১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক সারা দেশে সীমাহীন বিশৃঙ্খলা নিরসনে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ চেতনার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক রাজনৈতিক দল, বিএনপির নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে আজ আমি আলোকপাত করব। সেই থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান তার জীবদ্দশায় সফলভাবে তৃণমূল মানুষকে রাজনীতির সঙ্গে এবং দেশের শাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছিলেন। যার মহৎ লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্রকে একটি বিশুদ্ধ রূপে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনকল্যাণ, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
প্রসঙ্গত, গত ১৬-১৭ বছর ধরে দেশটি একটি দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী শাসনে ছিল, যা আমাদের গণতন্ত্র, সামাজিক মূল্যবোধ এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে নাগরিকদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে গণমানুষের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে আমাদের দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি, যা হয়েছিল তা একটি দলেরই প্রহসন। সেই সময়ে বিএনপি নেতৃত্বকে ভাঙার অসংখ্য চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দৃঢ় সংকল্প, দৃঢ় দায়িত্বশীলতা এবং তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে দৃঢ় বিশ্বাস আর আস্থার সম্পর্কই দলকে বাঁচিয়েছিল।
যা হোক, অনেক ত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আমরা একটি পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশ অর্জন করেছি, যেখানে গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধি আরও স্থিতিশীল রূপ নিচ্ছে এবং দেশবাসী সরকারি কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ততার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠছে।
এই পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশে, আমাদের আরও অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে যা অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত শক্তির কাছ থেকে আসতে পারে। তাদের মোকাবিলা করার জন্য, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মতো বিএনপিরও নিজস্ব কৌশলগত এবং ভবিষ্যৎ ভিশন বা দূরদৃষ্টি থাকা উচিত, যাতে তারা তাদের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাকে সামনে রেখে, লক্ষ্য অর্জন করতে পারে এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতি শক্তিশালী করতে পারে। ৩১ দফার ফ্রেমওয়ার্কটি তাই একটি বিশেষায়িত বন্দোবস্ত বলেই মনে করি যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার, দেশের উন্নয়ন এবং নিত্যদিনের চাহিদার কথা বলা আছে, যা আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যবহারকে স্বীকৃতি দেয়।
তাই আমি মনে করি, আধুনিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ব্যবহার করে দলের নেতাদের একটি শক্তিশালী নেতৃত্বের কাঠামো তৈরি করতে হবে বা এটা খুবই প্রয়োজন, যা নেতৃত্বের জন্য ভালো কাজ পরিচালনা এবং লক্ষ্যের দিকে ক্রমাগত উন্নতির পথে দলকে নেতৃত্ব দেবে। উদাহরণস্বরূপ, এই নতুন বাংলাদেশে, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সর্বস্তরে গণতন্ত্রায়নের মাধ্যমে দেশে ক্রমাগত উন্নতির জন্য আমাদের দলীয় নেতৃত্বকে নতুন কৌশলগত বিন্যাস তৈরি ও বাস্তবায়নে শক্তিশালী নেতৃত্বের অবকাঠামো এ রকম হওয়া উচিত যেখানে, আমাদেরকে সার্বজনীন এবং সর্বক্ষেত্রে গণমানুষের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াতে এবং এসব বিষয়ে উচ্চাকাক্সক্ষী হতে সাহায্য করবে।
এখানে আমি বলতে চাই যে, দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় যেমন বেকারত্ব দূরীকরণের মতো সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি এবং মানুষের জীবন ও সমাজে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন নেতৃত্বের ভূমিকাকে স্পষ্ট ভিশন ও প্রাসঙ্গিক উদ্দেশ্য সামনে রেখে কাজ করতে হবে। আমাদের সমাজে বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং জনগণ, নেতা ও স্টেকহোল্ডারদের ইতিবাচক ফলাফলের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের দলীয় নেতৃত্বকে সহানুভূতির সঙ্গে মানুষকে বা সমাজকে প্রকৃত সেবার জন্য সাড়া দেওয়া খুবই প্রয়োজন।
অতএব, আমি মনে করি বর্তনাম প্রেক্ষাপটে সনাতন পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয়, জেলা এবং উপজেলা কমিটির বর্তমান নেতৃত্বের অবকাঠামো অনেক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধতা দেখায়। যেমন যদি আমাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনের দরকার হয়, তখন আমাদের কোনো সংশ্লিষ্ট সাপোর্ট সার্ভিস থাকে না, যার কারণে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিকে সমস্যা সমাধানের জন্য অনুরোধ করে থাকি। এখান থেকে যেটা আমি বলতে চাচ্ছি সেটা হলো, আমাদের একটি স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী নেতৃত্বের অবকাঠামো থাকতে হবে যার প্রচুর স্ব-ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকতে পারে, যা দলকে আরও গতিশীল করতে বাধ্য।
দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যগুলো অবশ্যই দেশের সমৃদ্ধি, স্থায়িত্ব এবং জনগণের কল্যাণ ও সুশাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। যা জনগণের ক্রমাগত সমর্থন বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। রাজনৈতিক দলগুলোর আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য গতিশীল দলীয় নেতৃত্বে সবসময় একাধিক নির্দিষ্ট এজেন্ডা থাকতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, রাজনৈতিক দলের নেতাদের উচিত উন্নয়নের বিষয়ে জনসচেতনতা ও গণমানুষের বিশ্বাস তৈরির মাধ্যমে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করা এবং তা করার জন্য নতুন শিক্ষা এবং সর্বশেষ জ্ঞান অর্জন করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। নেতৃত্ব অবকাঠামোতে সর্বশেষ জ্ঞানের ব্যবহার নতুনত্ব এনে দেবে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা জনগণকে আরও বেশি মাত্রায় অংশগ্রহণের জায়গাটাতে নিয়ে আসতে পারে। এর ফলে সর্বত্র জনগণের অংশগ্রহণ ও সমর্থন বৃদ্ধি পাবে, যার মাধ্যমে নেতৃত্ব জনসাধারণকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে মানুষকে দলে যোগদানে উৎসাহিত করবে। ফলে দলকে যা সমাজে জনপ্রিয়তা এবং ভাবমূর্তি অর্জনে সহায়তা করবে।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, বর্তমানে ৩১ দফার যে কর্মপ্রণালি তা কখনই সনাতন নেতৃত্বের কাঠামো দিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, যা একটি প্রশ্নের উত্তর থেকে বোঝা যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান বিএনপির সনাতন নেতৃত্বের অবকাঠামো কী সর্বত্র অংশগ্রহণের স্ব-পরিচালনা এবং উন্নতির জন্য সুযোগ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং নির্দেশিকা দেয়? লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান এখন ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে বিকশিত হয়েছে, তাই নেতারা জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং এসব বিষয়ে সরাসরি অবদান রাখতে আইসিটি সম্পর্কিত জ্ঞান প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু আমাদের সনাতন দলীয় নেতৃত্ব কোনো অন্তর্নির্মিত শিক্ষণ এবং পরামর্শমূলক সহায়ক অবকাঠামো সমর্থন করে না।
উপরে উল্লেখিত এই যুগের চাহিদার কথাগুলো মাথায় রেখে আসুন দেখা যাক বিএনপি আগামীর বাংলাদেশে নতুন নেতৃত্বের কাঠামোতে কি পরিবর্তন আনতে পারে। বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির একটি বর্ধিত রূপ হিসেবে আমরা একটি তিন স্তরের নেতৃত্বের অবকাঠামোর একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা আলোচনার জন্য উপস্থাপন করছি। এই নেতৃত্বের অবকাঠামোটি হবে ৩ স্তর বিশিষ্ট। যেখানে স্তর ০-থিঙ্ক ট্যাঙ্কার (এক্সপার্টিস এবং ডোমেইন নলেজ সাপোর্ট এর জন্য); স্তর ১- স্থায়ী কমিটি (গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাপোর্ট এর জন্য) এবং স্তর ২- কার্যকরী কমিটি (দলের চালিকাশক্তি এবং কার্যপরিচালনাকরণ), যা বিএনপির সকল মূলধারার কমিটির নেতৃত্বের ক্ষেত্রে লোকবল, প্রয়োজনীয় বুদ্ধি এবং দক্ষতার সমন্বয় ঘটাতে পারে। এই অবকাঠামোটি জেলাভিত্তিক স্থায়ী কমিটির একটি ফ্রেমওয়ার্ক থেকে শুরু করা যেতে পারে। এটি হবে জেলাভিত্তিক রাজনৈতিক ওয়ার্কিং কমিটির একটি নির্বাহী অংশবিশেষ। আমরা ধরে নিচ্ছি, জেলাভিত্তিক দলীয় শাখার একটি মূল বা ‘কোর’ বডি এবং তাদের কাজের সহায়তার জন্য একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্যানেল থাকতে পারে।
জেলা বিএনপির মূল কমিটি বিভিন্ন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং ডোমেইন এক্সপার্ট প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি ‘থিংক ট্যাংকের’ সঙ্গে যুক্ত থাকবে। তাদের সর্বশেষ জ্ঞান সহায়তা এবং দক্ষতা দলীয় কর্মপ্রণালিতে সংযুক্ত থাকবে। মূল নেতারা নেতৃত্বে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দর্শন অনুসরণ করবেন। এই তিন স্তর বিশিষ্ট নেতৃত্বের অবকাঠামোটি মূলত পলিচালিত হবে ‘কোর’ বডি বা স্থায়ী কমিটি মাধ্যমে, যাতে দলের অভ্যন্তরে স্থিতিশীলতা, স্বচ্ছতা এবং নিয়মিত সহায়তা ও সমন্বয় নিশ্চিত থাকে। পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপযুক্ত সম্পদ এবং কমান্ড চেইন বা নির্দেশনার কাঠামো বজায় রাখবে। নেতৃত্ব পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু ভূমিকা ও দায়িত্ব এখানে একই থাকবে। এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অগ্রাধিকারগুলো নির্ধারণ করবেন। ভবিষ্যতের জন্য কিছু অংশে রূপান্তরমূলক ও গতিশীল পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। নেতা বা নেতৃত্ব পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু লক্ষ্য অর্জনের জন্য দায়িত্ব ও জবাবদিহিতাসহ পদের বিবরণ অপরিবর্তিত থাকবে, কারণ এগুলো দলের ইশতেহার এবং সমাজের মানুষের জন্য দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন এজেন্ডার অংশ।
একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের ভিত্তি হলো স্বচ্ছ জবাবদিহিতা এবং সুনির্দিষ্ট দায়িত্ববোধ। সংগঠনের প্রতিটি স্তরে, তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত, নেতা-কর্মীদের কাজের পরিধি ও দায়বদ্ধতা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত থাকা প্রয়োজন। আমি দলের বিভিন্ন পোর্টফোলিও এবং তাদের কর্ম ভূমিকা এবং জবাবদিহিতা নিয়ে আরেকটি নিবন্ধ লিখব। যাই হোক, এই কাঠামো নিশ্চিত করবে যে, প্রত্যেকে তার কাজের জন্য দলের গঠনতন্ত্র ও ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। তবে কেবল দায়িত্ব বণ্টনই যথেষ্ট নয়; এর সঠিক বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা। এই প্রশিক্ষণ শুধু রাজনৈতিক জ্ঞান বা বক্তৃতার কৌশলে সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং সামাজিক সংকট মোকাবিলা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জন এবং জনসেবামূলক কাজে কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তোলাই হবে এর লক্ষ্য। এর ফলে, যে কোনো জাতীয় প্রয়োজনে বা মানবিক বিপর্যয়ে দলের কর্মীরা এবং নেতৃত্ব দ্রুততম সময়ে এবং সুশৃঙ্খলভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে। এ ধরনের প্রস্তুতি দলকে কেবল সাংগঠনিকভাবেই শক্তিশালী করবে না, বরং সাধারণ মানুষের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
দলের কার্যক্রমকে গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে একটি সুসংজ্ঞায়িত সাংগঠনিক কাঠামো বা নির্দেশনার স্তরবিন্যাস অত্যন্ত জরুরি। এখানে দলীয় কাজ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত একটি সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা। বর্তমান যুগে সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি তথ্য-উপাত্ত বা ডেটানির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সঠিক কৌশল নির্ধারণে আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে নেতৃত্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তা নিতে পারে। এআই ব্যবহার করে জনমত জরিপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কনটেন্ট বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন এলাকায় দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা বা শক্তিশালী জায়গাগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব। এই ‘ডেটা-ড্রিভেন’ বা উপাত্ত-ভিত্তিক পদ্ধতি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বাস্তবসম্মত ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। এর ফলে প্রতিটি ইউনিট বা শাখা তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা দিয়ে কাজ করতে পারবে এবং দলের লক্ষ্য যেমন ৩১ দফার বাস্তবায়ন অর্জনে সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বা প্রকল্প বাস্তবায়নের পর তার সম্পূর্ণ মূল্যায়ন বা পর্যালোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গৃহীত কর্মসূচির ফলে সমাজে কী ধরনের প্রভাব পড়ল, সাধারণ মানুষ তা কীভাবে গ্রহণ করল এবং দলের লক্ষ্য কতটুকু অর্জিত হলো, তা বিশ্লেষণ করা সাংগঠনিক সংস্কৃতির অংশ হওয়া উচিত। এই পর্যালোচনার মাধ্যমে কাজের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হয় এবং ভবিষ্যতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়। একে কেবল ভুল ধরা হিসেবে না দেখে, বরং সংশোধনের ও উন্নতির সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এই অবকাঠামোটির মাধ্যমে ধাপে ধাপে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, কাজের প্রভাব বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজনীয় কৌশল পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়াই বিএনপিকে একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও টেকসই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে পারে। এমন একটি কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হলে, দলটি যে কোনো রাজনৈতিক বা জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যন্ত কার্যকর ও দক্ষতার সঙ্গে গণমানুষ ও দেশের জন্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
পরিশেষে, আমি এই নিবন্ধটি লিখেছি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন সিনিয়র একাডেমিক লিডার হিসেবে গত দুই দশকে আমার অর্জিত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য যথাযথ কমান্ড চেইন বজায় রাখার জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সংগঠনগুলিতে নেতৃত্বের অবকাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাই হোক, আমি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যকর পরিচালনা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছি এবং দেশে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক খাতের উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন অবকাঠামোগত কৌশল প্রণয়নে কাজ করেছি।
বিগত চার দশক ধরে বিএনপি নেতৃত্বের ধারা পর্যবেক্ষণে আমি দেখেছি যে, সময়ের প্রয়োজনে চাহিদা পাল্টালেও নেতৃত্বের অবকাঠামো মূলত একই রয়ে গেছে। জনসাধারণের কল্যাণ এবং সামাজিক কাজের জন্য বিএনপির নের্তৃত্বকে আরও জনমুখী করার জন্য, আমি তিন স্তরের বিএনপি নেতৃত্বের অবকাঠামো প্রস্তাব করেছি। এই নেতৃত্বের অবকাঠামো শাসন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে সাহায্য করবে। এটি যুব সমাজকে দেশের সেবা ও মাতৃভূমির জন্য কাজ করতে বিএনপির রাজনৈতিক মতাদর্শে যোগ দিতে উৎসাহিত করবে। এই নেতৃত্বের দর্শন এমন একটি গ্রহণযোগ্য পদক্রম তৈরি করবে যা সমাজে এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
কেকে/এমএ