ভোলার লালমোহন উপজেলার গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সুপারি। এ উপজেলায় ধান ও শাক-সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে, বাড়ির আঙিনা, বাগানবাড়ি ও পতিত জমিতে সারি সারি সুপারি গাছ দেখা যাচ্ছে। সুপারি গাছের চারা একবার রোপণ করলে দীর্ঘদিন ফলন পাওয়া যায়। তুলনামূলকভাবে কম খরচে চাষ করা যায় এবং বাজারে সুপারির চাহিদাও অনেক। যার ফলে স্থানীয় অনেক পাইকাররা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সুপারি কিনেন। এতে করে চাষিদের সুপারি বিক্রিতে কোনো ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয় না। চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় সুপারির ব্যাপক বাম্পার ফলন হয়েছে।
বর্তমানে বাজারে আকারভেদে প্রতি বি (৩২০ পিস) সুপারি ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত। এতে খুশি চাষিরা। লালমোহনের এসব সুপারি ঢাকা, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
বর্তমানে লালমোহন উপজেলার ছোট বড় সবগুলো বাজারে সুপারির বেচাকেনা জমজমাট। এর মধ্যে গজারিয়া, কর্তারহাট, লর্ডহাডিঞ্জ, নাজিরপুর, মঙ্গলসিকদার, চতলা, রায়চাঁদ, ডাওরী, দেবিরচর, ফুলবাগিচা উল্লেখযোগ্য। এসব বাজার থেকে স্থানীয় আড়তদাররা চাষিদের থেকে সুপারি কিনে লালমোহন সদরের আড়তগুলোতে নিয়ে বিক্রি করেন।
উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মঙ্গলসিকদার এলাকার চাষি মো. শামিম পাটওয়ারী জানান, আমাদের প্রায় ১৬০ শতাংশ জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণের বেশি ফলন হয়েছে। তবে ফলন কিছুটা ছোট। বাজারেও দাম গত বছরের তুলনায় কম। তবে ফলন বেশি হওয়ায় এ মৌসুমেও সুপারি বিক্রি করে অনেকটা লাভবান হবো।
লালমোহন বাজারের মেসার্স সওদাগর ভান্ডারের আলম সওদাগর বলেন, লালমোহন পৌরশহরে প্রায় ৩০টি সুপারির আড়ত রয়েছে। প্রতি বছর আশ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই তিন মাস মূলত সুপারি বেচাকেনা হয়। বাগান থেকে চাষিরা পাকা সুপারি বাজারে এনে বিক্রি করেন। আড়তদাররা সুপারি কেনার পর পাকা সুপারিকে চালান করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়াও সুপারি ভিজিয়ে এবং শুকিয়ে পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। লালমোহন বাজারে বর্তমানে দৈনিক অন্তত ৩০ লাখ টাকার মতো সুপারি বেচাকেনা হয়। এতে মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো সুপারি বেচাকেনা হয়।
তিনি আরো জানান, এ বছর সুপারির ফলন বেশি হওয়ায় দাম গত বছরের চেয়ে কিছুটা কম। তবে ফলন বেশি হওয়ায় চাষিরা কাক্সিক্ষত লাভের মুখ দেখছেন। বর্তমানে আকারভেদে ১বি (৩২০ পিস) ৫০০ টাকা, মাঝারি ৪৫০ টাকা, ছোটগুলো ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লালমোহনের সুপারি ঢাকা, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।
লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু হাসনাইন বলেন, উপজেলায় এ বছর সবচেয়ে বেশি সুপারির ফলন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর দুই থেকে তিনগুণ বেশি সুপারির উৎপাদন হয়েছে। এবার সুপারিতে পোকার আক্রমণও নেই। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এ অঞ্চলে সুপারির ফলন অত্যাধিক ভালো হয়েছে, যা দেখে এলাকার মানুষ সুপারি চাষে আরো আগ্রহী হবেন বলে মনে করছি। এ ছাড়া লাভজনক হওয়ায় সুপারি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।
অপরদিকে স্থানীয় কৃষি সচেতন ব্যক্তিরা মনে করছেন, পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে আগামী কয়েক বছরে সুপারি লালমোহনের গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান শক্তিতে পরিণত হবে। কারণ ধান চাষে যেমন খরচ বেশি, তেমন ঝুঁকিও থাকে। কিন্তু সুপারিতে একবার পরিশ্রম করলেই বছরের পর বছর লাভ আসতে থাকে।
কেকে/ এমএস