রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫,
১৯ শ্রাবণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: এনসিপি-ছাত্রদলের সমাবেশ আজ      নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটেনি      এক দফা ঘোষণা      চব্বিশের স্মরণে ২৪ দফা ইশতেহার দেবে এনসিপি      রোববার শাহবাগ এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ      ৫ আগস্ট বিকালে ঘোষণা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র      জামায়াত আমিরের ওপেন হার্ট সার্জারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন      
খোলাকাগজ স্পেশাল
মার্কিন শুল্ক ঠেকাতে জোর প্রচেষ্টা বাংলাদেশের
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ১১:৩৮ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নতুন শুল্ক কাঠামো কার্যকরের সময় ঘনিয়ে এসেছে। সমঝোতায় না পৌঁছালে আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কহার। তবে আসন্ন শুল্ক কমাতে শেষ মুহূর্তেও বাংলাদেশ সরকার ও ব্যবসায়ী মহল সর্বোচ্চ কূটনৈতিক ও লবিং প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইউএসটিআর-এর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের আলোচনার পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মূল লক্ষ্য বাংলাদেশকে ‘বৈষম্যমূলক শুল্ক হার’ থেকে রক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান বাজার অবস্থান টিকিয়ে রাখা।

তবে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো বাণিজ্যিক চুক্তি হবে না জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এমন কিছু করা হচ্ছে না; যাতে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়। বরং দেশের স্বার্থ রক্ষার কারণেই সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি কোনো কারণে ১ আগস্টের মধ্যে বৈঠক না হয়, তবে পরবর্তীতেও আলোচনার সুযোগ থাকবে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক কমানোর বিষয়ে দেশটির কাছে লেখা চিঠির জবাব এবং দেশটিতে আবার সফরের আমন্ত্রণ পেতে শেষ মুহূর্তেও অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কহার কমিয়ে আনার ব্যাপারে দুই দফা আলোচনা হলেও এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আজ শুক্রবার একটি অনলাইন বৈঠক হওয়ার কথা। তবে সরাসরি বৈঠকের এখনো সময় দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। 

তৃতীয় দফা বৈঠকের অপেক্ষা :  

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা গত পরশুদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রীকে আমাদের করণীয় সম্পর্কে একটি পত্র দিয়েছি। আমরা জবাবের অপেক্ষায় আছি। আমরা আমন্ত্রণের অপেক্ষায়ও আছি। জবাব এবং আমন্ত্রণ পেলে আমাদের নেগোসিয়েশন টিমসহ সবাই একত্রে মিলে আমরা যাব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য যেমন প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমাদের কর্মকাণ্ডে কোনো স্থবিরতা নেই। কর্মকাণ্ড যথেষ্ট গতিশীলতার সঙ্গে এগোচ্ছে।

সর্বশেষ যে মিটিং করেছেন সেখানে কোনো ইঙ্গিত পেয়েছিলেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে আমাদের জন্য হয়তো ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ্।’

বাংলাদেশি পণ্যে বাড়তি শুল্ক কমানোর দরকষাকষির জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘এটি ব্যবসায়ীদের এখতিয়ার। সরকার কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি। আপনাদের একটা জিনিস বুঝতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাশনাল ইমারজেন্সি বিনিময়ে কাজটি করছে। এখানে যে কাঠামোর ওপর ঘটনাটা ঘটছে, এ কাঠামোতে লবিস্টদের করার কোনো কিছু আছে কি না আমি ঠিক জানি না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। এ পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারবে না। পরিবর্তনগুলোতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অনেক আইনি প্রক্রিয়া আছে। এ আইনি প্রক্রিয়াগুলো একজন লবিস্টের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় বলে আমার ধারণা। আমরা সরকারের প্রায় সব মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছি। গত ১৫ দিন ধরে দিন-রাত কাজ হয়েছে এটির ওপর। আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা হয়তো একটা অনলাইন মিটিংয়ের সিডিউল পাচ্ছি আজ-কালকের মধ্যে। বিষয়গুলো গতিশীলভাবে এগোচ্ছে বলেই চিঠির ওপর ভিত্তি করে তারা একটি অনলাইন মিটিংয়ের সিডিউল দিয়েছে। অনলাইন মিটিংয়ের ভিত্তিতে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মকাণ্ড করব। অনলাইন মিটিং সম্ভবত কাল [শুক্রবার] হবে।’
 
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত পারস্পরিক শুল্ক আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও পাকিস্তানের ওপর শুল্কহার অনেক কম।  

আগামী ২৬-২৭ জুলাই বৈঠকের জন্য সময় নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়ে গত ২২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি দেশটির প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানপত্র লিখিতভাবে পাঠিয়েছে ঢাকা। তারপরও মিটিংয়ের সময় নির্ধারণ করে কোনো উত্তর না আসায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।  

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ইউএসটিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। ১ আগস্ট নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই বাংলাদেশকে মিটিং করতে যুক্তরাষ্ট্র সময় দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় ছাড় পাওয়ার আশায় গতকাল সরকারিভাবে দেশটি থেকে বাড়তি দামে ২.২০ লাখ টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ গমে প্রোটিনের হার কিছুটা বেশি। দামও কিছুটা বেশি পড়বে। তবে শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর কষাকষিতে সহায়তা পাওয়া এবং গম আমদানির উৎস বাড়ানোর জন্য এ গম কেনা হচ্ছে। 

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিন উদ্দেশ্যে এ গম কেনা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে : শুল্ক ইস্যুতে দেশটির সঙ্গে দর কষাকষিতে সহায়তা পাওয়া। একইসঙ্গে গাম আমদানির উৎস বাড়ানো এবং এ গরমে প্রোটিনের হার কিছুটা বেশি।’

বৈঠকে উপস্থাপিত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এসব গম কেনা হবে। প্রতি টন গম কিনতে ব্যয় হবে ৩০২.৭৫ ডলার। সে হিসাবে ২.২০ লাখ টন গম কিনতে ব্যয় হবে ৮১৭.৫৭ কোটি টাকা। প্রতি কেজি গমের দাম পড়বে ৩৭.২০ টাকা।

অর্থ উপদেষ্টা আরো বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করবে। ‘আমরা আরো কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করব, তবে এখনই সেগুলোর নাম প্রকাশ করছি না।’

উপদেষ্টা আরো জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি খুবই কম, প্রায় ৬.৫ থেকে ৬.৭ বিলিয়ন ডলার। 
তিনি বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা ১ আগস্টের কিছু আগেই যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। ‘তিনি ইউএসটিআরের সঙ্গে বৈঠক করবেন; আমিও আমার নিজস্ব মাধ্যমে কথা বলছি।’

সালেহউদ্দিন বলেন, এই পর্যায়ে শুল্ক আলোচনার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করলে কোনো ইতিবাচক ফল আসবে না, কারণ সিদ্ধান্তগুলো খুব দ্রুত আসছে।
 
এই আলোচনায় ব্যবসায়ীদের যুক্ত করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীরা আলোচনার বৈঠকে প্রবেশের সুযোগ পাবেন না। তিনি আরো বলেন, ‘তাদের বৈঠকের বাইরে শোরগোল করতে হবে, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না।’

উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘আমি ইউএস চেম্বারের সঙ্গে কথা বলেছি; বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের ধারণা বেশ ইতিবাচক।’

প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকরের কথা জানান। নতুন করে এ শুল্ক কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে গড় শুল্কহার দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  মার্কিন শুল্ক   জোর প্রচেষ্টা   বাংলাদেশ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

এনসিপি-ছাত্রদলের সমাবেশ আজ
নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটেনি
এক দফা ঘোষণা
ভেড়ামারায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মা—ছেলের মৃত্যু
‘জনগণই খুনি হাসিনাকে গণভবন থেকে নামিয়ে এনেছে’

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরের প্রভাবশালী আ.লীগ নেতা পঁচা দেলু গ্রেফতার
উখিয়ায় জামায়াতের পথসভায় জনস্রোত
মৌলভীবাজারে পৃথক দুর্ঘটনায় ২জনের মৃত্যু
‘শিল্পীর দূরদৃষ্টিতে ফেলনা বলতে কিছু নেই’
চাটমোহরে ভাঙা রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close