বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫,
২ শ্রাবণ ১৪৩২
বাংলা English

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
শিরোনাম: যুবদল নেতাসহ ৮ জনকে কুপিয়ে জখম      গোপালগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক ১৪      সারা দেশে এনসিপির বিক্ষোভ কর্মসূচি আজ      আন্দোলনে উত্তাল দেশ      রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জ, নিহত ৪      শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়      কারফিউ শুরু, থমথমে রাত গোপালগঞ্জে      
খোলাকাগজ স্পেশাল
ফিরে দেখা গণ-অভ্যুত্থান
আন্দোলনে উত্তাল দেশ
খোলা কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ১২:২২ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

১৭ জুলাই ২০২৪ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা, সংঘর্ষ এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এদিন আন্দোলন কেবল ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং এটি দেশের ৪৭টি জেলায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল, যা ছিল এক অভূতপূর্ব ছাত্র-জনতার গণজাগরণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ, ইন্টারনেট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজিরবিহীন দমন-পীড়ন, বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা, এবং সরকারের কড়া অবস্থান সব মিলিয়ে দিনটি পরিণত হয় এক স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র-জনতার গণজাগরণে। 

আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি : ১৬ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ১৭ জুলাই আরো তীব্র আকার ধারণ করে। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ এবং সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা : ১৬ জুলাই সরকার সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। এর ধারাবাহিকতায়, ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং তাদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

হল ত্যাগের নির্দেশ অমান্য : সরকার পূর্বদিনেই (১৬ জুলাই) সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল। ১৭ জুলাই সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল অংশ এই নির্দেশ অমান্য করে হলে অবস্থান করেন এবং আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকেন। তারা বুঝতে পেরেছিলেন, হল ছেড়ে দিলে আন্দোলন দুর্বল হয়ে যাবে। এই প্রতিরোধের মানসিকতাই আন্দোলনকে আরো গতিশীল করে তোলে।

সংঘর্ষ ও প্রাণহানি : ১৭ জুলাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বিশেষ করে ঢাকার রামপুরা এলাকায় প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের বড় ধরনের সংঘাত ঘটে। আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দিন দেশজুড়ে সংঘর্ষে অন্তত ১৭ জন নিহত হন। এর মধ্যে ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হন বলে পুলিশ সূত্র জানায়, যার মধ্যে একজন বাসচালকও ছিলেন, যিনি বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের তীব্রতা : সকাল থেকেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, খুলনা, দিনাজপুর, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, যশোর, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ, মিছিল, এবং বিক্ষোভে অংশ নেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, এবং অন্যান্য প্রধান সড়কগুলো অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। শত শত যানবাহন আটকা পড়ে, জনজীবন স্থবির হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা শুধু কোটা সংস্কারের দাবিতেই থেমে থাকেননি, তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মৃত্যুর ঘটনার বিচার চেয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। অনেক জায়গায় সাধারণ জনগণও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলনে শামিল হন। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজিরবিহীন দমন-পীড়ন : আন্দোলন দমনের জন্য সরকার নজিরবিহীন শক্তি প্রয়োগ করে। পুলিশ, র‌্যাব, এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর বিপুল সংখ্যক সদস্য মাঠে নামানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, নিউমার্কেট, মিরপুর, মতিঝিলসহ বিভিন্ন সংবেদনশীল এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট এবং কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি গুলি চালানো হয়। বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য বিক্ষোভকারী আহত হন। 

ইন্টারনেট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পতন : আন্দোলনকারীদের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে এবং গুজব ছড়ানো বন্ধ করার অজুহাতে সরকার মোবাইল ইন্টারনেট সেবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাও সীমিত করা হয়। এর ফলে সারা দেশ কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা হয় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে, কারণ এটি ছিল জনগণের তথ্য জানার এবং মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। ইন্টারনেট বন্ধের ফলে শিক্ষা, বাণিজ্য, এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ : ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি আন্দোলনকারীদের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানান এবং মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ঘটে যাওয়া মৃত্যুর ঘটনাগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেন। 

দেশব্যাপী ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ ঘোষণা : ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হামলার প্রতিবাদে পরদিন অর্থাৎ ১৮ জুলাই, দেশব্যাপী ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ পালনের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণা অনুযায়ী, হাসপাতাল এবং জরুরি পরিষেবা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে না এবং অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত কোনো যানবাহন চলাচল করবে না। তারা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়। এই শাটডাউন সফল করার জন্য শিক্ষার্থীরা সড়ক, রেলওয়ে, এবং নৌপথে পিকেটিং শুরু করেন। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা চালায়। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন, সেতু ভবন, বিআরটিএ অফিস, এবং বিভিন্ন জেলায় সরকারি কার্যালয়গুলোতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঢাকার মেট্রো রেল সেবাও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়, যা ছিল এক বড় ধরনের আঘাত।

ছাত্রলীগ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষ এবং ক্যাম্পাস ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা : আন্দোলন চলাকালীন বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল)-এর নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের তীব্র সংঘর্ষ হয়। অনেক স্থানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হন এবং শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা করেন। এটি ছিল দেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  ফিরে দেখা   গণ-অভ্যুত্থান   আন্দোলন   উত্তাল দেশ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

যুবদল নেতাসহ ৮ জনকে কুপিয়ে জখম
গোপালগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক ১৪
১ ঘণ্টার ব্যবধানে আদাবর ও মোহাম্মদপুরে ২ জনকে হত্যা
শাস পার্টির পদত্যাগ, নতুন চাপে নেতানিয়াহু
শ্রীপুরে বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মিন্টু আটক

সর্বাধিক পঠিত

রবিউল ইসলাম নয়ন: পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার? নাকি আসলেই অপরাধী?
কেরানীগঞ্জে চাঁদা তোলার সময় হাতেনাতে গ্রেফতার ৫
‘মানুষ মরলে আমার কি’
অশুভশক্তি এখনো জুলাই শহিদদের কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলা বাণিজ্য করছে
জুলাই যোদ্ধাদের ছাড়াই জুলাই শহিদ দিবসের সভা
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close