গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গড়ে উঠেছে ‘কাপাসিয়া চা বাগান’ নামক চা বাগান। বাগানটি ইতোমধ্যে খ্যাতি ছড়াচ্ছে সমতলের চা বাগান হিসেবে। আর এ চা বাগান দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন ছুটে আসছেন নানা বয়সের মানুষ।
কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের চিনাডুলি গ্রামে চা বাগান করে স্থানীয় কৃষিতে চমক লাগিয়েছেন প্রফেসর লুৎফর রহমান। উপজেলা সদর হতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লীতে শোভা পাচ্ছে সাড়ি সাড়ি চা গাছ। প্রয়োজন অনুসারে এই এলাকায় বৃষ্টি কম হওয়াকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে গভীর নলকূপের মাধ্যমে বাগানে পানির সরবরাহ করছেন শ্রমিকরা।
ব্লক সুপারভাইজার মুসলে উদ্দিন জানান, আমাদের মালিক লুৎফর রহমান প্রথমে এক একর জায়গার উঁচুনিচু টিলা ও টিলার ঢালে পরীক্ষামূলক চা চাষ করেন। বাগান থেকে পাতা সংগ্রহও শুরু হয়েছে। ‘কাপাসিয়া চা-বাগান’ নামের এ বাগানে প্রতিদিন পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুরাও ঘুরতে আসছেন। কাপাসিয়ার মাটি চা-চাষের জন্য উপযোগী। কিন্তু চায়ের চারা করার জন্য উপযোগী নয়। তাই শ্রীমঙ্গল থেকে চারা আনা হয়।
মাহবুবুর রহমান রকেট জানান, সিলেট, চিটাগাং ও পঞ্চগড়ের মত কাপাসিয়ার কয়েকটি গ্রামের ভূমি রয়েছে যেখানে চা আবাদে ব্যাপক সফলতা পাওয়ার মত। তার মধ্যে নিজের গ্রামে রয়েছে উচুঁ উঁচু লাল মাটির চালা জমি যেখানে চা আবাদ সম্ভব। উঁচু হতে ঢালু কাঠামোর জমিতে বৃষ্টির পানি জমেনা তাই টেক টিলা আকৃতির এ জমি চা আবাদের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় তার বড় ভাই প্রফেসর লুৎফর রহমান ২০১৫ সালের শেষের দিকে সিলেট হতে চা গাছের চারা কিনে আনেন। এক একর জমির মাটিতে চাষ শুরু করে। সিলেটের শ্রমিক দিয়ে চারা গুলি রোপণ করান। প্রথম দিকে সিলেটের শ্রমিকরা বাগানে চাড়ার পরিচর্যা করার বিষয়ে এলাকার শ্রমিকদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন। বর্তমানে বাগানের চা গাছ গুলোর বয়স হওয়ায় দেড় থেকে ২ ফুট উচুঁ হয়ে ডাল পালায় সবুজ পাতা ছড়াচ্ছে। বাগানের চা পাতা বিক্রয় হচ্ছে। নিজের বাগানের প্রসার বৃদ্ধি ও এলাকার মানুষের চা আবাদে আগ্রহ বাড়ানোর লক্ষে চা গাছের কলম তৈরি করেছেন।
তিনি আরো জানান, চা আবাদে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর আকাশমণির বাগান করা থেকে এলাকার কৃষকরা বিরত থাকবেন। চা রপ্তানিযোগ্য অর্থকরী ফসল হওয়ায় এর চাহিদা সব সময় রয়েছে। তার বাগান হতে অর্গানিক চা তৈরির লক্ষ্যে নিজে একটি মিনি ফ্যাক্টরি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। যাতে এলাকার কৃষকরা চায়ের আবাদ করলে স্থানীয়ভাবে সুবিধা পেতে পারেন। এ এলাকায় উচুঁ চালা জমি রয়েছে যেগুলো প্রায় সময় পতিত গোচারণ ভূমি হিসেবে পরে থাকে। তার মতে ওই সব জমির মালিকরা চা বাগান করলে কাপাসিয়ায় কৃষিতে অতি অল্প সময়েই অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
চা বাগান দেখতে আসা এক যুবক বলেন, চা বাগানের দৃশ্য দেখতে আমাদের সিলেট কিংবা শ্রীমঙ্গল যেতে হতো। এখন থেকে কাপাসিয়ায় চা বাগান দেখতে পারবে। এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আউলিয়া খাতুন বলেন, আমি বাগান পরিদর্শন করেছি বাগান মালিকের প্রয়োজনে সহযোগিতা করা হবে। চা উৎপাদনে কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
কেকে/ এমএস