বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: নির্বাচনি কার্যক্রম শুরুর আগেই পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছি      শুক্রবার থেকে টঙ্গীতে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা শুরু      বন্যা-ভূমিধসে শ্রীলঙ্কায় নিহত ৪৪      দুদকের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ      বৃহস্পতিবারের উল্লেখযোগ্য সাত সংবাদ      ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’      নির্বাচনে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী : ইসি সচিব      
খেত খামার
চকরিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গরু দিয়ে জমি চাষ পদ্ধতি
এম. মনছুর আলম, চকরিয়া (কক্সবাজার)
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:১৬ পিএম
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

উদ্ভাবনের ফলে দেশের বিভিন্ন খাতে যুক্ত হচ্ছে নানা ধরনের প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তির সুবাদে দেশের গ্রামীণ জনপদে এসেছে আধুনিকতা। সারা দেশের ন্যায় এরই আলোকে ব্যতিক্রম নয় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়। চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায়ও গ্রামীণ জনপদের কৃষিতে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যঘেরা চিরচেনা গরু ও লাঙল দিয়ে জমি চাষ দৃশ্যটি। 

জমি চাষে ঐতিহ্যের একটি চিরায়ত পদ্ধতি ছিলো গরু-মহিষ, জোয়াল ও লাঙল দিয়ে জমি চাষ করা। সময়ের পরিক্রমায় ও কালের বিবর্তনে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চকরিয়া জনপদ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গরু দিয়ে জমি চাষ পদ্ধতি।

চকরিয়ার বিভিন্ন গ্রামীণ জনপদ ঘুরে জানা গেছে, গত ২০ বছর পূর্বেও এই জনপদে প্রান্তিক চাষিরা সেই কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরু ও কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে বেরিয়ে পড়তো জমিতে চাষ করতে। সময়ের বিবর্তনে এখন আর চোখে পড়ে না গরুর লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ। বর্তমানে প্রান্তিক চাষিরা তাদের জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চাষাবাদ করছেন। 

আধুনিকতার স্পর্শে ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা বৈপ্লবিক পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে। তাই আগের দিনের মতো সকালে কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে মাঠে যেতে কৃষকদের আর দেখা যায় না। তাই গরু, মহিষ, লাঙল, জোয়াল নিয়ে জমিতে হালচাষ করা হারিয়ে যেতে বসেছে। আগে যারা কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল তারা এখন পেশা বদলি করে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

প্রবীণ কৃষকরা জানান, বর্তমানে অতীতের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে পড়লেই বুকের ভেতরে অনেক কষ্ট লাগে। বয়স বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে সেই পুরনো দিনগুলো জীবন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। একদিন এভাবেই পুরনো সবকিছু হারিয়ে যাবে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। অথচ এমন একদিন ছিল গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে গরু ও লাঙল ছাড়া কোন ধরনের চাষ হতো না। আজকে কৃষিতে  আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে গেছে সেই দিনের চাষাবাদ। গরুর লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব ছিল। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙ্গলের চাষ গভীর হয়। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের চাষাবাদ করতে সার, কীটনাশক খুবই সাশ্রয় হয়। কষ্ট হলেও গরু দিয়ে হাল চাষ করতে খুব ভাল লাগত। বেঁচে যেত অনেক দরিদ্র কৃষকের প্রাণ। এটি ছিলো অনেক উপকারী এক পদ্ধতি। কারণ লাঙলের ফলা জমির অনেক গভীর অংশ পর্যন্ত আলগা করতো। গরুর পায়ের কারণে জমিতে কাদা হতো অনেক এবং গরুর গোবর জমিতে পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি অনেক বৃদ্ধি করতো। গ্রাম বাংলার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে রয়েছে গরু, লাঙল ও জোয়াল। কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়ার পরিবর্তে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে অল্প সময়ে জমি চাষ করা হয়।

বিএমচর বহদ্দারকাটা গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোছাইন বলেন, ‘ছোটবেলায় হাল-চাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হাল চাষের বলদ গরু থাকতো ২-৩ জোড়া। চাষের জন্য দরকার হতো ১ জোড়া গরু। চাষের জন্য ছিল কাঠ আর লোহার তৈরি লাঙ্গল, জোয়াল, মই, (গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখের লাগাম ছিল। আগে গরু দিয়ে জমিতে চাষ করলে ঘাসও কম হতো। চাষের সময় গরুর গোবর জমিতে পড়তো। সেই গোবর ছিল জৈব সার। এতে করে ক্ষেতে ফলন ভালো হতো। কৃষিতে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি এসেছে সেই কৃষি যন্ত্রদিয়ে জমি চাষাবাদ করা হয়। গরুর লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ কমে যাওয়ায় প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষিতে বেড়েছে দ্বিগুণ খরচ। তবুও বেঁচে থাকার তাগিদে এখনো চাষাবাদ করে যাচ্ছি।’

পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের সিকদার পাড়া এলাকার কৃষক আবদুর রহিম বলেন, ‘নিজের জমি চাষ করার পাশাপাশি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে প্রতি মৌসুমে হাল-চাষ করে সংসারের ব্যয়ভার বহন করি। একসময় বসতবাড়ির হালের গরু দিয়ে জমি চাষ করে পরিবারের সচ্ছলতা ছিল। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বর্তমানে জমি চাষের প্রয়োজন হলেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে জমি চাষাবাদ করা হয়। এতে বহুগুণ বেড়ে গেছে চাষের খরচ। তবে খরচ বেড়ে গেলেও কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে কমছে বহু সময়।’

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ ফেরদৌসী বলেন, ‘আবহমান গ্রাম বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে কৃষিতে জড়িয়ে রয়েছে গরু, লাঙল ও জোয়াল। কালের পরিক্রমায় দিনের পর দিন নতুন নতুন কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কৃষিখাতেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। একদিকে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কৃষকের কমেছে শ্রম ও খরচ। পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে বেড়েছে কয়েক গুণ উৎপাদন।’

কৃষিযন্ত্রের ব্যবহারে কৃষকদের মাঝে কিছুটা অনীহা থাকলেও বর্তমানে এর চাহিদা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান।

কেকে/ এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  চকরিয়া   গরু দিয়ে চাষ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

নির্বাচনি কার্যক্রম শুরুর আগেই পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছি
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জীবন্ত প্রতীক
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বেনাপোলে প্রথম হাসপাতাল নির্মাণ করবে : তৃপ্তি
গঙ্গাচড়ায় ধান মাড়াই মেশিনের আগুনে ক্ষয়ক্ষতি
সুন্দরগঞ্জে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে স্প্রে মেশিন বিতরণ

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল
চাঁদপুর-২ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা রয়েছে: তানভীর হুদা
নাগেশ্বরীতে ১০ টাকার স্বাস্থ্য সেবা চালু
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ১২.৫ ডিগ্রি
সোনাইমুড়ীতে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা

খেত খামার- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close