সাম্প্রতিক দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে করা মন্তব্যকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। কথার লড়াইয়ে একে অপরকে ছাড় দেয়নি একবিন্দুও। শীর্ষ নেতৃত্বের কথার লড়াই, আর কর্মীদের স্লোগান এবং আচরণে ক্রমেই বাড়তে থাকে অস্থিতিশীলতা। মূলত রাজধানীর পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ বিভেদে জড়ায় দলগুলো। ফলে এ দ্বন্দ্বে গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।
তাদের মতে, বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলগুলোর এ দ্বন্দ্ব দেশে রাজনীতিকে সংকটের দিকে ঠেলে দিবে। এটি সমাধান না হলে এটি দেশকে বড় ধরনের সহিংসতার দিতে ঠেলে দেবে বলেও আশঙ্কা তাদের। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সোহাগ হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার বিরোধের জন্ম নেয়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবদলের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকা অভিযোগে বিএনপির বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠে জামায়াত, চরমোনাই ও এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনগুলো।
নানা মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকে দলগুলোর নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল করেন দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসব মিছিলের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে ‘টিনের চালে কাউয়া, তারেক কোন ...; চাঁদা তুলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে’ এমন অশালীন ও আপত্তিকর নানা স্লোগান এবং বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এতে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতারা, দেশজুড়ে কর্মসূচির ডাক দেয় ছাত্রদল। ওই কর্মসূচিতে জামায়াত, এনসিপি ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ‘জামাত শিবির রাজাকার, গুজব রটায় চমৎকার; ধর্ম জপে গিবত গায়, পীর সাহেব চরমোনাই; এক বোতল দুই ছিপি, জামাত আর এনসিপি’ স্লোগান এবং একইসঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। একই ইস্যুকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী ও চরমোনাই পীর কোথায় ছিল এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
এদিকে টানা কয়েক দিনের পাল্টাপাল্টি এসব সমালোচনার পর অনেকটা হুঁশ ফিরেছে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। ইতোমধ্যে অশালীন স্লোগান ও কটু মন্তব্য পরিহারের জন্য দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য বার্তা দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত ও চরমোনাই।
ইসলামী আন্দোলন আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং সমালোচনা থাকবে। আবার কখনো কখনো তা তীব্রও হতে পারে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই সীমালঙ্ঘন করা উচিত নয়। এ সময় দল কিংবা দলের নেতাকর্মীদের আচরণে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে, এজন্য দুঃখপ্রকাশ করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ফেসবুকে লিখেন ‘সম্প্রতি দিনগুলোতে আমাদের সমাজ জীবনে অনেক বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে সমাজকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব এককভাবে কারো নয়।
সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সবাইকেই সমন্বিতভাবে এ দায়িত্ব নিতে হবে। অর্থাৎ, এ ধরনের স্পর্শকাতর সময়ে জাতীয় ঐক্যের ন্যূনতম জায়গাটা থাকা প্রয়োজন।’
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই আপনার নিজস্ব অধিকার মন্তব্য করে তিনি লিখেন, ‘এক্ষেত্রে অন্যায়ের প্রতিবাদ হোক শালীন প্রতিবাদের ভাষায়।
সমালোচনা হোক যুক্তি ও তথ্যনির্ভর। কোনো ব্যক্তি বা দলের চরিত্রহনন একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত ও নিন্দনীয়। এ ধরনের আচরণ সমাজজীবনে কেবল বিশৃঙ্খলা, বিষোদগার ও অনৈক্যের বীজ বপন করবে। তাই সবার পক্ষেই সংযত, সাবধানী ও দায়িত্বশীল আচরণ অত্যন্ত প্রয়োজন।’
অন্যদিকে দু-একটি ইসলামী দল জিয়াউর রহমানের অনুকম্পায় রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে। ইসলামের জন্য কারো অনুভূতি থাকলে সেটা বিএনপির বলে মন্তব্য করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। এ সময় নেতাকর্মীদের কোনো উস্কানিতে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে কুড়িগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে ছাত্রজনতার আন্দোলনে কুড়িগ্রাম জেলার ১০ শহিদ পরিবারে আর্থিক অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠান প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
কেকে/ এমএস