ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

খানসামায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ালো ভুট্টার চাষ

ফারুক আহম্মেদ, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
🕐 ৬:৪৩ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২৪

খানসামায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ালো ভুট্টার চাষ

খানসামায় চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষে বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধেছেন কৃষকরা। ধান চাষের পাশাপাশি ভুট্টা চাষে স্বল্প খরচ এবং অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষক ঝুঁকছেন ভুট্টা চাষে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছয়ে বিঘাপ্রতি ফলন পাচ্ছেন ৬৫ থেকে ৭০ মণ।

 

মাঠ থেকে ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন খানসামার কৃষকেরা। বাজারে এখন ভুট্টার দামও ভালো পাচ্ছেন তারা । শুক্রবার (১৭ মে) কাঁচা ভুট্টা প্রতি মণ ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা থেকে ১১৫০ টাকা। আর শুকনা ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ভুট্টার ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এ উপজেলায় ক্রমাগত বাড়ছে ভুট্টার চাষ ।

উপজেলার চাকিনিয়া গ্রামের কৃষক সহিদুল ইসলাম বলেন , এবার শীতের প্রকোপ বেশি থাকা, সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত এবং রৌদ্রের প্রখরতা তেমন না থাকায় ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। মোচাগুলো বড় হয়েছে। ভুট্টার দানা বড় ও পরিপক্ক হওয়ায় বেড়েছে ওজন।

সরেজমিনে উপজেলার গোয়ালডিহি, কাচিনীয়া, খামার পাড়া, আঙ্গার পাড়া, হোসেনপুর, টংগুয়া,ধর্মপুর, দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায় মাঠজুড়ে বিস্তীর্ণ ভুট্টার খেত। সাধারণত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ভূট্টার বীজ বপন করা হয়। এপ্রিলের শেষ ও মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এই ভুট্টা ক্ষেত থেকে উত্তোলন শুরু হয়। কিছু কিছু ক্ষেতে গাছের আগা ও পাতা ছেঁটে ফেলা হয়েছে, যেন ভুট্টার মোচায় রোদের তাপ লাগতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেতে গাছ থেকে ভূট্টার মোচা তোলা ও সংগ্রহকাজে উপজেলা জুড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-
কৃষাণীরা ।

খানসামা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে অধিক লাভের ফলে প্রতি বছর ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২০২২-২৩ মৌসুমে এই উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে ভুট্টা চাষ হয়েছে ৮২৮৫ হেক্টর জমিতে। এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ভুট্টা চাষ হয়েছে ৮৪৯০ হেক্টর। এরমধ্যে ১৬৬০ হেক্টর জমিতে পপকর্ণ ভুট্টা ও ৬৮৩০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ভুট্টার চাষ হয়েছে।

উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের ভুট্টা চাষী আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও আগাম তাজমহল , পুনর্ভবা ৩৫৫৫, কাবেরি-৫ জাতের ৫ বিঘা ভুট্টা চাষ করেছি। আগাম ভুট্টার চাহিদা বেশি ও দামও ভালো পাওয়া যায়। আমার প্রতি বিঘায় ভুট্টা চাষে জমি তৈরি, সার, বীজ, শ্রমিকের মজুরি ও সেচসহ সর্বমোট ২৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি, যদি দাম ভালো থাকে তাহলে, প্রতি বিঘা ৬০-৭০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারব।

হাসিমপুর গ্রামের পপকর্ণ ভুট্টা চাষী মশিউর রহমান বলেন, ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় এবছরও এক বিঘা জমিতে পপকর্ণ ভুট্টা চাষ করেছি। তবে এখন ভুট্টার দাম একটু কম তবুও বিঘায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাভ
হবে। এতে লাভের পরিমাণ কম হলেও ভুট্টা চাষে লোকসান হয় না।

ভুট্টা ব্যবসায়ী হাসানুর রহমান, ওবায়দুর রহমান, ও হেকমত আলী বলেন, প্রতি কেজি হাইব্রিড কাঁচা ভুট্টা ২২-২৪ টাকা কেজি দরে কিনে শুকানোর পর ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন কোম্পানি ও এজেন্টের কাছে বিক্রি করি ।এতে করে এই ভুট্টার সিজনে আমরাও লাভবান হই।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা যদুনাথ রায় বলেন, ভূট্টা একটি লাভজনক ফসল। তাছাড়াও কম সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা ভূট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এইজন্য কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান কাজ করছি। সেই সাথে ভূট্টার ক্ষতিকর বালাই সম্পর্কে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছি এতে কৃষকরা ভালো ফলন ও দাম পাচ্ছে।

উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষি অফিসার হাবিবা আক্তার বলেন, এবছর উপজেলায় ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টার রোগবালাই কম এবং উৎপাদন ও লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা আবাদের দিকে বেশি ঝুকছেন। পোল্ট্রি ফিড ব্যতীত ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার বাড়ালে এই ফসলটির স্থায়িত্ব এবং চাষাবাদ আরো অনেকাংশে বেড়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

 
Electronic Paper