ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ড্রাগন চাষে সফল চম্পা বেগম

অনলাইন ডেস্ক
🕐 ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২৩

ড্রাগন চাষে সফল চম্পা বেগম

‘টাকার জন্য যখন ছেলের চিকিৎসা ঠিকমতো করাতে পারিনি; তখন বুঝেছি অভাব কী! এখন খাওয়া, পরা এবং ছেলের চিকিৎসা; কোনো কিছুর জন্যই কারো কাছে হাত পাতা লাগে না। ড্রাগন ক্ষেত আমার জীবন বদলে দিয়েছে।’ এভাবেই জীবন বদলের গল্প বললেন সংগ্রামী নারী উদ্যোক্তা চম্পা বেগম।

 

সফল নারী উদ্যোক্তা চম্পা বেগম যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের বানিয়ালী গ্রামের এনামুল হোসেনের স্ত্রী। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে এরই মধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। এখন তিনি ১ বিঘা জমিতে (৩৩ শতক) ড্রাগন চাষ করছেন।

সংগ্রামী জীবনের গল্প শোনাতে গিয়ে চম্পা বেগম তুলে ধরেন অতীত ইতিহাস। কয়েক বছর আগে স্বামী এনামুল সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পরিশ্রম করার ক্ষমতা হারান। সংসারের ভার এসে পড়ে চম্পা বেগমের কাঁধে। সংসার চালাতে গরু পালন, বেগুন ও শিম চাষসহ কৃষি কাজ শুরু করেন। তাতেও খুব একটা সুবিধা হচ্ছিল না। স্বামী অসুস্থ; তার ওপর একমাত্র ছেলে ইয়াসিনও (১৮) অসুস্থ। নিয়মিত তাকে রক্তের প্লাজমা দিতে হয়। স্বামী, সন্তানের চিকিৎসা ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এভাবেই খেয়ে-না খেয়ে চলছিল চম্পার সংসার।

২০২০ সালের কথা। ছেলের জন্য বাজারে ড্রাগন ফল কিনতে যান চম্পা। ৫০০ টাকা কেজি দাম শুনে মনে ভাবনার উদয় হয়, ‘এ ফল চাষ করলে কেমন হয়?’ সেই ভাবনা থেকে দুটি চারা সংগ্রহ করে বাড়িতে লাগান। গাছ বড় হচ্ছে দেখে যশোরের হর্টিকালচার সেন্টার থেকে আরও ২০টি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন। এরপর দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ১৬ শতক জমিতে ড্রাগন চাষ করার পরিকল্পনা করেন। কালীগঞ্জ থেকে চারা সংগ্রহ করে ক্ষেত গড়ে তোলেন। পরিবার ও এলাকাবাসীর বিরূপ মনোভাবের মধ্যেই কঠোর পরিশ্রমে ক্ষেত পরিচর্যা শুরু করেন তিনি।

চম্পা বেগম জানান, প্রথমে ১৬ শতক জমিতে ড্রাগন ক্ষেত তৈরি করতে পিলার, রড, টায়ার, চারা ইত্যাদি মিলে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়। কোনোরকম রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়াই জৈব পদ্ধতিতে শুরু করেন বাগান পরিচর্যা। পরিচর্যা করে গাছ বড় করার পর প্রথম বছরে অল্প কিছু ফল ধরে। এরপর গত বছর ক্ষেত থেকে আড়াই লক্ষাধিক টাকার ড্রাগন বিক্রি করেছেন। খরচ উঠে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন। এবছরও লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রি করেছেন। একই পরিমাণ ফল ক্ষেতে আছে। এছাড়া নতুন ফুল ও ফল ধরেছে। গত বছর লাভের মুখ দেখার পর আরও ১৭ শতক জমিতে নতুন করে ড্রাগন ক্ষেত করছেন চম্পা বেগম।

ড্রাগন চাষে সাফল্য পাওয়ায় আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন ক্ষেত দেখতে আসেন। অনেকে উদ্বুদ্ধ হন এ ফল চাষে। এদের মধ্যে বানিয়ালী গ্রামের ফুলিমা বেগম একজন। তিনি বলেন, ‘চম্পা আপা যদি পারেন, আমি কেন পারবো না? আপাকে দেখে আমিও ড্রাগনের চাষ শুরু করেছি। আমি ২০০ চারা রোপণ করেছি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ফল পাবো।’

কৃষি বিভাগ জানায়, যশোরের মাটি ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। এটি ক্যাকটাস জাতীয় মেক্সিকান ফল। এ ফল বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী। এটি খুব শৌখিন একটি ফসল; তাই দেশে এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। একটি গাছ পরিপক্ব হতে এক-দুই বছর সময় লাগে। পরিপক্ব একটি গাছে ২৫-৩০টি ড্রাগন ফল ধরে। প্রতি বছর জুন-নভেম্বর মাস ফল পাওয়া যায়। প্রতি কেজি স্বাভাবিক ফলের বর্তমান বাজারমূল্য ২০০-৩০০ টাকা। অর্গানিক পদ্ধতির ফলের দাম ৩০০-৪০০ টাকা।

চম্পা বেগমের ড্রাগন ক্ষেত অনেক বার পরিদর্শন করেছেন হৈবতপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান আতার। তিনি বলেন, ‘চম্পা বেগম একজন সংগ্রামী নারী। তিনি এ এলাকায় প্রথম ড্রাগন ক্ষেত করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। এ ফল দিয়েই তার ভাগ্যবদল হয়েছে। আশপাশের এলাকার অনেকেই তাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।’

 

 
Electronic Paper