রোববার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫,
৩ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: শিক্ষকদের থালা-বাটি হাতে ‘ভূখা মিছিল’ আজ      যুদ্ধবিরতিতে সম্মত পাকিস্তান-আফগানিস্তান      ষড়যন্ত্রে দগ্ধ দেশ      কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভয়াবহ আগুন      শাহজালালে ফ্লাইট চলাচল শুরু      আর্জেন্টিনা দলের আঞ্চলিক স্পন্সর হলো ওয়ালটন      সৌদির ফ্লাইট সিলেটে, ঢাকাগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ নয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: রোববার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:০৭ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে মশাল প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করেছে রংপুর বিভাগের হাজার হাজার মানুষ। ১৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে ১০৫ কিলোমিটারজুড়ে একযোগে মশাল প্রজ্বলন করা হয়। 

প্রশ্ন ওঠে কেন এ প্রকল্প এখনো বাস্তবায়িতের পথে হাঁটছে না? কাদের স্বার্থে এটি বারবার বিলম্বিত হচ্ছে? নদীপারের মানুষ কি শুধু প্রতিশ্রুতির শিকার হয়েই বেঁচে থাকবে? তিস্তা ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন নদী। এটি ভারতের সিকিম থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রংপুর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। 

১৯৯৮ সালে ভারতের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অংশ হিসেবে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মিত হওয়ার পর তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহ পরিবর্তিত হয়। শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের অংশে তিস্তায় পানিপ্রবাহ থাকে না বললেই চলে। আবার বর্ষায় গজলডোবা ব্যারাজ থেকে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা ও ভাঙন। এ অস্থিতিশীল প্রবাহ তিস্তাপারের মানুষকে প্রতিবছরই দুর্ভোগে ফেলছে। একদিকে ফসল ফলাতে পোহাতে হচ্ছে জটিলতা। 

অন্যদিকে নদীভাঙনের ফলে হারাতে হচ্ছে ভূমি। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে নানা সময়ে আলোচনা চললেও সেই আলোচনা আলোর মুখ দেখেনি। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল। কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতার কারণে শেষ মুহূর্তে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়নি। নরেন্দ্র মোদিও বারবার তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। 

বর্তমানে বিশ্বে আনুমানিক ২৬০টি আন্তর্জাতিক নদী রয়েছে এবং বিশ্বের ৪০ ভাগ লোক এ নদীগুলোর অববাহিকায় বসবাস করে। প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে পানি নিয়ে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ এবং যুদ্ধবিগ্রহ লেগে থাকত। এমনকি খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ সালে সুমেরীয় শহর লাগাশ এবং উম্মার মধ্যে টাইগ্রিস নদীর পানি নিয়ে বিরোধ বাধলে তার নিষ্পত্তি হয় একটি চুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দীর্ঘকালের মিত্রতা থাকলেও পানি চুক্তি আর হয় না। 

ভারতের আধিপত্যশীল বন্ধুত্ব শুধু সুবিধা নিতেই অভ্যস্ত, দিতে নয় এমনকি ন্যায্য হিস্যাও দিতে অপরাগ ভারত। ফলে বাংলাদেশের তিস্তাপারের মানুষকে বাঁচাতে হাঁটতে হয় ভিন্ন পথে, নিতে হয় তিস্তা মহাপরিকল্পনা। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও তা এগোয় না। উত্তর বঙ্গের মানুষকে প্রতিশ্রুতির ডামাডোলে এভাবেই দীর্ঘকাল বঞ্চিত করে রেখেছে যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ফলে এবার ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও’ বলে তিস্তাপারের মানুষজন জেগে উঠেছে। 

তাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ পরিকল্পনার কাজ শুরু হওয়ার কথা ২০২৬-এর জানুয়ারি মাসে, যার মূল লক্ষ্য তিস্তা অববাহিকার টেকসই উন্নয়ন করা। এ প্রকল্প বর্ষাকালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীভাঙন রোধ এবং শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে। উত্তর বঙ্গের মানুষের দাবি এটি দ্রুত কার্যকর করা হোক। আশ্বাসের বাণী তারা আর শুনতে চায় না। তবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। তিস্তা ও যমুনার সংযোগস্থলে তিস্তা নদী প্রশস্ততা মাত্র ৭০০ মিটার, অথচ উজানে এ নদীর প্রশস্ততা স্থানভেদে পাঁচ কিলোমিটার। 

নদীর সংযোগস্থলটি অস্বাভাবিকভাবে সরু হওয়ার কারণেও উজানে বন্যার পানি সিঞ্চনে বাধাগ্রস্ত হয় এবং বন্যার স্থায়িত্ব বাড়ে। খননের মাধ্যমে এ সংযোগস্থলের প্রশস্ততা আরো বাড়ানো জরুরি হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক নিয়ম উপেক্ষা করে নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখেই শুধু এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। 

একইসঙ্গে ভারতের সঙ্গে পানি ডিপ্লোম্যাসিকে সব ডিল্পোম্যাসির কেন্দ্রে রেখে সুসম্পর্ক গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করতে হবে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে যদি আন্তঃনদীর ন্যায্য হিস্যা না পাওয়া যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে এবং সেই লক্ষ্যেই জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ আইন (১৯৯৭) অনুস্বাক্ষর করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাতে হবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনায় সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে তিস্তাপারের মানুষের ভোগান্তির পুনরাবৃত্তিই ঘটবে।

কেকে/ এমএস
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

২১ ঘণ্টা পরও বিমানবন্দরের ধ্বংসস্তূপ থেকে বের হচ্ছে ধোঁয়া
হলুদ শাড়িতে উত্তাপ ছড়ালেন জয়া আহসান
আধুনিক প্রযুক্তির দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করল ইরান
দেশে ফিরল উদ্ধার হওয়া ১২ বাংলাদেশি নাবিক
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ইসরায়েলের হামলা, একই পরিবারের নিহত ১১

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে মৌসুমি পাখির কাছে বিএনপির ঘাঁটি ছেড়ে দেয়া হবে না
বাঞ্ছারামপুরে স্কুল কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের
শ্রীমঙ্গলে বেড়েছে চুরি-ছিনতাই, আতঙ্কে বাসিন্দারা
ভোট টানতে বিশেষ কৌশলে জামায়াত
কাউনিয়ায় শাশুড়িকে ধর্ষণের অভিযোগে জামাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close