বর্ষা মৌসুম আসতে না আসতেই পটুয়াখালীর দশমিনায় বুড়াগৌরঙ্গ ও তেঁতুলিয়া নদীর অব্যাহত ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ছোট হয়ে আসছে উপজেলার মানচিত্র। প্রতিনিয়ত নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি।
দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় এলাকার বহু পরিবার ফসলি জমি ও ভিটামাটি হারিয়ে বিভিন্ন চরে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কিছু সংখ্যক পরিবার নদীভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে জীবিকার সন্ধানে পরিবার পরিজন নিয়ে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে চলে গেছেন।
দশমিনা উপজেলাটি তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌড়ঙ্গ নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় এ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অন্তত চারটি ইউনিয়ন বিভিন্ন এলাকা নদী ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে।
উপজেলার দশমিনা সদর, বাঁশবাড়িয়া, রনগোপালদী এবং চরবোরহান। এ চার ইউনিয়নের প্রায় দুই ডজনেরও অধিক গ্রামে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চর বাঁশবাড়িয়া, চর ভূতাম চর আজমাইন, টনটনিয়া। দশমিনা সদর ইউনিয়নের হাজির, হাট, গোলখালী, কাটাখালী, চরহাদী, সৈয়দ জাফর। রনগোপালদী ইউনিয়নের দক্ষিণ রনগোপালদী, আউলিয়াপুর, চরঘূর্ণী, পাতার চর। চরবোরহান ইউনিয়নের উত্তর চর শাহজালাল, দক্ষিণ চর শাহজালাল এবং চর বোরহানের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশে তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিগত সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদশর্ন করলে ও ভাঙন প্রতিরোধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের টনটনিয়া গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন জানান, বিগত দশ বছরে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় শতাধিক একর ফসলি জমি তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরঙ্গ নদী গর্বে বিলীন হয়েছে, গৃহহীন হয়েছে বহু পরিবার।
দশমিনা সদর ইউনিয়নের হাজীর হাট এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মো. স্বপন গাজী জানান, বছর দুয়েক আগেও হাজীর হাট বাজার থেকে নদী ছিল প্রায় এক কিলোমিটার দূরে, এখন প্রায় বাজার ছুঁই ছুঁই অবস্থা, এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে এক সময় হাজীর হাট বাজার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
রনগোপালদী ইউনিয়নের আউলিয়াপুর গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রনগোপালদী ইউনিয়নে প্রায় দশ কিলোমিটার বেরিবাদ বেরীবাঁধের পুরোটাই নদীভাঙ্গন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নদী বেরীবাঁধের খুবই নিকটে চলে এসেছে।
একাধিক জায়গায় বেরীবাঁধে ভাঙ্গনও ধরেছে। উপজেলার চরবোরহান ইউনিয়নের তিন ও চার নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ ও পশ্চিম চরবোরহানের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ওই এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সেন্টার বাজারসহ বিশাল এলাকা, তেতুঁলিয়া ও বুড়ো গৌরাঙ্গগ নদীর করাল গ্রাসের মধ্যে রয়েছে।
চরবোরহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইয়াকুব হোসেন বলেন, চরবোরহানের গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল সেন্টার বাজার নদী ভাঙ্গনের কারণে এখন বাজার থেকে নদীর দূরত্ব মাত্র দের-দুইশ ফুট হবে। দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে অচিরেই চরবোরহানের সেন্টার বাজারসহ বিশাল এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
কেকে/ এমএস