কথিত সমন্বয়ক পরিচয়ে বৈষম্যবিরোধী মামলা থেকে টাকার বিনিময়ে মামলা উঠিয়ে দেওয়ার প্রলোভন, কিশোর গ্যাং বাহিনী গড়ে তুলে সন্ত্রাসী কায়দায় মারধর-চাঁদাবাজি, মব সৃষ্টির মাধ্যমে অনৈতিক অর্থ উপার্জনই ছিল ঢাকার উত্তরায় সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া আসাদুর রহমান আকাশসহ (২৪) চক্রের সদস্যদের মূল পেশা।
শনিবার (৪ অক্টোবর) ভোরে উত্তরা আর্মি ক্যাম্প কর্তৃক রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর আকাশসহ তার অপর দুই সহযোগী মো. ফরিদ উদ্দিন (২৬) ও মো. রবিন (২৫) সেনাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য স্বীকার করেছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে উত্তরা আর্মি ক্যাম্প জানায়, গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসী চক্রের প্রধান আসাদুর রহমান আকাশসহ তার সহযোগীরা ২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে উত্তরা এলাকার বিভিন্ন থানায় মামলা বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে বিভিন্ন বেআইনি কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের উপর হামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে টাকা আদায় এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও চক্রটির বিরুদ্ধে নিরপরাধ ব্যক্তিদের এলোপাতাড়ি মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, নিজেকে কথিত ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে আসাদুর রহমান আকাশ উত্তরা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই কিশোর গ্যাং বাহিনী পরিচালনা করে আসছিল। বিত্তশালী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন বাজারই ছিল চক্রটির মূল টার্গেট। পরে পরিকল্পিতভাবে মব সৃষ্টির মাধ্যমে চাঁদাবাজিই ছিল তাদের মূল কাজ। আর এ কাজে জড়িত মেহেদি, নয়ন, ইকবাল, তৌহিদ, সাকিব, আরিফসহ বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। এছাড়াও চক্রটির সাথে কথিত নামধারী গুটিকয়েক গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যোগসাজশের প্রমাণও পাওয়া গেছে। আকাশের নেতৃত্বে পরিচালিত সন্ত্রাসী বাহিনীটি মব সৃষ্টির পর সংবাদ প্রকাশের নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে অনৈতিক অর্থ দাবিই ছিল চক্রটির বিশেষ কৌশল।
আসাদুর রহমান আকাশ
এ বিষয়ে উত্তরা আর্মি ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ জানায়, জুলাই গণঅভ্যূত্থানের পর থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এবং সমন্বয়ক পরিচয়ের আড়ালে আকাশের গড়ে তোলা চক্রের ব্যাপক চাঁদাবাজি প্রমাণ ও যোগসূত্রের মিল পাওয়া গেছে। ওই চক্রের দ্বারা সংগঠিত এমন একটি ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে আকাশ ও তার সহযোগীরা মিলে এক সাংবাদিককে গলা টিপে ধরা এবং একের পর এক ঘুষি-লাথি মারার দৃশ্য ফুটেজে ক্যাপচার হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আকাশসহ চক্রের অন্য গ্রেফতার সদস্যরা বিষয়টি স্বীকার করেছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ওই ফুটেজে চক্রের অন্য সদস্যদের মারধর ও ভিডিও করতে দেখা গেছে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, কথিত সমন্বয়ক পরিচয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত চাঁদাবাজ ও কিশোর গ্যাংচক্রের মূলহোতা আসাদুর রহমান আকাশ ও তার অপর দুই সহযোগীকে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে উত্তরা আর্মি ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, শনিবার ভোরে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা আকাশসহ তার অপর দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে উত্তরা আর্মি ক্যাম্প। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিকালে রাজধানীর উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের রেড চিকেন রেস্টুরেন্টের ভেতর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার রিপোর্টার জাহাঙ্গীর কবির, সকালের সময়ের জোবায়ের আহমেদ ও বিজয় টেলিভিশনের সিটি রিপোর্টার এমএ আজাদের ওপর আকাশের নেতৃত্বে হামলা চালায় ২০-২৫ জনের কিশোরগ্যাং বাহিনী। এ নিয়ে নিউজ টোয়েন্টিফোর, খোলা কাগজ, এশিয়ান টিভি, দৈনিক কালের কণ্ঠ, প্রতিদিনের সংবাদ, দৈনিক আজকের পত্রিকাসহ একাধিক প্রথম সারির গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় আসাদুর রহমান ওরফে আকাশসহ অন্যদের নামে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুর রহিম মোল্লা।