দেশের রাজনীতিতে হঠাৎ আলোচনায় মৌলবাদ। ‘বাংলাদেশ যেন চরমপন্থা বা মৌলবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে না পারে, সেটিই বিএনপির লক্ষ্য।’ অতিসম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এ আলোচনা সামনে আসে।
গত রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় কবিতা পরিষদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ‘গণতন্ত্র উত্তরণে কবি-সাহিত্যিকের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে বিএনপি মিডিয়া সেল।
সভায় উপস্থিত কবি ও সাহিত্যিকদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতি আপনাদের দৃঢ় অবস্থানের সঙ্গে কিন্তু আমাদের বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই।’
স্বৈরাচারের পুনর্জাগরণ প্রতিহত করতে কবি-সাহিত্যিকদের মতো বিএনপিও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই দেশ কোনো চরমপন্থা বা মৌলবাদের অভয়ারণ্যে যেন কোনো দিন পরিণত হতে না পারে, সেটিও কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা। সেটি আমাদের লক্ষ্য। এ দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি আমাদের অবিচল আস্থা প্রকাশের জায়গায় কিন্তু আমরা সকলে এক।’
মানুষের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, দেশে একটি জবাবদিহিমূলক অবস্থা তৈরি করা একান্তই প্রয়োজন।
এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, যা রুখে দেওয়া না গেলে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফখরুল বলেন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার আহ্বান জানান।
এদিকে তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেওয়া এ বক্তব্যের তুমুল বিরোধিতা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে জয় বলেছিলেন, কোনো অবস্থাতেই যেন মৌলবাদী উত্থান না হয়। এখন একই কথা তারেক রহমানও বলছেন। জয়ের বক্তব্য ও তারেক রহমানের বক্তব্যের মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য দেখছি না।
শুক্রবার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এত দিন যাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, সেগুলো দক্ষিণপন্থিদের ভোট ছিল। এক সময় আপনারা মৌলবাদীদের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এখন তার বিপক্ষে কথা বলছেন কেন? এত দিন মৌলবাদীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে, কিন্তু তারা এখন তা বুঝতে শিখেছে। মৌলবাদীদের সঙ্গে এত বছর প্রতারণা করা হয়েছে। তাদের দাবি দেওয়া কেউ বাস্তবায়ন করে নাই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই তাদের প্রত্যাশা। কিন্তু বিগত ৫৩ বছরে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আপনারা দেখবেন ইতোমধ্যে যেই দলগুলো ক্ষমতায় গিয়েছিল, তারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে নির্বাচনের আগে যতগুলো ইশতেহার দিয়েছে, সেই ইশতেহারে সব দফাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তারাই আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে।
মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, দক্ষিণ উত্থান হচ্ছে, আজকে মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে, গতকালকে দেখলাম আমাদের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব মন্দিরে গিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। সেখানে ধর্মের ব্যাপারে ইসলামের ইঙ্গিত করে বর্তমান ইসলামী শাসনের ব্যাপারে তিনি ইঙ্গিত করেছেন। আমি বলবো, ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। বরং না হলে সেটাই আশ্চর্যের। তিনি আসন্ন নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির দাবি জানান।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। সমাবেশ শেষে একটা র্যালি বের করা হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে ‘মৌলবাদ’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এ ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। গত শনিবার (৫ এপ্রিল) রাতে গুলশানের কার্যালয়ে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ অনুরোধ জানান তারা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে ‘মৌলবাদের উত্থান’ সম্পর্কিত বিএনপির নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। তারা বিএনপির নেতাদের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আশা করেননি বলেও উল্লেখ করেন।
হেফাজত নেতারা বলেন, বিএনপি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বলতে পারে, এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। এ পর্যায়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা মৌলবাদী বলতে জামায়াতে ইসলামীকে বুঝিয়েছেন। এ সময় হেফাজতের নেতারা বলেন, এতে শুধু জামায়াত নয়, সব ইসলামপন্থিদের আঘাত করা হচ্ছে।
কেকে/ এমএস