আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রচারে ধর্মের অপব্যবহার করছেন বলে নেটিজেনরা অভিযোগ তুলেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এই নির্বাচনকে ঘিরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু না হলেও, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। তবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রচারণায় ধর্মীয় অনুষঙ্গ যেভাবে ব্যবহার করছে তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি। অনেক ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের মতে এ ধরনের প্রচারণা মানুষকে গোমরাহি করছে।
কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের নেতা দাবি করেছেন, তাদের ভোট দিলে সেই ভোট ইসলামের পক্ষে যাবে। আবার একটি দল দাবি করেছে, তারাই একমাত্র আল্লাহর দল, অন্যরা শয়তানের। আবার এক নেতা দাবি করেছেন, তাদের দলকে একটি ভোট দিলে ১৫ কোটি রাকাত নামাজের ছওয়াব হবে। এ ধরনের বক্তব্যে দেশের রাজনীতিতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কোনো একটি দলকে ভোট দিলে জান্নাত পাওয়া যাবে এমন বক্তব্য বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও সংগঠনটির মুখপাত্র মুফতি আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভেই জান্নাত লাভ হয়। গণতান্ত্রিক সিস্টেমে ভোট দিলে কি দ্বীন বিজয়ী হবে এ রকম কোনো গ্যারান্টি আছে? সুতরাং এ ধরনের বক্তব্য উচিত নয়, এটা বিভ্রান্ত্রিকর।’
রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার আধুনিক গণতান্ত্রিক চেতনা ও মূল্যবোধের পরিপন্থি। গণতন্ত্রের মূলভিত্তি হলো জনস্বার্বভৌমত্ব। গণতন্ত্র, ধর্ম, বর্ণ, জাতি সকলের সাম্যাবস্থা ও সহঅবস্থানের কথা বলে, বলে সকলের সমান অংশীদারত্বের সুযোগ ও অংশগ্রহণের কথা। কিন্তু ধর্মকে যখন রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করা তখনই তা জন্ম দেয় ঘৃণা ও সংঘাতের। অন্য দলগুলোকে ভিলিফাই করতে ধর্মের ব্যবহার করে যখন তাদের শয়তানের দলের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এটি আসলে আমাদের জাতিগতভাবে বিভাজনের দিকে নিয়ে যায়। কাউকে জান্নাত দেবার মালিক আল্লাহ- সেটি যখন কোনো মানুষ ঘোষণা দেয় তা স্রেফ সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তই করে। অনেকেই মনে করেন ধর্মকে ব্যক্তিগত বিশ্বাসের জায়গায় রাখলে ঘৃণা ও সংঘাত কমে।
সম্প্রতি আলোচিত ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজা বলেন, ‘রাসুল মুহাম্মাদকে (সা.) আল্লাহতায়ালা সাংবাদিক হিসেবে দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। রাসুল মানে সংবাদ বাহক। সে হিসেবে নবিজি সাংবাদিক ছিলেন। আমির হামজা জামায়াতে ইসলামীর কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি প্রার্থী। তার এ বক্তব্যের পর অনেক ইসলামি ব্যক্তিত্ব সমালোচনা করেছেন। জামায়েতের টাঙ্গাইল জেলার সেক্রেটারি মো. হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে যে, মসজিদে রাজনীতি করতে না দিলে কুরআন তিলাওয়াতও হবে না বলে এক সমাবেশে হুমকি দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া জামায়াতের নারী শাখার সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ নারীদের বোঝাচ্ছেন, জামায়াতকে ভোট না দিলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না।
প্রচারণায় এ ধরনের অপকৌশল ও ধর্মের অপব্যবহার উদ্বেগজনক। এ ধরনের প্রচারণায় বিভ্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। হাজার বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করে আসছে, যে পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ববোধের চর্চা করে আসছে সেটি যাতে নষ্ট হয়ে না যায় সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। গণতন্ত্রের মূল আকাক্সক্ষাকে সমুন্নত রাখতে ঘৃণা নয়- পরস্পর বোঝাপড়ার রাজনীতির চর্চা করতে হবে। বিভাজন ভুলে এক অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বিনির্মাণ করতে হবে।
কেকে/ এমএস