রাজশাহীর তানোর উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উপজেলার মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। যা দেখে কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। প্রতিকূল আবহাওয়া ও কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ভালো ফলনের আশা করছেন এখানকার চাষিরা।
সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত কৃষিপ্রধান এই উপজেলায় আমনই প্রধান ফসল।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ সোনালি ধানের সমারোহ। অনেক কৃষক ইতোমধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছেন।
উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের দরিয়া গ্রামের কৃষক শাকির জানান, তিনি ১০ কাঠা জমিতে বিআর-৫১ জাতের ধান চাষ করে ১১ মণ ফলন পেয়েছেন।
গাল্লা গ্রামের আরেক কৃষক আবু বকর সিদ্দিক ১৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন এবং বিঘা প্রতি ২০-২২ মণ ফলনের আশা করছেন।
তবে, কিছু কিছু এলাকায় কৃষকরা কিছুটা লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন। হেমন্তের শুরুতে ঝড়ো হাওয়া ও আকস্মিক বন্যায় যেসব জমির ধান গাছ নুয়ে পড়েছিল। সেখানে ফলন কিছুটা কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তানোর পৌর সদরের কৃষক মুঞ্জুর রহমান জানান, তার জমির ধান নুয়ে পড়ায় তিনি ফলন হ্রাসের আশঙ্কা করছেন।
এদিকে ধানের ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে কৃষকদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে। তবে, খড়ের চড়া দাম তাদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। এ বছর এক কাউন খড় (প্রায় ২০ আউটি) ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে তানোরে ২২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ২১ হাজার ৩৮৭ হেক্টর। অন্যদিকে এ বছর প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃষি বিজ্ঞানী নুর মোহাম্মদ জানান, মৌসুমের শুরুতে অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং সারের সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকদের বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। তবে পরে রোগ-বালাই কম হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা আশানুরূপ ছিল না।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
সব মিলিয়ে, কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তানোরের কৃষকরা এবার আমনের ভালো ফলন ও দাম পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, যা তাদের সারা বছরের পরিশ্রমকে সার্থক করে তুলবে।
কেকে/এমএ