বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে ইলুহার একটি ইউনিয়ন। ভাসমান সবজি চাষের কারণে বহুল আলোচিত। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এ ইউনিয়নটির অধিকাংশ মানুষ কৃষিপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কৃষিপণ্যের পাশাপাশি ভাসমান সবজি চাষ করে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা।
বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের পশ্চিম মলুহার গ্রামের বাসিন্দা মো. জামাল কচুরিপানা ও জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করেন। তিনি কচুরিপানা স্তরে স্তরে সাজিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করেন এবং তাতে বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদন করেন, যেমন- লাউ, কুমড়া, করলা, বেগুন, শিম ইত্যাদি। বন্যার সময় যখন জমিতে চাষ করা সম্ভব হয় না, তখন এই ভাসমান বেডগুলো পানিতে ভেসে থাকে এবং চারার কোনো ক্ষতি হয় না।
নিম্নাঞ্চল হওয়াতে মলুহার গ্রামের বেশির ভাগ জায়গা ছয় মাসের মত পানির নিচে থাকে। কিন্তু, এই পানিতে জন্মায় অনেক শ্যাওলা আর কচুরিপানা। আর এই শ্যাওলা ও কচুরিপানা দিয়ে কৃষকরা ধাপ বা ভাসমান বাগান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন। ধাপ বা ভাসমান বাগান পদ্ধতি হল কচুরিপানাকে ধাপে ধাপে সাজিয়ে পানিতে ভাসমান একটা বেড তৈরি করে তার উপর বিভিন্ন রকমের বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করা।
একজন সফল কৃষক মো. জামাল প্রতি বছর এই পদ্ধতিতে নানা ধরনের শাক ও সবজির চারা উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করেন। কচুরিপানা দিয়ে ধাপ বানিয়ে সেখানে বীজ বপন বা চারা রোপন করে ১৫-২০ দিন নিয়মিত পরিচর্যা করে বাজারে বিক্রির উপযোগী করে তোলেন। অভিনব এই পদ্ধতিতে লাউ, কুমড়া, বেগুন, শিম, পেপে, করলা ও ঢেড়সসহ নানা ধরনের সবজি চারা উৎপাদন করেন। এ পদ্ধতিতে চাষ করার সুবিধা হল বন্যার সময় জমির চারা নষ্ট হয়ে গেলেও ধাপ পানিতে ভেসে থাকে এবং চারারও কোন রকমের ক্ষতি হয় না এবং চাষাবাদের জন্য জামাল নিয়মিত আবহাওয়ার খবর রাখেন।
প্রচন্ড রোদের সময় ধাপের চারায় নিয়মিত পানি দেন এবং অতিরিক্ত বৃষ্টি থেকে চারাগুলোকে রক্ষা করার জন্য ধুন্দলী বন নামের এক ধরনের জলজ লতা ব্যবহার ব্যবহার করেন। এতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এবং চারারও কোন ক্ষতি হয় না।
দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ক্রেতা-ব্যবসায়ী এই সবুজ ও টাটকা সবজি কিনতে আসেন। উপজেলার পাশাপাশি চাঁদপুর-ঢাকা বরিশাল ঝালকাঠি, উজিরপুর বিভিন্ন স্থান থেকে এই সবজি কেনার জন্য ব্যবসায়ীরা আসেন। এখানে লাউশাক করলস্না, সিম, ঢেড়স, পেঁপে বরবটি, কাঁচামরিচ, টমেটো ধনেপাতা ইত্যাদি চাষ করা হয়। ভাসমান সবজি চাষ করার জন্য সিজনে কচুরিপানা ধরে রেখে মেদা বানাতে হয়। এ ছাড়া খরকুটো, পাটকাঠি, বাঁশের কঞ্চি ও জৈব সার দ্বারা সবজি চাষ করা হয়। সবজি বিলে ও খালে, পুকুরেও মেদা বেঁধে চাষ করা হয়। চাষিদের দেখে শিক্ষিত বেকার যুবকদের পাশাপাশি চাকরিজীবীরাও অবসর সময় ভাসমান সবজি চাষে সম্পৃক্ত হয়েছে।
মো. জামাল পারভেজ বলেন, ‘ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ করার ফলে জমিটা সারা বছর ধরেই চাষ করতে পারি। ভাসমান সবজি চাষ করে বছরে কয়েক লাখ টাকা লাভ হয়। আমার প্রধান জীবিকা নির্বাহের কাজই হলো কৃষি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পূর্ব পুরষেরা প্রায় ৫০ বছর আগে থেকে এই ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমার দাদা, আমার বাবা আবু হানিফ ও পরবর্তী আমি সফলতার সাথে এই চাষাবাদের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে স্বাবলম্বী হওয়াসহ এ আয় থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমাদের ভালোভাবেই চলে যাচ্ছে।’
কেকে/এমএ