জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বক্তব্য ততই আগ্রাসী হয়ে উঠছে। বিশেষ করে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে প্রকাশ্যেই বক্তব্য দিচ্ছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। সম্প্রতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দলীয় এক সমাবেশে বলেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়... যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেফতার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।’
এর আগে গণভোটের দাবিতে সরকারের উদ্দেশ্যে আগ্রাসী বক্তব্য দেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেন, ‘সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে, তাহলে আঙুল বাঁকা করব। কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই। সুতরাং যা বোঝাতে চাই বুঝে নিন। নো হাংকি পাংকি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতার পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করছে জামায়াত। যদিও দলটি চারদলীয় জোট সরকারের সময় ক্ষমতার অংশীদার ছিল, কিন্তু তখন বিএনপিই ছিল ক্ষমতার কেন্দ্রে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নানা স্তরে জামায়াতপন্থিরা রয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনেও জামায়াতপন্থিরা ভালো অবস্থান নিয়েছে। সব মিলিয়ে দলটি নিজেদের প্রবল ক্ষমতায়িত বোধ করছে। আর এরই প্রতিফলন ঘটছে তাদের বিভিন্ন নেতার বক্তব্যে। তাদের আগ্রাসী বক্তব্য কখনো কখনো সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তারা বলছেন, জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতাদের এমন বেপরোয়া বক্তব্য নির্বাচনি পরিবেশকে শঙ্কায় ফেলে দেবে। হুমকিমূলক বক্তব্যে মাঠ প্রশাসনে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাচনি দায়িত্বশীল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া আসনে জামায়াত প্রার্থী ও দলটির চট্টগ্রামের প্রভাবশালী নেতা শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনে জয়লাভ করতে হলে প্রশাসনকে, প্রশাসনের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। পুলিশকে, ওসিকে আমাদের পেছনে ছুটে আসতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে হয় না। প্রশাসনকে আমাদের কথায় উঠতে, বসতে হবে, মামলা দায়ের করবে, গ্রেফতার করবে।’ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারকে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক, নুরুল আমিন (নগরের সেক্রেটারি) ভাইয়ের ফটিকছড়িতে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশকে আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম, তা সকালবেলায় জেনে নেবেন আর আপনাকে প্রটোকল দেবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবার জামায়াতকে ক্ষমতায় নিতে আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তবে শাহজাহান চৌধুরীর এ বক্তব্যের সময় তিনি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না।
এদিকে শাহজাহান চৌধুরীর এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতের নেতা শাহাজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় তারা নতুন করে আরেকটি ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। এমন বক্তব্যের জন্য আমরা তাকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’
জামায়াত নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুও। তিনি বলেন, ‘থানা পুলিশ, ডিসি-এসপি বা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে থাকলেই যদি নির্বাচন কন্ট্রোলে চলে যায়, তাহলে আর মানুষের দরকার কী? এভাবে হলে জনগণের ভোটের অধিকার কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? অতীতের এ খারাপ চর্চা দূর করতে হবে। আমরা এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ ধরনের প্রচেষ্টা নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করার লক্ষণ।’ এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুও
এদিকে নিজের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শাহজাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি যে বক্তব্যটা রেখেছি সেটা হলো- আমাদের প্রশাসন দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে কাজ করবে এবং দেশের বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের অধীনে দেশের স্বার্থে পুলিশদের কাজ করতে হবে আমি সেটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যারা আমার এই খণ্ডিত বক্তব্যকে শুধু জামায় তে ইসলামীকে চিহ্নিত করছেন আমার মনে হয় তারা ফ্যাসিস্টদের উসকানি দিচ্ছেন।’
কেকে/এআর