মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পাহাড়ের টিলায় বাণিজ্যিকভাবে আদালেবু চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। তুলনামূলক কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় ছোট-বড় অনেক চাষি এখন আদালেবু চাষেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন পথ খুঁজে পাচ্ছেন।
জুড়ী এক সফল কৃষি বিপ্লবের নাম। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া আদালেবু চাষের জন্য এতটাই উপযুক্ত যে, বর্তমানে উপজেলার ২৫০ হেক্টর জমিতে আদালেবুর চাষ বাগান গড়ে উঠেছে। পাহাড়ি এলাকার অনুকূল আবহাওয়া ও রোগ-বালাইমুক্ত পরিবেশে সুগন্ধে ভরপুর এ লেবু সারা বছর ফলন দেয়।
জুড়ীতে উৎপাদিত আদালেবুর সিলেট অঞ্চল ছাড়াও চাহিদা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। মৌলভীবাজারের গণ্ডি পেরিয়ে জুড়ীর আদালেবু এখন রপ্তানি হচ্ছে বহির্বিশ্বে।
সরজমিনে দেখা গেছে, জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ও পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের পাহাড়ি টিলাগুলো এখন বাতাবি লেবুর সবুজ বাগানে ভরপুর। জুড়ীর হায়াপাড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা জামাল উদ্দিন এই মৌসুমে নিজস্ব বাগানের আদালেবু বিক্রি করে প্রাায় আড়াই লাখ টাকা আয় করেছেন।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, বর্তমানে উপজেলার ২৫০ হেক্টর জমিতে আদালেবুর চাষ হচ্ছে।
কৃষি উদ্যোক্তা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাগানে প্রায় ৫০০টি আদালেবু গাছ আছে, যা উঁচু-নিচু টিলাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। সারা বছরই কমবেশি ফলন পাই। বর্তমানে অফ-সিজন চলছে, তাই লেবুর দামও ভালো। এখন প্রতি পিস লেবু বিক্রি হচ্ছে ১৬-১৭ টাকায়। স্থানীয় হিসেবে ৮০টি লেবুতে এক পন, যা বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৭০০ টাকায়।
তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার উৎপাদিত লেবু সিলেটে পাঠানো হয়, সেখান থেকে বড় ব্যবসায়ীরা তা লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন। বিদেশে জুড়ীর আদালেবুর ভালো চাহিদা আছে।’
আদালেবু সিলেট অঞ্চলের একটি বিশেষ ফল। দেখতে সাধারণ লেবুর মতো, তবে কাজ করে সাতকরার বিকল্প হিসেবে। তেতো স্বাদের কারণে সাতকরার মতোই এর রসালো অংশ খাওয়া যায় না। তবে, বহুগুণে সমৃদ্ধ ফলটি। টক আর অনন্য ঘ্রাণের সাইট্রাস জাতীয় এ ফলটির জন্ম ভারতের আসামে। বর্তমানে চাষ হচ্ছে জেলার জুড়ীসহ বিভিন্ন উপজেলায়। তরকারির স্বাদ বাড়াতে, মাছ-মাংস রান্নায়, আচার তৈরি, এমনকি ওষুধ তৈরিতেও এর জুড়ি নেই।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রনি সিংহ বলেন, ‘জুড়ীর আদা-লেবুর চাহিদা সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। অফ-সিজনে দাম আরও বেড়ে যায়। কৃষকরা অন্য ফসলের চেয়ে এই লেবুতে বেশি লাভবান হচ্ছেন। দেশের বাইরেও, বিশেষ করে লন্ডনে, এর বাজার তৈরি হয়েছে। জুড়ীর বিখ্যাত আদা লেবু তার তীব্র সুগন্ধ, মিষ্টি স্বাদ ও রসাল গুণে অনন্য। পাহাড়ি মাটিতে উৎপাদিত হওয়ায় এর মান দেশের অন্য এলাকার লেবুর তুলনায় অনেক ভালো বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।’
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল আলম খান বলেন, ‘উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে আদালেবুর চাষ হচ্ছে। এগুলো সম্পূর্ণ জৈব উপায়ে উৎপাদিত, কোনো সার বা কীটনাশক ছাড়াই। লেবু জাতীয় ফসলের মধ্যে আদালেবুই সবচেয়ে লাভজনক। এতে রোগবালাই নেই বললেই চলে, ফলে কৃষকরা ভালো মুনাফা পাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুড়ীর পাহাড়ি টিলার মাটি ও জলবায়ু বাতাবি লেবুর জন্য খুব উপযোগী। স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ ও বাজার চাহিদা বাড়ায় এটি ভবিষ্যতে অন্যতম অর্থকরী ফসলে পরিণত হতে পারে।’
এই অঞ্চলের কৃষকদের আশা- সরকারি সহায়তা ও সঠিক বিপণন ব্যবস্থাপনা পেলে জুড়ীর আদালেবু বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করবে।
কেকে/এমএ