বাড়ির পেছনের ডোবার পাশে দাঁড়িয়ে হাঁসগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন বিথী রানী রায়। ভোরে খামারের দরজা খুললে একসঙ্গে ডানা ঝাপটিয়ে জলাশয়ের দিকে ছোটে শত শত হাঁস। সেই শব্দই এখন তার জীবনের সুর।
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ছাতিয়ানগড় গ্রামে বসবাস বিথী রানী রায়ের। বছর দশেক আগে শুরু করেছিলেন হাঁস পালন। এখন সেই হাঁসই বদলে দিয়েছে তাঁর জীবন। সংসারে এসেছে সচ্ছলতা, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর বিথী এখন এলাকার একজন সফল নারী খামারি।
বিয়ের পর স্বামী তাপস কুমার রায় ছিলেন বেকার। সংসারে তেমন মূল্যায়ন ছিল না। তখন মায়ের উৎসাহে মাত্র ১০টি হাঁস পুষে হাঁস পালন শুরু করেন বিথী রানী। কিছুদিন পর বাড়ির পেছনের ডোবায় ৫০টি হাঁসের ছানা দিয়ে তৈরি করেন ক্ষুদ্র খামার।
খরচ কম হলেও পরিশ্রম ছিল অনেক। পাঁচ মাস পর হাঁস বিক্রি করে আয় হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। হাঁসের ডিম দিয়েই চলত পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানো। সেখান থেকেই শুরু হয় এগিয়ে চলা।
বর্তমানে খামারে হাঁস রয়েছে ১২০০–এর বেশি। খামার থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০টি ডিম সংগ্রহ করা হয়। হাঁসগুলো ছয় মাসের মধ্যে ডিম দিতে শুরু করে।
বাচ্চা তোলা থেকে শুরু করে ৭০–৭৫ দিনের হাঁস বিক্রি করেন। প্রতিটি জোড়া হাঁস পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় ৮০০–৯০০ টাকায়।
তার স্বামী তাপস কুমার রায় বলেন, আমাদের ৭৫ শতক জমির মধ্যে ১৫ শতকে বাড়ি ও হাঁসের খামার, আর বাকি জমিতে করি ফসল চাষ। আগে চলত খুব কষ্টে, এখন হাঁসই মূল ভরসা।
মঙ্গলবার (২৯জুলাই) সকালে ছাতিয়ানগড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পেছনের পুকুরের ধারে শত শত হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে। খামারের পাশে দাঁড়িয়ে বিথী রানী হাঁসগুলোর দেখভাল করছেন।
তিনি বলেন, খামারের দরজা খুললেই হাঁসগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় পানিতে। সেই দৃশ্য না দেখলে বোঝা যায় না—ওরাই এখন আমার প্রাণ। হাঁসগুলোই আমাকে বদলে দিয়েছে।
বিথী রানী বলেন, শুরুতে কেউ পাশে ছিল না। শুধু আমার মা বলেছিলেন, তুমি পারবে। সেই ভরসা নিয়েই শুরু করি। আজ বাড়িটা খামারে পরিণত হয়েছে। হাঁসগুলোই এখন আমার আত্মবিশ্বাস।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার ঘোষ বলেন,বিথী রানী রায়ের খামার আমাদের উপজেলার সফল খামারগুলোর মধ্যে একটি। আমরা নিয়মিত তাকে টিকা, পরামর্শ ও ভেটেরিনারি সহায়তা দিয়ে থাকি। হাঁস পালন একটি লাভজনক ও টেকসই উদ্যোগ, বিশেষ করে নারীদের জন্য।
তিনি আরো বলেন, খামারিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং আমরা চাই এই সফলতার গল্প আরো ছড়িয়ে পড়ুক।
কেকে/এএম