মাগুরায় ৩৫ গ্রামের লিচু চাষি বিপাকে
লিটন ঘোষ জয়, মাগুরা
🕐 ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ, জুন ০৯, ২০২০
মাগুরার লিচুগ্রাম খ্যাত সদর উপজেলার হাজরাপুর, ইছাখাদা, খালিমপুর, মিঠাপুর, হাজিপুরসহ অন্তত ৩৫ গ্রামের লিচু চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর ফলন ভালো। কিন্তু ভরা মৌসুম শুরু হলে করোনা ও আম্পান ঝড়ের প্রভাবে জেলায় লিচুতে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। সদর উপজেলার হাজীপুর ও রাঘবদাইড় ইউনিয়নের গাঙ্গুলিয়া, মির্জাপুর, পাকাকাঞ্চনপুর, বীরপুর, রাউতড়া, বামনপুর, আলমখালি, বেরইল, লক্ষ্মীপুর, আলাইপুর, নড়িহাটি গ্রামের চাষিরা গত ২ দশক ধরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই লিচু চাষ করে আসছেন।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে জেলায় ৫৮০ হেক্টর জমিতে লিচু হয়েছে। তার মধ্যে সদরে ৪৬৪ হেক্টর, শ্রীপুরে ৮০ হেক্টর, শালিখায় ২০ ও মহম্মদপুরে ২০ হেক্টর জমিতে লিচু হয়েছে। যার ৮০ শতাংশ চাষ হয়েছে সদর উপজেলা এলাকায়। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলায় ৫৮ হেক্টর জমির লিচু নষ্ট হয়েছে।
মে মাসের শুরুতে মাগুরার গাছে গাছে শোভা পায় লাল রঙের পাকা লিচু। মাগুরা ওপর দিয়ে ঝিনাইদহ হয়ে যারা চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলায় যান জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে ইছাখাদা পৌঁছলেই তারা রাস্তার দু’ধারে দেখতে পাওয়া যায় সারি সারি লিচু বাগানের এ মনোরম দৃশ্য।
লিচু গ্রামখ্যাত এসব এলাকার দেড় হাজার বাগান থেকে এবার প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার লিচুর কেনাবেচা হবে বলে চাষিরা জানিয়েছিলেন লিচু চাষিরা। কিন্তু করোনা ও ঝড়ের প্রভাবে বাইরে থেকে লিচু ব্যাপারীরা তুলনামূলক কম আসায় চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। একেতো করোনার প্রভাব আবার আম্পান ঝড়ে লিচু বাগানে ক্ষতি হওয়ায় অনেক চাষির পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এবার লিচু বাগানগুলো ঘুরে দেখা গেছে লিচু ব্যাপারীদের আনাগোনা খুবই কম। অনেক আগে যেসব ব্যাপারী বাগান কিনে ছিল শুধু তারা লিচু সংগ্রহ করছেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর লিচু ব্যাপারী শেখ রাসেল জানান, করোনার প্রভাবে এবার লিচুর চাহিদা কম থাকায় আমাদের সংগ্রহও কম। যানবাহন ও শ্রমিক খরচ বাদে লিচু বিক্রি করে যে অর্থ থাকে তাতে আমাদের লাভ কম। তাই লিচুর ব্যবসা অনেকটা ভাটা পড়েছে।
ইছাখাদার লিচুচাষি রাজু বিশ্বাসসহ অনেকে জানান- একসময় এ এলাকার কৃষকরা ধান-পাটসহ প্রচলিত ফসল চাষে অভ্যস্ত ছিল। যা থেকে তাদের উৎপাদন খরচ উঠত না। যে কারণে তারা পেঁপে পেয়ারার পাশাপাশি লিচু চাষ শুরু করে। পরবর্তীতে লিচু চাষ অপেক্ষাকৃত লাভজনক হওয়ায় গোটা এলাকার কৃষকরা লিচু চাষ শুরু করে। বর্তমানে হাজরাপুর, হাজিপুর, রাঘব দাইড় এ তিন ইউনিয়নের ৩৫ গ্রামের কৃষকরা শুধু লিচুর চাষ করছে। কিন্তু এবার করোনা ও ঝড়ের প্রভাবের কারণে আমরা বিপাকে পড়েছি। আমার নিজের ১৫টি বাগান ছিল। গত বছর এ বাগান থেকে ৬০-৭০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এবার করোনা প্রভাবে বাইরে থেকে লিচু ব্যাপারীরা না আসায় আমাদের ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। প্রতিদিন বাগানে ১২-১৪ জন শ্রমিক লিচু সংগ্রহের কাজ করে। জনপ্রতি প্রত্যেককে ৪০০-৫০০ টাকা দিতে হয়। তাই এবার লাভ তো দূরের কথা পুঁজি বাঁচানোয় কষ্ট।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জাহিদুল আমিন জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় লিচু চাষ ভালো হয়েছে। জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ লিচুর চাষ হয়েছে সদর উপজেলায়। আমরা লিচুর ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গে লিচু চাষিদের নানা পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি লিচু পরিচর্চার নানাবিধ পরামর্শ দিয়েছি চাষিদের। গোটা জেলায় প্রায় দেড় হাজার লিচু বাগান রয়েছে। যেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু চাষ করে উল্লেখিত গ্রামগুলোর প্রায় সহস্রাধিক কৃষক পরিবার আত্মনির্ভরতার পথ খুঁজে পেয়েছে। কৃষি বিভাগ অব্যাহতভাবে নিয়মিত খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের সুবিধা এসব চাষিকে দিচ্ছে। এবার ঝড়ে লিচু গাছের কিছু অংশ ক্ষতি হয়েছে। তবে লিচুর ভালো দাম পেলে চাষিরা উপকৃত হবেন।