জীবনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে এখন সফল নারী হিসাবে সমাজকে আলোকিত করেছেন সালমা বেগম। নিজের ভাইয়ের দেওয়া জরাজীর্ণ একটি ঘরে বসবাস করলেও সে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে না নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িছেন তিনি। জয়পুরহাট শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় পৌর মেয়রের দেওয়া উপহার ছোট্ট একটি পানের দোকান, দুটি ছাগল ও কিছু মুরগি পালন করাসহ বাড়িতে কিছু সময় সেলাইয়ের কাজ দিয়েই চলছে তার জীবন সংসার। সংসারে একমাত্র মেয়ে হাবিবা এখন পড়াশোনা করছেন খনজনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে।
সালমা বেগম সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড চকশ্যাম গ্রামের ভূমিহীন বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস করেন। বাবা মকবুল হোসেন ও মা রেখা বেগমের ছোট মেয়ে ছালমা। বাবা মকবুল হোসেনও মারা যান গত বছর।
সালমার মা রেখা বেগম বলেন, সালমা ছোট বেলায় ৬ মাস বয়সে শরীরে প্রচণ্ড জ্বর হওয়ার পর চিকিৎসা অভাবে কোমর থেকে বাম পা অবশ হয়ে যায়। এভাবেই প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বেড়ে ওঠা ছালমা পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন খনজনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। অত্যন্ত মেধাবী ছালমা লাঠিতে ভর দিয়েই স্কুলে যেতেন সহপাঠীদের সঙ্গে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ৮ম শ্রেণি পাস করার পর লেখাপড়া থেমে যায় সালমার। ২০০১ সালে আমদই ইউনিয়নের দন্ডপানি গ্রামের শাজাহান আলীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। তারপর তাদের সংসারে জন্ম নেওয়া একমাত্র মেয়ের নাম রাখেন হাবিবা। পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার কারণে আর সন্তান নেননি তারা।
চকশ্যাম গ্রামের সালমা বেগমের স্বজনরা বলেন, আমরা তাকে ছোট থেকেই দেখতেছি সে কখন মানুষের কাছে হাত পাততেন না। বরং সে নিজে সবসময় পরিশ্রম করতেন। আমরা দেখি সে বাসায় ছাগল পালন করে, মুরগি পালন করে আবার কখনো কখনো সেলাইয়ের কাজ করে নিজের সংসার চালান। তারা বলেন, সালমা বেগম আমাদের সমাজের জন্য বোঝা না হয়ে সে যে নিজের পায়ে নিজে দাঁড়িয়েছে এটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি, আমাদের চাওয়া সে যেহতু ভাইয়ের বাড়িতে থাকে তাকে যদি সরকার একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে সে তার মেয়েকে নিয়ে সেখানে বসবাস করতে পারত।
সালমা বেগম বলে, আমার ছয় মাস বয়স থেকেই আমি প্রতিবন্ধী, তারপরও আমি ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। এরপর আমাকে প্রতিবন্ধী বলে যখন কেউ বিয়ে করতে চায় না ঠিক সেই মুহূর্তে সদর উপজেলার দন্ডপানি গ্রামের শাজাহান আলী আমাকে বিয়ে করে। যদিও তার সেখানে অন্য একটা পরিবার রয়েছে তারপরও সে আমাকে বিয়ে করে। কিন্তু তার সংসারের অবস্থাও তেমন ভালো না হওয়ায় আমার আর সেখানে যাওয়া হয়নি। এরপর আমি ভাইয়ের বাসায় থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই কিছু করার চেষ্টা করছি যাতে করে আমাকে ভিক্ষা করা কিংবা মানুষের কাছে হাত পাততে না হয়।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালে আমাকে সরকার প্রতিবন্ধী ভাতারও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে আমি ছাগল ও মুরগি পালন করি। আমার এই পরিস্থিতি চোখে পড়ে জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক আমাকে একটি দোকানের ব্যবস্থা করে দেন। এই সেই দোকানে আমি পানসহ আর জিনিসপত্র বিক্রি করি। সেই দোকান থেকে আল্লাহর রহমতে যা পাই তা দিয়ে আমার সংসার চালাই।
কেকে/ এমএস