বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫,
২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: আন্দোলনরত শিক্ষকরা কাজে না ফিরলে আইনি ব্যবস্থা      রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসিকে তফসিল দেওয়ার আহ্বান নাহিদের      খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা      অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে জিরো টলারেন্স নিশ্চিত করতে হবে : উপদেষ্টা ফরিদা      প্রবাসীরা ৬০ দিনের বেশি দেশে থাকলে ফোন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে      এভারকেয়ারের পাশে সেনা-বিমান বাহিনীর মহড়ায় বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ      শীত নিয়ে দুঃসংবাদ দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
নিরাপত্তার চাদরে অনিশ্চিত প্রত্যাবর্তন
মো. জাহেদুল ইসলাম
প্রকাশ: সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চলমান সব ইস্যুকে ছাপিয়ে যে বিষয়টি এখন বহুল আলোচিত, তা হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কেন তার সন্তান পাশে নেই সেই প্রশ্নবানে জর্জরিত বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কেন তারেক রহমানের মতো এমন হাই-প্রোফাইল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রায় দুই দশকের কাছাকাছি পলিটিক্যাল এক্সাইলে থেকেও এমন অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও দেশে ফিরছেন না। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন থেকে শুরু করে গ্রামের চায়ের দোকানের আড্ডার মাঝেও বহুল আলোচিত প্রশ্নসমূহ এখন তাকে ঘিরে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শ্রমজীবী মানুষের পাশাপাশি নীতিনির্ধারক, সর্বত্র তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছেই। তবে বাস্তবতা আমাদের আলোচনার টেবিল থেকে অনেকটা ভিন্ন। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের মতো দেশে প্রায় দুই দশকের মতো পলিটিক্যাল এক্সাইল নিয়ে থাকা কারও পক্ষেই চাওয়া মাত্রই স্বদেশে ফেরা এতটা সহজ নয়।

সকল তাত্ত্বিক আলোচনার বাইরেও রয়েছে আইনি, কূটনৈতিক, প্রশাসনিক এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানাবিধ বাঁধা। সকল বিষয়ের সরল সমাধান আসলে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সুযোগ নেই। মূলত উভয় দেশের ইমিগ্রেশন, নাগরিকত্ব, এক্সাইল, অপরাধ আইন এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে এই সমস্যাগুলোর উদ্ভব হয়েছে। নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাই-প্রোফাইল রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সাধারণত অ্যাসাইলাম, হিউম্যানিটারিয়ান প্রোটেকশন, কিংবা ইন্ডিফিনিট লিভ টু রিমেইন (আইএলআর) নিয়ে যুক্তরাজ্যের মতো দেশে বসবাস করে। 

এই বিষয়গুলো একদিকে যেভাবে ব্যক্তির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, একইভাবে তার স্বদেশে ফেরার পথগুলোও অবরুদ্ধ করে দেয়। যদি কোনো ব্যক্তি নিজের নিরাপত্তার জন্য রাজনৈতিক এক্সাইল গ্রহণ করে, তবে নিজ দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তাকে সেই এক্সাইল স্ট্যাটাস থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। এক্সাইল স্ট্যাটাস মূলত একটি প্রটেক্টিভ মেকানিজম যা নিজ দেশে নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের জন্য তৈরি। এই স্ট্যাটাসের মূল ভিত্তিই হলো এই যুক্তি যে, উক্ত ব্যক্তির নিজ দেশে ফেরা তার জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। কিন্তু এখানেই তৈরি হয় একটি বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি। যখন কেউ রাজনৈতিক এক্সাইল থেকে স্বদেশে ফিরতে চান, বিশেষ করে নেতৃত্বের ভূমিকায়, তখন প্রশ্ন ওঠে যে সেই দেশ যদি এতটাই বিপজ্জনক থাকে তাহলে কীভাবে তিনি সেখানে নিরাপদে ফিরে রাজনীতি করতে পারবেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারকে বিবেচনা করতে হয় যে, পরিস্থিতির সত্যিকারের পরিবর্তন ঘটেছে কিনা।

সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয় পাসপোর্টকে ঘিরে। অইেশ ক্ষেত্রে দেখা যায় এক্সাইল গ্রহণের জন্য ব্যক্তি নিজ দেশের পাসপোর্ট সারেন্ডার করে দেয়। যদিও এক্সাইল আবেদনের জন্য এটি একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয় হিসেবে বিবেচিত, তথাপি এর কিছু কঠিন দিকও আছে। একবার যদি পাসপোর্ট সারেন্ডার করা হয় তাহলে সেই পাসপোর্ট দিয়ে আবেদনকারী আর কোথাও ভ্রমণ করতে পারবেন না। তা ছাড়া কখনো প্রয়োজন হলে সাধারণ প্রক্রিয়ায় এর রিনিউ করা দুরূহ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে এক্সাইলে থাকা ব্যক্তিকে নির্ভর করতে হবে কোনো টেম্পোরারি ট্রাভেল পাস কিংবা নিজ দেশ থেকে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে নতুন করে ইস্যু করা পাসপোর্টের ওপর। এই প্রক্রিয়াটি যতটা সহজ শোনায়, বাস্তবে ততটা সহজ নয়। বাংলাদেশ মিশন থেকে নতুন পাসপোর্ট পেতে গেলে প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে যে ঢাকা থেকে সবুজ সংকেত এসেছে। 

দীর্ঘদিন এক্সাইলে থাকা একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া আরও জটিল হতে পারে, বিশেষ করে যদি তার বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলা থাকে বা রাজনৈতিক বিতর্ক থাকে। এ ছাড়াও যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও নির্দিষ্ট কিছু ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হতে পারে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় এবং নিরাপদে ফিরছেন। একজন রাজনৈতিক এক্সাইলি যখন স্বদেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি মূলত তার সেফটি নেট হারাচ্ছেন। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং উইনার-টেকস-অল সংস্কৃতি বিদ্যমান, সেখানে এই সেফটি নেট হারানোর ঝুঁকি অনেক বেশি। আজ যে সরকার বন্ধুত্বপূর্ণ, কাল সেই সরকারের পতন ঘটলে নতুন সরকার হয়তো শত্রুভাবাপন্ন হতে পারে। এই অনিশ্চয়তা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলে। 

প্রশাসনিক সকল বিষয়ের সমাধান করার পাশাপাশি এক্সাইলে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত সব মামলার নিষ্পত্তি এখানে অন্যতম একটি বিষয় হিসেবে বিবেচিত। যুক্তরাজ্যে এক্সাইল আবেদনের সময় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে সকল মামলা দেওয়া হয়েছিল তার সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি না হওয়া অবধি উভয় দেশ থেকে ক্লিয়ারেন্স আসাটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশের আদালত নয়, যুক্তরাজ্যের আইনি ব্যবস্থাকেও সন্তুষ্ট করতে হয় যে সব আইনি বাধা দূর হয়েছে। উভয় দেশের আইন ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং সব কাগজপত্র যাচাই করতে মাসের পর মাস সময় লাগতে পারে।

সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে যে বিষয় অধিক গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে নিজ দেশে তার নিরাপত্তা। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে ঢাকায় লাখো মানুষের যে জমায়েত হবে তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। এক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, সেইসঙ্গে সম্ভাব্য যে কোনো সংঘর্ষ রুখে দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে তাদেরকে। এক্ষেত্রে এক্সাইল থেকে ফেরা ব্যক্তি, অর্থাৎ তারেক রহমানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুধু বিমানবন্দর থেকে বাসভবন পর্যন্ত নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি একটি ব্যবস্থা হতে হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আমরা দেখেছি কীভাবে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা হঠাৎ করে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এ বাস্তবতা মাথায় রেখে একটি সুসংগঠিত এবং বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তথা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এই চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করেই একটি শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে বিরাজমান অস্থিতিশীলতা নিরসন না করে এমন শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন অনেকটা অসম্ভব বলা যায়। এমন স্থবির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মাঝে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কোন সুযোগ খুঁজতে থাকবে।

তারেক রহমানের মতো ব্যক্তি, যিনি দেশের একটি বৃহত্তম দলের প্রধান, তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের উপরে নির্ভর করছে দলীয় ও নেতৃত্ব কাঠামোর পাশাপাশি ইন্টারনাল পাওয়ার ব্যালেন্স। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় দলের ভেতরে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে, নতুন ক্ষমতা কাঠামো তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে ফিরে এসে নেতৃত্ব গ্রহণ করা অনেকটা জটিল হতে পারে। দলের ভেতরের বিভিন্ন গ্রুপ এবং তাদের স্বার্থের সমন্বয় সাধন করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে প্রায় দুই দশক কোনো মানুষ এক্সাইলে থাকলে সেই অবস্থানকে ঘিরে গড়ে ওঠে তার সবকিছু। যে শিশুটা সেসময় জন্মগ্রহণ করেছে, আজ সে যুবক বা যুবতী। অনেক কিছুই তো বদলে গিয়েছে এই সময়ের মাঝে, কিছুটা অপরিচিতও মনে হতে পারে। আমরা আইনি এবং রাজনৈতিক বাস্তবতার মাঝে সাধারণত একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনকে অনেকটা ভুলে, নয়তো কিছুটা এড়িয়ে যাই। এক্ষেত্রে শুধু ব্যক্তি নয়, তার সঙ্গে ফিরতে হবে পরিবার এবং তার সদস্যদের মাঝে গড়ে ওঠা উন্নত বিশ্বের সংস্কৃতি, শিক্ষা, সামাজিকতা সবকিছুই।

এশিয়ার ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এক্ষেত্রে সুবিবেচক হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে হবে। যে কোনো বিষয়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতে পারে এবং আমাদের সার্বিক দিক থেকেই একে বিবেচনা করা উচিৎ। বর্তমান এই পরিস্থিতিকে এক লাইনের কোনো কৌতুকে সীমাবদ্ধ না রেখে, বরং রাজনৈতিক বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেওয়া উচিৎ। এখানে ব্যক্তিকে তার সাহসের গুণে বিচার না করে আমাদের উচিৎ রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলো বিবেচনা করা। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য সরকারের আইনি, কূটনৈতিক, প্রশাসনিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিদ্যমান কাঠামো বিশ্লেষণ করলে আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর সহজে পাওয়া সম্ভব।

কেকে/এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  নিরাপত্তার চাদর   অনিশ্চিত প্রত্যাবর্তন  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

হামজা-শমিতদের ম্যাচ থেকে ৪ কোটির বেশি আয় বাফুফের
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে যোগ দিলেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৩
দশমিনায় মৎস্য মেরিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

সর্বাধিক পঠিত

বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বান্দরবানে প্রার্থনা সভা
সাভারে টিভি সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরসি'র আত্মপ্রকাশ
ফটিকছড়িতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
বিএনপি নেতার পুকুরে বিষপ্রয়োগ

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close