সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খেত খামার
মৌলভীবাজারের নাগা মরিচ রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে
এহসান বিন মুজাহির, মৌলভীবাজার
প্রকাশ: বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৯:৪৯ পিএম
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

লাল-সবুজ রঙের মাঝারি আকারের মরিচ। নামের মত দেখতেও বেশ। তবে আপনি যদি ঝালপ্রেমী না হন তা হলেই বিপদ। তীব্র ঝালযুক্ত এ মরিচের নাম নাগামরিচ। 

মৌলভীবাজারের পাহাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে নাগা মরিচের চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। লেবু-আনারস বাগানসহ অন্য ফসলের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে এ অঞ্চলের চাষিরা নাগা মরিচ চাষে ঝুঁকছেন। তুলনামূলক কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় ছোট-বড় অনেক চাষী এখন নাগা মরিচ চাষেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন পথ খুঁজে পাচ্ছেন। 

জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মাটি নাগা মরিচ চাষের উপযুক্ত হওয়ায় চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। সুগন্ধি আর ঝাঁঝে ভরপুর নাগামরিচ ঝাল প্রিয় মানুষের প্রিয় খাদ্য ছাড়াও নাগা মরিচের তৈরি আচারের চাহিদা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ইউরোপে বসবাসকারী  বাংলদেশী ও বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে সাতকরা ও নাগা মরিচের আচার বেশি জনপ্রিয়। নাগামরিচের ঝাঁঝ এখন মৌলভীবাজারের গন্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে।

প্রতি বছরই শ্রীমঙ্গলের নাগা মরিচ রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। ঝালপ্রিয় মানুষের কাছে এই নাগা মরিচের কদর আলাদা। ঝালের জন্য বিখ্যাত সিলেটের নাগা মরিচ অঞ্চল ভেদে বোম্বাই মরিচ, ফোটকা মরিচ বা কামরাঙা মরিচ নামেও পরিচিত। ২০০৭ সালে গিনেস বুকে নাগা মরিচকে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর ইংরেজি নাম কোবরা চিলি আর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাপসিকাম চিনেনসি। কাঁচা সবুজ পুষ্ট নাগা মরিচ ঝালের জন্য খাবারের সাথে খাওয়া হয়। নানা ধরনের ঝাল খাবার যেমন মুড়ি ও ফুসকা ইত্যাদি  তৈরি করতে এবং পরিবেশন করতে কুচি কুচি করে কেটে ব্যবহার করা হয়। আচার তৈরিতেও এ মরিচ ব্যবহার করা হয়। নাগা মরিচের আচারের বিশেষ চাহিদা রয়েছে সিলেট অঞ্চলে। 

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মৌলভীবাজার জেলার পাহাড় টিলা নাগা মরিচ চাষের সম্পূর্ণ উপযোগী। এখানে সোলানেসি, ক্যাপসিকাম ও ক্যাপসিকাম চাইনিজ জাতের নাগা মরিচ চাষ হয়েছর। শীত ও গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমে বাণিজ্যিকভাবে এ ফসল চাষ করা যায়। বাণ্যিজ্যিকভাবে আবাদ করলে জমি তৈরি করে দুই থেকে আড়াই ফুট দূরে লাইন করে প্রয়োজনীয় জৈব রাসায়নিক সার দিয়ে গর্তে চারা রোপণ করতে হয়। সারের পরিমাণ অনেকটা সাধারণ মরিচের মতো। জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। চারা লাগানোর দুই মাস পর থেকেই ফুল আসে। ফুল আসার এক মাসের মধ্যে খাবার উপযোগী হয়। জেলায় আরও অধিক পরিমাণে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নাগা মরিচ বা বোম্বাই মরিচ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে জেলায় যে পরিমাণ নাগা মরিচ চাষ হচ্ছে তাতে পাওয়া যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এই ফসলটি জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে। 

চলতি মৌসুমেও উপজেলার দিলবরনগর, মোহাজেরাবাদ, বিষামনি, রাধানগর, ডলুছড়া, ডেঙ্গারবন, টিকরিয়া, পারেটং, হুসনাবাদ ও শিশিলবাড়ি এলাকার চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে নাগা মরিচের চাষ হয়েছে। 

রাধানগর এলাকার কাজী সামছুল হক এবার ১ হাজার ২০০ শতক জমিতে নাগামরিচ চাষ করেছেন। তিনি ৩ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ২০-২২ লাখ টাকার নাগা মরিচ বিক্রির আশা করছেন। 

মোহাজেরাবাদ এলাকার কৃষক ইউনুছ মিয়া বলেন, ‘নাগা মরিচ সঠিকভাবে চাষ করতে পারলে অনেক লাভবান হওয়া যায়। তিনি গত বছর ৭২ হাজার টাকা খরচ করে ১ হাজার নাগা মরিচের চারা রোপণ করে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন।’

আশিদ্রোন ইউনিয়নের কৃষক রাকিবুল বলেন, ‘১৫০ নাগা মরিচের চারা লাগিয়ে ছিলাম। যা থেকে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো মরিচ বিক্রি করেছি। লাভজনক হওয়ায় এবারও চাষ করেছি।’

কৃষকরা বলেন, ‘প্রতি পিস নাগার দাম এক টাকা থেকে ৪ টাকা। আর বাজার ভালো থাকলে প্রতি পিস নাগার দাম পড়ে ৩-৮ টাকা। গাছগুলো ভালোভাবে পরিচর্যাসহ প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক দিলে একেকটি গাছে এক মৌসুমে প্রায় ২০০-৪০০ মরিচ ধরে। আর সাধারণভাবে অপেক্ষাকৃত যত্ন কম হলে এক মৌসুমে গাছপ্রতি ৫০-৬০টি মরিচ ধরে। অনেক বেশি পরিচর্যা করতে হয়।’

১০ কেয়ার (বিঘা) জমিতে রোপণ করা দুই হাজার নাগামরিচের গাছ থেকে এক মৌসুমে প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানান কৃষক আহসান হাবিব। 

জেলার মধ্যে নাগা মরিচের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্রীমঙ্গল। এ বাজারের আড়তদার হাসেম আলী জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা এখান থেকে নাগা মরিচ কিনে নিয়ে যান। মৌসুমে শ্রীমঙ্গলে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকার নাগা মরিচ বিক্রি হয়।

শ্রীমঙ্গলের আড়তদার আবু তাহের জানান, ‘অল্প খরচে এটি একটি লাভজনক ফসল। বিশেষ করে লেবুগাছের নিচে এ ফসলের চাষ করার বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় না। বিদেশে বসবাসরত সিলেটিদের চাহিদা মেটাতে শ্রীমঙ্গলের নাগা মরিচ ইউরোপ-আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। লাভজনক ফসল হওয়ায় চাষিরা নাগা মরিচ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্থানীয় কৃষকরা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৮০ হেক্টর জমিতে সাথী ফসল হিসেবে নাগা মরিচ আবাদ হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের মাটি নাগা মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। শীত ও গ্রীষ্মকাল উভয় মৌসুমেই নাগা মরিচের চাষ হয়। হেক্টর প্রতি নাগা মরিচের গড় উৎপাদন ৩ টন। 

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে পাহাড়ি এলাকার চাষিরা লেবু-আনারসের সাথী ফসল হিসেবে নাগা মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বি হয়েছন। এছাড়া নাগা মরিচ চাষে খরচও কম। তেমন পরিচর্যারও দরকার পড়ে না। নাগা মরিচ চাষে আগ্রহী কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘নাগা মরিচ এককভাবে জমিতে চাষ করা হয় না। এটি অন্য ফসলের সঙ্গে অবশিষ্ট জায়গায় চাষ করা হয় বলে এ ফসলটির নাম ‘সাথী ফসল’। লাগানোর তিন মাসের মধ্যে ফলন ধরে। বিশেষ করে লেবু গাছের নিচে এ ফসলের চাষ বেশি করা হয়। শ্রীমঙ্গলে ৮০ হেক্টর জমিতে মিশ্র ফসল হিসেবে নাগা মরিচ আবাদ হয়ে থাকে। উচ্চমূল্যের ফসল নাগা মরিচ দিয়ে আচার তৈরি করা হয় এবং ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত বাংলাদেশীদের জন্য নাগা মরিচ বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে।’

লাভজন ও জনপ্রিয় হওয়ায় নাগা মরিচ চাষে আমরা কৃষকদের উৎসাহ ও পরামর্শ  দিয়ে যাচ্ছি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

কেকে/ এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  মৌলভীবাজার   নাগা মরিচ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ

খেত খামার- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close