মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় জাম্বুরার চাষাবাদ বাড়ছে। উপজেলার টিলাভূমি এখন ‘জাম্বুরার রাজধানী’ নামে পরিচিত। আশির দশকে হাতে গোনা কয়েকজন চাষির উদ্যোগে শুরু হওয়া জাম্বুরা চাষ আজ জুড়ী উপজেলাজুড়ে এক সফল কৃষি বিপ্লবের নাম। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া জাম্বুরা চাষের জন্য এতটাই উপযুক্ত যে, বর্তমানে উপজেলার প্রায় ৬৬ হেক্টর টিলাজুড়ে জাম্বুরার বাগান গড়ে উঠেছে।
গোয়ালবাড়ী ও পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় এই রসালো ফলের। এখন এ অঞ্চলের প্রায় তিন শতাধিক চাষি বংশপরম্পরায় জাম্বুরা চাষ করছেন।
গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম কচুরগুল গ্রামের কৃষক ছুরকুম আলী জানান, তিনি টানা ৩৫ বছর ধরে জাম্বুরা চাষ করছেন। তার বাগানে ১২ প্রজাতির ৬০০ গাছ রয়েছে। প্রতি বছর ১৫-২০ হাজার জাম্বুরা বিক্রি করে তিনি সব খরচ বাদে ৩ লাখ টাকারও বেশি আয় করেন।
এই বছর বাম্পার ফলন হওয়ায় তার আশা, গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ হবে।
চাষিরা জানাb, এখন আর তাদের বাজারে ফল নিয়ে যেতে হয় না। স্থানীয় পাইকাররা বাগান থেকে সরাসরি জাম্বুরা কিনে নিচ্ছেন। প্রতিদিন বড় ট্রাকে ৪০০-৫০০ এবং ছোট ট্রাকে ২০০-২৫০ বস্তা জাম্বুরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।
জুড়ীর জাম্বুরা স্বাদে, গন্ধে ও মিষ্টতায় অনন্য। একটি জাম্বুরার পাইকারি দাম গড়ে ১৫-২০ টাকা। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ফল পরিপক্ব হয়।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বছরে উপজেলায় প্রায় ১২ মেট্রিক টন জাম্বুরা উৎপাদিত হয়।
পুষ্টিবিদদের মতে, জাম্বুরা ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন ও বি-কমপ্লেক্সে সমৃদ্ধ। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান বলেন, ‘জুড়ীর জলবায়ু ও মাটি জাম্বুরা চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।’
তিনি জানান, উপজেলা কৃষি অফিস সম্প্রতি ১২টি উন্নত জাত চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে দুইটি জাত বীজহীন।
এসব চারা উৎপাদন শুরু হলে কৃষকেরা আরও লাভবান হবেন বলে আশা করছেন মাহমুদুল আলম।
জুড়ীর টিলাভূমিতে জাম্বুরা চাষ শুধু কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি করেনি বরং সারা দেশের ফলপ্রেমীদের মন জয় করেছে।
কেকে/ এমএ