শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫,
৭ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: কুমিল্লায় লরির নিচে চাপা পড়ে একই পরিবারের ৪ জন নিহত      ড. ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘের বিশেষ দূতের সাক্ষাৎ      ইসরাইলি হামলায় গাজায় ২৪ ঘণ্টায় আরো ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত      ফের পিএস বিতর্কে আসিফ      ভাগ পেতেন ডিসি-এসপিরাও      রাজস্ব খাতের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞরাই      ইতা‌লির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির ঢাকা সফর বাতিল      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
মাদক নয়, আলোর পথের যাত্রী হোক তরুণ সমাজ
নুসরাত জাহান জেরিন
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫, ৬:৫৩ পিএম
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

একটি উন্নত দেশ ও জাতির জন্য তরুণ সমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তরুণরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রাণশক্তি, একটি জাতির ভবিষ্যৎ এবং উন্নয়নের সারথি। তাদের হাত ধরেই নির্মিত হয় আগামী দিনের পথচলা, গড়ে ওঠে একটি সভ্য ও উন্নত সমাজ, দেশ, জাতি, পৃথিবী। অথচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তরুণ সমাজের একটি অংশের বিপথগামিতা এ দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির অন্তরায় হয়ে আছে। বর্তমান সময়ে এ তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ মাদকের করাল গ্রাসে ধ্বংস হচ্ছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মাদকাসক্তদের কারণে ঘটছে নানা ধরনের অপরাধ; শুধু ছেলেরা নয়, শিশু, কিশোর ও নারীদের মাদকাসক্তিও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ে যে তরুণ-তরুণীরা ছিল মেধাদীপ্ত, মাদক সেবন করে কেউ অকালে করুণ মৃত্যুবরণ করছে, আবার কেউ জড়িয়ে পড়ছে লোমহর্ষক বিভিন্ন অপরাধে—যার নেপথ্যে মাদকের প্রভাবই প্রধান।

মাদক এমন এক অভিশাপ, যা একজন মানুষকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এটি যেমন ব্যক্তি জীবনে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি করে, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রকেও ভেতর থেকে খেয়ে ফেলে। একবার এ অভ্যাসে জড়িয়ে পড়লে তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, আইসসহ নানা মাদকের বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আলো ছেড়ে অন্ধকারের পথ বেছে নিচ্ছে। মাদকাসক্তরা শুধু নিজের জন্য নয়, পরিবার ও সমাজের শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ হয়ে ওঠে।

প্রাথমিক অবস্থায় খারাপ বন্ধুদের প্ররোচনায় শখের বশে মাদক সেবন শুরু করে, পরে দিনদিন আসক্ত হয়ে যায়। একবার আসক্ত হলে ফিরে আসার পথ খুঁজে পায় না। এ ছাড়া তরুণ বয়সে মানসিক দ্বন্দ্ব, পরিচিতির আকাঙ্ক্ষা, ভুল বন্ধুত্ব, হতাশা, পারিবারিক অসহযোগিতা, বেকারত্ব কিংবা চ্যালেঞ্জ নেওয়ার প্রবণতা থেকেও অনেকেই মাদকের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ে। আবার কিছু তরুণ ভুল ধারণায় বিশ্বাস করে যে, মাদক গ্রহণে তারা সমাজে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে কিংবা অপরাধ জগতের নায়ক হয়ে উঠবে—এ ধারণা থেকেই তারা অপরাধ জগতে মিশে যায়। বাস্তবে অন্ধ আকর্ষণই তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।

মানুষ এ পৃথিবীতে জন্ম নেয় একবার, মৃত্যু হয় একবার। এ জীবনে সম্ভাবনা ও নানা স্বপ্ন থাকলেও, মাদকের কারণে তা সফল করা সম্ভব হয় না। একজন মাদকমুক্ত তরুণ আত্মবিশ্বাসী, উদ্যমী, সৃজনশীল ও কর্মক্ষম হয়। তিনি পরিবারকে ভালোবাসেন, দেশ, জাতি ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করেন, দেশের জন্য কিছু করতে চান। এভাবেই গড়ে ওঠে একটি আলোকিত সমাজ। কিন্তু মাদক সেই আলোর পথে বড় চরম বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে, আলোকোজ্জ্বল জীবনকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে।
 
মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে সরকারসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নানামুখী কার্যক্রম রয়েছে। কিন্তু নানা কারণেই সেসব কার্যক্রম পুরোপুরি সফল হচ্ছে না। অপরাধচক্র এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এ সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলেছে। আমাদের দেশে পাশের বিভিন্ন দেশ থেকে মাদকদ্রব্য পাচার হয়ে আসে। প্রতিদিন পত্রিকায় বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় বিপুল পরিমাণ মাদক আটকের খবর পাওয়া যায়, তবুও পাচার থেমে নেই।

পাচারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমাদের দেশ থেকে ডিম, মাছ ইত্যাদি পাশের রাষ্ট্রে পাচার হয়, অন্যদিকে এ দেশে মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল পাচার হয়ে আসে—যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টা থাকলেও, সমস্যার তুলনায় প্রতিরোধে আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিরোধ জোরদার হচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারিভাবে মাদকবিরোধী কার্যক্রম আরো গতিশীল করা প্রয়োজন।

সামাজিকভাবে স্বপ্রণোদিত হয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সবারই প্রতিরোধের দেওয়াল গড়া প্রয়োজন। মানসিক শক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণে তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা জরুরি। যারা অপরাধী, তাদের আইনের আওতায় এনে সংশোধনের মাধ্যমে আলোর জীবনে ফিরিয়ে আনতে পরিকল্পনা ও বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে আন্তরিকতা দরকার। বেকারত্ব মোচন, লেখাপড়ায় উৎসাহ, ক্রীড়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়িয়ে এ চর্চায় শিশু বয়স থেকে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে। পারিবারিক শিক্ষা, নৈতিকতা ও সামাজিক সংস্কৃতি সম্পর্কে তরুণদের সচেতন করাও অত্যন্ত প্রয়োজন।

আমাদের এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তরুণদের ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তরুণ-যুবরাই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রচনা করেছে। দেশ-জাতি গঠনে দৃপ্ত শপথে এখনো তরুণরা ব্যাপক উৎসাহী। তাদের এই উৎসাহকে প্রেরণা দিতে মাদকের আগ্রাসন রোধ করা জরুরি। আজকের একজন সৎ, সাহসী, স্বপ্নবাজ তরুণই দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে, আগামী দিনেও দেবে। তাই তরুণ সমাজকে রক্ষার দায়িত্ব সবার। এক্ষেত্রে সবাইকে মাদকমুক্ত সমাজ, দেশ ও জাতি গড়তে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তবেই পাওয়া যাবে আলোর পথ, আর সেই আলোয় আলোকিত হবে প্রিয় বাংলাদেশ।

তরুণ সমাজের মাধ্যমেই এ দেশ একদিন বিশ্বে উন্নত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সেই আলোর পথেই তরুণদের অগ্রগামী করলে প্রতিটি তরুণ হবে আলোকময়, মেধাদীপ্ত, উজ্জ্বল, দেশপ্রেমী সুনাগরিক এবং আলোকিত মানুষ। মাদকের অন্ধকার পথে নয়—মাদকমুক্ত, আলোর পথের যাত্রী হবে আগামীর আশা, নেতৃত্ব—সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : কলামিস্ট

কেকে/এএম
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

গজারিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল গুয়াগাছিয়ায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন
দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে নূরে আলমের সংগ্রামী জীবন
তাহিরপুরে ভুয়া এনএসআই সদস্য আটক
নীলফামারীতে ট্রাক্টরের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
কুমিল্লায় লরির নিচে চাপা পড়ে একই পরিবারের ৪ জন নিহত

সর্বাধিক পঠিত

মদনে স্ত্রীর নির্যাতন মামলায় সাবেক কমিশনার গ্রেফতার
প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরে বেড়ানো আ.লীগ নেতা অবশেষে গ্রেফতার
নীলফামারীতে বালিকাদের ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত
রাবির বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী শুরু ২৩ আগস্ট
মৌলভীবাজারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮ শিক্ষক চাকরিচ্যুত

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close