদের শুভদৃষ্টি কামনা করেছেন।
কেকে/এজে