সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
প্রতিবেশী দেশের নীলনকশায় বস্ত্র খাত ধ্বংসের পাঁয়তারা
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: রোববার, ৬ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩১ এএম আপডেট: ০৬.০৭.২০২৫ ৪:৪৮ পিএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলার সংকট এবং টাকার অবমূল্যায়নের মতো একাধিক নীতিগত ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাত টেক্সটাইল শিল্প বর্তমানে গভীর সংকটে। এর মধ্যেই সরকার তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ, করপোরেট কর রেয়াত না বাড়ানো এবং দেশীয় সুতার ওপর কেজিপ্রতি ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট কর বসানোর মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা এই খাতকে কার্যত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। 

শনিবার গুলশানে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এসব সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি মানা না হলে তুলা খালাস বন্ধসহ কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন তারা। সরকারের নেওয়া নীতিগুলো দেশীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং এর পেছনে প্রতিবেশী দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলের ইন্ধন রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
 
শিল্প মালিকদের মতে, এসব চাপের ফলে বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাত প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে। তখন এটি প্রতিবেশী দেশের জন্য হয়ে যাবে ‘ওপেন ফিল্ড’! তাদের অভিযোগ, বিদেশি প্রতিযোগীদের স্বার্থ রক্ষায় দেশের অভ্যন্তরেই একটি মহল নেপথ্যে কাজ করছে। তাদের পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যার পরিণামে বাংলাদেশের এ গুরুত্বপূর্ণ খাতটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। 

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার নিজের কারখানায় তুলা থেকে উৎপাদিত সুতার চেয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি করতে কম খরচ হবে। তাহলে আমাদের নিয়মনীতি কি পার্শ্ববর্তী দেশকে সচ্ছল করার জন্য? তাদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য? সরকার কি নিরলসভাবে কাজ করছে ওদের স্বার্থ রক্ষার্থে; এ বিষয়টি একটু ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত কর্মসংস্থানকে নিশ্চিত না করে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ’

তিনি বলেন, ‘আমার নিজস্ব একটি টেক্সটাইল মিল আছে, যেখানে তৈরি সুতা ডেনিম ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে আমাকে বিদেশ থেকে বিশেষ করে ভারত থেকে সুতা আমদানি করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের কোনো টেক্সটাইল মিল টিকে থাকতে পারবে না। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, অবিলম্বে তুলা আমদানির ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর এবং অন্যান্য নতুন ট্যাক্স-ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক।’

সরকারের এ পদক্ষেপগুলো চলমান সংকটকে আরো গভীর করে তুলেছে, যা দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের জন্য এক অশনিসংকেত। এ সংকট নিরসনে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়। 

প্রথমত, তুলা আমদানির ওপর প্রযোজ্য ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এ ধরনের অগ্রিম কর এ খাতের উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, বস্ত্র উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান যেমন সুতা উৎপাদন, সুতা ডাইয়িং, ফিনিশিং, কোনিং, কাপড় তৈরি, কাপড় ডাইং ও প্রিন্টিং এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত মিল বা কোম্পানির শিল্প-ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ের ওপর আয়করের হার নির্ধারণে একক নীতির দাবি জানানো হয়েছে। তারা চান, এসব প্রতিষ্ঠানকে একই শিল্পখাত হিসেবে বিবেচনা করে আয়করের হার তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের মতো ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা এবং তা ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন।

তৃতীয়ত, দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত কটন সুতা এবং কৃত্রিম বা অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজিপ্রতি ধার্য নির্দিষ্ট কর ৫ টাকা থেকে অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে। 

টেক্সটাইল শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলেন, এ বর্ধিত কর দেশীয় স্পিনিং খাতের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ করের বোঝা স্থানীয় শিল্পকে প্রতিযোগিতার বাইরে ঠেলে দিবে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় মিল থেকে সুতা কেনা কমিয়ে দেবে, যার ফলে অনেক মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
 
খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত গ্রহণ ব্যতীত এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরই। তাদের মতে, সরকারের উচিত ছিল ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে টেক্সটাইল এবং তৈরি পোশাক খাতকে সহায়তা করা, কিন্তু সাম্প্রতিক তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর আরোপসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই শিল্প সহায়ক নয়।

বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দা বাংলাদেশের শিল্প, অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। টেক্সটাইল খাতের সমস্যাগুলো আরো প্রকট হয়েছে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট, টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঘাটতি এবং ব্যাংক সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে ১৭-১৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে। এ ছাড়া রফতানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার অস্বাভাবিক হ্রাস এবং প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বন্ড সুবিধায় শুল্কমুক্ত সুতা আমদানির ফলে দেশিয় টেক্সটাইল শিল্প আরো তীব্র চাপে পড়েছে। 

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে দেশের শিল্প কারখানায় তীব্র জ্বালানি সংকট, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের কারণে উৎপাদন খরচ ক্ষেত্রবিশেষে ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাস/জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, যা বিশেষ করে স্পিনিং খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যদিও দেশীয় মিলগুলো সরকারের সহযোগিতায় নীট গার্মেন্টে ১০০ শতাংশ এবং ওভেন গার্মেন্টে ৫৫-৬০ শতাংশ সুতা সরবরাহ করার সক্ষমতা অর্জন করেছে, তবে সাম্প্রতিক নীতিগুলো এই সক্ষমতাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।

বিটিএমএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেউদ জামান খান বলেন, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত নয়, মনে হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে দেশের টেক্সটাইল খাতকে ধ্বংস করার জন্য এ ধরনের নীতি নেওয়া হয়েছে।

বিটিএমএ পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সোমবারের মধ্যে যদি সরকার অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার না করে, তাহলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তার ফল হবে উল্টো। বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে গেছে, কেউ তুলা ছাড় করছে না। 

সরকার এই করকে সমন্বয়যোগ্য বলে দাবি করলেও বাস্তবে তা ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই বলে অভিযোগ করেন এই নেতা। তিনি বলেন, এই কর পরিশোধ করতে হলে আমাদের নতুন করে ব্যাংক ঋণ নিতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে শিল্প খাত টিকবে না। বর্তমানে টেক্সটাইল খাতে করপোরেট করহার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও নতুন অগ্রিম আয়করের কারণে কার্যকর করহার প্রায় ৫৯ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, নানাবিধ চাপের মুখে শিল্প খাত আজ বিপর্যস্ত। তার ওপর নতুন করে ট্যাক্স-ভ্যাট আরোপ শিল্পকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলো যখন টেক্সটাইল খাতে নানা সুবিধা দিচ্ছে, তখন আমাদের শিল্পে অতিরিক্ত কর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন প্রায় ৯০ শতাংশ কারখানা মালিক তাদের প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে আগ্রহী।

বিটিএমএর পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, দেশের বস্ত্রকল ধ্বংসের পরিকল্পনা নতুন নয়। এটি শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। এ ধরনের নানা ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, আমাদের এই শিল্প থাকবে না। আমরা মরে যাব, দেশ মরে যাবে। আমরা নগদ টাকা চায় না। গ্যাসের মূল্য কমান, এ জন্য টাকা লাগবে না। ১৮ শতাংশ চুরি হচ্ছে সেটা বন্ধ করেন। 

বিটিএমএ পরিচালক হোসেন মেহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে ব্যবসায়ীরা দেশটি থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে দুই শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হলো। ফলে ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলে আমদানি বাড়ানোর পথে যেতে পারবে না।

বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির ১ হাজার ৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং বস্ত্রকল রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের শীর্ষ রফতানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকশিল্পের সুতা ও কাপড়ের ৭০ শতাংশের জোগানদাতা হচ্ছে বস্ত্র খাত। ফলে বস্ত্রশিল্পের যে কোনো সমস্যা তৈরি হলে তা পোশাকশিল্পেও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  প্রতিবেশী দেশ   নীলনকশা   বস্ত্র খাত   ধ্বংসের পাঁয়তারা  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

গাজায় যুদ্ধ শেষ, মধ্যপ্রাচ্য এখন স্বাভাবিক : ট্রাম্প
ধর্মের অপব্যবহার বাড়ছে
পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে বিএনপির কর্মী সভা
বাড়ছে লাশের মিছিল
চুয়াডাঙ্গায় বিষাক্ত চোলাই মদ খেয়ে ৬ জনের মৃত্য

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
মৌলভীবাজারে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের স্মারকলিপি
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close