টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সেনেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে। এর ফলে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ক্রমেই কমে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে নির্মিত বিদ্যালয়ের দুই কক্ষবিশিষ্ট ভবনটি এখন এতটাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যে, সম্প্রতি ক্লাস চলাকালে ছাদের ফ্যান খুলে পড়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আহত হন।
ভবনের দেয়ালজুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে, ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে। ফলে, ভবনটি এখন কার্যত পরিত্যক্ত। আপাতত পুরনো একটি তিন কক্ষের টিনের চালা ঘরে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সেটিও ভগ্নদশায়।
বৈরাণ নদের তীরে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি নদীভাঙনেরও হুমকিতে রয়েছে। ঘরের বারান্দার খুঁটি ভেঙে গেছে, পাশের একটি বড় আমড়া গাছ মরে আছে—যা যেকোনো সময় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৮-১০ জন। সেখানে কেবল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক উপস্থিত ছিলেন।
ফজলুল হক জানান, বিদ্যালয়ে মোট পাঁচটি শিক্ষক পদ থাকলেও প্রধান শিক্ষক নেই। আমি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। দুইজন শিক্ষিকা মাতৃত্বকালীন সমস্যায় ছুটিতে, একজন শিক্ষকের স্ত্রীর পরিক্ষার কারণে অনুপস্থিত। পিয়ন বর্তমানে একটি মামলায় জেলে আছেন। ফলে, একাই সব সামলাতে হচ্ছে পাঠদান, অফিসের কাজ, এমনকি টিকা নিবন্ধনের দায়িত্বও পালন করছি। এতে নিয়মিত ক্লাস ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এখানে যোগ দিয়েছি। ভবনগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। বিদ্যালয়ে ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী থাকলেও নিয়মিত উপস্থিত থাকে ২০-২৫ জন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গোপালপুর উপজেলা শাখার সভাপতি বিলকিস সুলতানা বলেন, ‘ফ্যান পড়ে শিক্ষক আহত হওয়ার ঘটনায় আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ব্যবহার না করতে এবং নতুন ভবনের জন্য লিখিত আবেদন করতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছি। শিক্ষক অনুপস্থিতির বিষয়ে আমি জানি না।’
গোপালপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার সব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। সেনেরচর বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুপস্থিতির বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হবে।’
কেকে/এমএ