আজ বিশ্ব বাঁশ দিবস। বাঁশ দিবস ২০২৫’-এর থিম নির্ধারিত হয়েছে ‘নেক্সট জেনারেশন ব্যাম্বো: সলিউশন, ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজাইন’।
পরিতাপের বিষয় আজ বিশ্ব বাঁশ দিবস, এর প্রতিবাদ্য বিষয়, কেন এই দিবস- সে সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই বৃহত্তর কুমিল্লার সবচেয়ে বড় বাঁশের হাট ব্রাহ্মণবাড়িরয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মওলাগঞ্জ বাজারের বাঁশের হাটে। অন্যদিকে, খোদ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাই জানেন না, আজ বিশ্ব বাঁশ দিবস।
প্রায় ১০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে সদর পৌর এলাকার অদূরে তিতাস নদীর অববাহিকায় ঢোল ভাঙা নদীর তীরে গড়ে ওঠা মওলাগঞ্জ বাজারের বাঁশের হাট। স্থানীয়দের কাছে পরিচিত বড়বাজার নামে। এই বাজারটি আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মানুষের প্রাণকেন্দ্র। এখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রকারের বাঁশ। বিশেষ করে মুলি ও বরাক বাঁশ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য এ বাজারের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। বছরর প্রতিদিন এখানে প্রায় ২ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রকার বাঁশ বিক্রি হয়।
তবে, রোববার সাপ্তাহিক হাটের দিন বিক্রি বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
অর্থনৈতিকভাবে, বাঁশ একটি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। নির্মাণসামগ্রী, আসবাবপত্র, কাগজ, বস্ত্রশিল্প থেকে শুরু করে বাদ্যযন্ত্র ও নানা হস্তশিল্প তৈরিতে বাঁশের ব্যবহার অপরিসীম।
এখানে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা, উত্তরে নরসিংদী জেলার রায়পুরা, কুমিল্লার হোমনা, মুরাদনগর, তিতাস, নবীনগরের মানুষ আসে বাঁশ কিনতে।
বাঁশ কিনে এলাকা থেকে নৌকা, ট্রলার ও অন্য যানবাহনযোগে নিয়ে যায়। এখানে সারা বছর মেঘনার শাখা নদী তিতাস নদীর তীর ঘেঁষে বসা অর্ধশতাধিক দোকানেই বাঁশ ও মুলি বেচাকেনা হয়ে থাকে। বাঁশ ও মুলি এলাকাবাসীর বাসস্থান নির্মাণের অন্যতম সামগ্রী। বাঁশ ও মুলির মধ্যে প্রকারভেদ আছে। গৃহ নির্মাণের জন্য সাধারণত বরাগ বাঁশ ও ওড়া বাঁশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া, মাফাল বাঁশ আসবাবপত্র ও মাছ ধরার নানা সামগ্রী যেমন- চাঁই, খাঁচা, পলো, ঝাপা, পাতি, কুলা ও মোড়া তৈরিতে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। মুলি বাঁশ ঘরের চালা ও বেড়া নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। দূর-দূরান্তের জেলা যেমন ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, সুনামগঞ্জের পাহাড়ি জঙ্গল থেকে মুলি ও বাঁশের চালান এসে থাকে।
মওলাগঞ্জ বাজারের বাঁশের দোকান্দার বাবুল মিয়া বলেন, ‘এলাকায় বাসস্থানের উন্নতি হওয়ায় অর্থাৎ, ডিজিটাল যুগের মানুষ বাঁশ-কাঠের ঘর নির্মাণের চেয়ে পাকা বাড়ি বানাতে বেশি আগ্রহী। তাই, আপাতত ক্রেতার সংখ্যা কম। তবে এ অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। মানুষ এক সময় আগের মতই বাঁশ মুলির কদর বুঝতে পারবে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দেখা যায়, শুধু বাঁশ কেনা-বেচাই হচ্ছে না, সাথে সীমানা বেড়া, খাচি, মাছ ধরার চাই, ঘরের ছাউনি, বিল্ডিং করার সেন্টারিং সামগ্রী তৈরি করে শতাধিক ব্যক্তি তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিয়েছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আ. আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন জানলাম।’
কৃষি গবেষক ড. সাইদুজ্জামান কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় ৩৩ প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বাঁশ শিল্প ও চাষের সঙ্গে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও উদ্ভাবনী ডিজাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাঁশ শিল্প শুধু দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারে। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি পরিবেশ সুরক্ষাতেও এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
বাঞ্ছারামপুরের আইয়ুবপুরের সন্তান কৃষি বিষয়ক পরামর্শক ড. কামারুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশেও ঘরবাড়ি তৈরি, চাটাই, ঝুড়ি ও আসবাবসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্য তৈরিতে যুগ যুগ ধরে বাঁশের ব্যবহার চলে আসছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, বাঁশের প্রজাতি বৈচিত্র্যের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। আমাদের বাঞ্ছারামপুরের বাঁশের হাটটির জন্য আরও বড় জায়গা ও রাস্তা প্রশস্ত করা দরকার।’
কেকে/ এমএ