দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আটকে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২৪৮ ফ্লাইটটি বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের ওই উড়োজাহাজ দুবাই থেকে সিলেট হয়ে ঢাকামুখী ১৭৮ জন যাত্রী নিয়ে এখনো আকাশে উড়তে পারেনি। ৩৬ ঘণ্টা পরও যান্ত্রিক ত্রুটির সমাধান আসেনি। এর ফলে আটকে থাকা ১৭৮জন যাত্রী ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ৯টায় হোটেল থেকে ১৭৫ জন যাত্রীদের এয়ারপোর্টে নিয়ে আসা হয়। সারা রাত এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় তাদেরকে আবারো হোটেলে স্থানান্তর করা হয়। ভিসা জটিলতায় অন্য ৩জন যাত্রী এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে অবস্থান করছেন।
যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে গ্রাউন্ডেড হয়ে থাকার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও সমাধান আসেনি। বিমান সূত্রে জানা যায়, সমাধানের চেষ্টায় কাজ করছেন তারা, তবে কবে সমাধান আসবে নিশ্চিত নয়।
উড়োজাহাজটির জন্য ঢাকা থেকে বুধবার দিবাগত রাত ১০টা ৩০ মিনিটে বিমানের ঢাকা-দুবাই ফ্লাইট বিজি-৩৪৭ বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর মডেলের উড়োজাহাজ যোগে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পৌঁছানোর পর যান্ত্রিক ত্রুটি সারাতে প্রকৌশলীরা কাজ শুরু করেন, সমস্যার সমাধান করে আকাশে উড়ার কথা ছিল।
বিমানের এই ফ্লাইট গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে দুবাইয়ে অবতরণ করেছিল স্থানীয় সময় রাত ১০টা ১১ মিনিটে। সেখান থেকে ফিরতি ফ্লাইটে রাত ১২টা ৫ মিনিটে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়ে বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৫ মিনিটে সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে সকল যাত্রীকে বিমানে উঠানোর পর যান্ত্রিকত্রুটি দেখা দেওয়ার ফলে দুবাই বিমানবন্দরে গ্রাউন্ডেড করে রাখা হয়েছিল।
এ ঘটনায় আটকে পড়া যাত্রীদের দুর্ভোগে থাকার তথ্য দিয়ে ফ্লাইটটির যাত্রী সিলেটের জনপ্রিয় বক্তা মাওলানা আব্দুল আহাদ জিহাদি মুঠোফোনে বলেন, দেশে যাওয়ার জন্য মঙ্গলবার রাত আটটায় তিনি আজমান থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। বোডিং ও ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বিমানেও উঠেছিলেন। কিন্তু আকাশে উড়াল দেওয়ার আগেই যান্ত্রিকত্রুটি দেখা দেওয়ায় বর্তমানে হোটেলে অবস্থান করেছেন। ২১ ঘণ্টা হোটেলে থাকার পর বুধবার রাত ৯টায় হোটেল থেকে দুবাই এয়ারপোর্টে নিয়ে আসা হয়। এয়ারপোর্টে এসে ১০ ঘণ্টা অপেক্ষার পরও বিমানে উঠতে পারিনি। বর্তমানে হোটেলে আছি, কবে সিলেটের পথে আকাশে উড়বেন জানেন না তিনিসহ সকল যাত্রীরা।
আটকে থাকা ১৭৮ জন যাত্রীর জন্য বিকল্প ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বিমানের এক কর্মকর্তা জানান, বিমান বাংলাদেশের বহরে উড়োজাহাজ সীমিত থাকায় বিকল্প ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা আশাবাদি, খুব শীঘ্রই সমস্যার সমাধান আসবে।
এর আগে গত ১৭ই এপ্রিল যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুবাই থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকামুখী বিজি-১৪৮ ফ্লাইট বোয়িং ৭৮৭-৯ মডেলের ড্রিমলাইনার ২৭৫ জন যাত্রী নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওই নগরীতে ৩০ ঘণ্টা আটকা পড়েছিল। এছাড়া গত ৩০শে জুলাই শারজাহ থেকে ঢাকামুখী বিমানের ফ্লাইট বিজি-৩৫২ বোয়িং ৭৩৭-৮৩ এন মডেলের একটি উড়োজাহাজ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় ৭ ঘণ্টা আটকে ছিল।
উল্লেখ্য, গত দুইমাসে উড়াল দেওয়ার আগে ও পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্তত ১০টি উড়োজাহাজে বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েছে। চাকা খুলে পড়া, ফেটে যাওয়া, ইঞ্জিনে অতিরিক্ত কম্পন, কেবিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, ল্যান্ডিং গিয়ারের দরজা ঠিকভাবে বন্ধ না হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা উল্লেখযোগ্য।
কেকে/এআর